দেশের দ্বিতীয় সর্ববৃহৎ মোকাম কুষ্টিয়ার বাজারে দফায় দফায় বাড়ছে সব ধরনের চালের দাম। গত এক সপ্তাহে খুচরা বাজারে প্রায় সব ধরনের চালে কেজি প্রতি চার টাকা বেড়েছে। এ নিয়ে চলতি আমন মৌসুমে তিন দফায় কুষ্টিয়ায় চালের দাম বাড়ল।
খুচরা বিক্রেতারা বলেন, মোকাম থেকে বেশি দামে চাল কেনার কারণে তাদের বেশি দামে চাল বিক্রি করতে হচ্ছে।
ব্যবসায়ী ও চালকল মালিকরা বলছেন, প্রায় প্রতিদিনই বাড়ছে ধানের দাম। সে কারণে বাড়াতে হচ্ছে চালের দাম। তাই খাজানগর চালের মোকামেই দুই থেকে আড়াই টাকা বেড়েছে চালের দাম। তারা ধানের দাম বাড়ার উপরেও নজরদারির দাবি তুলেছেন।
বাজারের খুচরা চাল ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, নানা অজুহাতে গত বছরের সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসে চিকন চালসহ অন্যান্য চালের দাম কেজিতে বেড়েছিল তিন টাকা পর্যন্ত। মাত্র দুই মাসের ব্যবধানে কয়েক দিন ধরে খুচরা বাজারে আবারো সব ধরনের চাল কেজিতে চার টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।
চলতি আমন মৌসুম শেষে এ নিয়ে তিন দফায় কুষ্টিয়ার বাজারে চালের দাম বাড়ল। কুষ্টিয়া পৌর বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ৬২ টাকার মিনিকেট চাল এখন বিক্রি হচ্ছে ৬৬ টাকায়। কয়েকদিন আগেও ৫৬ টাকায় বিক্রি হওয়া কাজললতা চাল এখন ৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়াও মোটাচাল ২৮ কেজিতে চার টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৫৩ টাকা কেজি।
পৌর বাজারের কয়েকজন চাল বিক্রেতা জানান, বেশি দামে মোকাম থেকে চাল কিনতে হচ্ছে। তাই খুচরা বাজারে চালের দাম বেড়েছে। কয়েকদিন আগে কাজললতা চাল ৫৬ টাকায় বিক্রি করেছি, সেটা এখন ৬০ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে। মোকাম থেকে বস্তা প্রতি বেশি দামে চাল কিনতে হচ্ছে। সেই সাথে বহন খরচ যোগ করে কেজি প্রতি চালের দাম চার টাকা বেশিতে বিক্রি করতে হচ্ছে।
বাজার সূত্রে জানা গেছে, ধানের দাম বাড়ার অজুহাতে অক্টোবর মাসের শেষের দিকে চিকন চালসহ অন্যান্য চালের দাম কেজিতে দুই থেকে তিন টাকা পর্যন্ত বেড়েছিল। তার এক মাস আগেও সব ধরনের চাল কেজিতে এক থেকে দুই টাকা বেড়েছিল। অন্যসব নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির মধ্যে চালের বর্ধিত দাম নাভিশ্বাস তুলেছে ভোক্তাদের।
তাদের দাবি, এর আগেও প্রশাসন যখন তৎপর হয়েছে, তখনই চালের দাম কমেছে কিংবা বৃদ্ধি বন্ধ হয়েছে।
চাল কিনতে আসা কয়েকজন ক্রেতা জানান, ব্যবসায়ী ও মিল মালিকরা বরাবরের মতো আবার সিন্ডিকেট করে চাল মজুত রেখে দাম বাড়াচ্ছে। এতে তাদের বিপাকে পড়তে হচ্ছে।
ক্রেতারা আরো বলেন, প্রশাসন চাইলে দাম বাড়ানোর প্রচেষ্টা রুখে দেয়া সম্ভব।
চালের দাম বাড়ার কারণ জানতে চাইলে বাংলাদেশ অটো মেজর অ্যান্ড হাসকিং মিল মালিক সমিতি কুষ্টিয়া জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক জয়নাল আবেদীন প্রধান বলেন, ‘ডিসেম্বর মাস থেকে ধানের দাম প্রতিনিয়তই বাড়ছে। প্রত্যেকটা ধানের দাম প্রতি মণে ১৮০ থেকে ২০০ টাকা বেড়েছে। মণ প্রতি মিনিকেট যে ধান কিনেছিলাম এক হাজার ৪২০ টাকা, সেই ধান কিনতে হচ্ছে এক হাজার ৬৮০ টাকায়। সরকার যখন আমন মৌসুমে চাল সংগ্রহের ঘোষণা দিয়েছে তখন নতুন যে ধান উঠেছিল তা ৯৮০ থেকে এক হাজার টাকা মণ কেনা হয়। সেই ধান এখন এক হাজার ৮০ টাকা।
তিনি বলেন, ‘চলতি মৌসুমে চার প্রকার ধান উঠেছে। মোটা হাইব্রিড, স্বর্ণা, ধানি গোল্ড ও বিনা-৭। নভেম্বরের শেষের দিকে এই ধান উঠলেও ডিসেম্বর মাসে এসে ধানের দাম বেড়ে গেছে।
জয়নাল আবেদীন বলেন, ধানের দামের বৃদ্ধির কারণে মোকাম থেকেই চালের দাম কেজিতে দুই থেকে আড়াই টাকা বেড়েছে। তিনি ধানের বাজার যে ১৮০ থেকে ২০০ টাকা বাড়ল সেদিকেও নজর দেয়ার দাবি জানান।
অন্যদিকে বাজার নিয়ন্ত্রণকারীরা বলছেন, অতিরিক্ত মুনাফা করে কেউ দাম বাড়াচ্ছে কি না তা খতিয়ে দেখছেন তারা।
কুষ্টিয়া পৌর মার্কেটের তদারকিতে থাকা সিনিয়র কৃষি বিপণন কর্মকর্তা সুজাত হোসেন খান বাজারে চালের দাম বৃদ্ধির বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, ‘আমরা মিলগুলোর ধান ক্রয় ও মাড়াইয়ের খচরের সাথে বিক্রয় মূল্যের তুলনা করে দেখছি। কেউ অতিরিক্ত মুনাফা করলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
সূত্র : ইউএনবি