রমজান ঘিরে ব্রাজিল থেকে আমদানি করা হয়েছিল চিনি চট্টগ্রামের কর্ণফুলীতে দেশের বৃহত্তম শিল্পগোষ্ঠী এস আলম গ্রুপের চিনি কারখানায় লাগা আগুনে এক লাখ মেট্রিক টন চিনি পুড়ে গেছে। এই বিপুল পরিমাণ চিনি আসন্ন রমজান ঘিরে আমদানি করা হয়েছিল।
সোমবার (৪ মার্চ) সন্ধ্যায় শিল্প গ্রুপটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, আসন্ন রমজান ঘিরে মজুত করা এক লাখ মেট্রিক টন অপরিশোধিত চিনির পুরোটাই আগুনে পুড়ে গেছে।
এস আলম গ্রুপের নির্বাহী পরিচালক সুব্রত কুমার ভৌমিক বলেছেন, রমজানের জন্য এক লাখ মেট্রিক টন অপরিশোধিত চিনি মজুত করা হয়েছিল। এই চিনি ব্রাজিল থেকে আমদানি করা হয়েছিল। আগুনের পরিস্থিতি দেখে বোঝা যাচ্ছে চিনি আর অবশিষ্ট নেই। ফলে রমজানে আমাদের পক্ষে বাজারে চিনি দেওয়া সম্ভব হবে না।
তিনি বলেন, মিল চালু থাকা অবস্থায় আগুন চারদিকে ছড়িয়ে যায়। ভেতরে কেউ আটকা পড়েছে কি না বা কোথা থেকে আগুনের সূত্রপাত এর কিছুই আমরা জানতে পারিনি। তিন ঘণ্টায়ও আগুন নিয়ন্ত্রণে আসেনি। আগুন যেন মূল কারখানায় ছড়িয়ে না পড়ে ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা সে চেষ্টাই করছেন। আমরাও তাদের সহায়তা করছি।
এর আগে বিকেল পৌনে ৪টার দিকে কর্ণফুলী থানাধীন এলাকায় এস আলম রিফাইন্ড সুগার ইন্ডাস্ট্রিজ নামের ওই চিনি কারখানায় আগুন লাগে। আগুন লাগার খবরে বিকেলে ৩টা ৫৩ মিনিটে স্থানীয় পাঁচটি ফায়ার স্টেশনের ৯টি ইউনিট ঘটনাস্থলে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করে।
ফায়ার সার্ভিসের আগ্রাবাদ কন্ট্রোল রুম সূত্র জানায়, আগুন নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিসের ৯টি ইউনিট শুরু থেকে কাজ করছে। পরে তাদের সঙ্গে কোস্টগার্ড ও বিমানবাহিনীর একাধিক ইউনিট যোগ দেয়।
এদিকে আগুন লাগার সাড়ে তিন ঘণ্টা পরও তা নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়নি। ফায়ার সার্ভিসের পাশাপাশি আগুন নির্বাপণে কাজ করছে কোস্টগার্ড ও বিমানবাহিনীর একাধিক ইউনিট।
এস আলম গ্রুপের মানবসম্পদ বিভাগের ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ ফয়সাল জাগো নিউজকে জানান, এস আলমের এ কারখানায় আমদানি করা কাঁচা চিনি পরিশোধন করা হয়। কারখানায় চার লাখ মেট্রিক টন ক্যাপাসিটি আছে। বিকেল ৪টার দিকে ইউনিট-ওয়ানের গুদামে আগুনের সূত্রপাত। সেখানে এক লাখ মেট্রিক টন অপরিশোধিত চিনি ছিল।
ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের সহকারী পরিচালক আবদুল মালেক জাগো নিউজকে বলেন, এস আলম রিফাইন্ড সুগার মিলের আগুন যেন ছড়িয়ে না পড়ে আমরা সেই চেষ্টা করছি। আগুন নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিসের ১৮টি ইউনিট কাজ করছে। চিনির মিলের ছয়টি গোডাউনের মধ্যে আগুন এখনো একটিতে সীমাবদ্ধ আছে। আগুন নির্বাপণ কাজে ফায়ার সার্ভিসের সঙ্গে যোগ দিয়েছে কোস্টগার্ড ও বিমানবাহিনীর একাধিক ইউনিট। এখন পর্যন্ত কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।
এস আলম সুগার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের মিলে ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা ও থাইল্যান্ড থেকে চিনির কাঁচামাল এনে দুটি প্ল্যান্টে পরিশোধন করা হয়। তার মধ্যে প্ল্যান্ট-১ এর দৈনিক উৎপাদন ক্ষমতা ৯০০ টন আর প্ল্যান্ট-২ এর দৈনিক উৎপাদন ক্ষমতা ১ হাজার ৬০০ টন। থাইল্যান্ড ও ফ্রান্সের প্রযুক্তি এবং কারিগরি সহায়তায় এ কারখানাটি পরিচালিত হয়।
এর আগে গত শুক্রবার নগরীর বাকলিয়া এক্সেস রোডে এস আলম গ্রুপের একটি হিমাগারে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।
গত ২৯ ফেব্রুয়ারি রাতে রাজধানীর বেইলি রোডে গ্রিন কোজি কটেজ নামের একটি ভবনে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ৪৬ জনের প্রাণহানি হয়। অগ্নিদগ্ধ অনেকে এখনো হাসপাতালে চিকিৎসাধীন, যাদের অনেকের অবস্থা আশঙ্কাজনক।