• সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৭:২৫ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম:

রোহিঙ্গাদের খেয়ে ফেলতো খাদ্য উৎপাদন না বাড়লে, কুকুরের সাথে করতো কাড়াকাড়ি: ব্রি’র ডিজি

নিউজ ডেস্ক
আপডেটঃ : মঙ্গলবার, ২৮ মে, ২০২৪
গোল্ডেন রাইসের পক্ষের অনুষ্ঠানে আলোচকরা -  ছবি : সংগৃহীত

নতুন নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবনের মাধ্যমে বিজ্ঞানীরা খাদ্যের উৎপাদন না বাড়ালে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের ধরে বাঙালিরা খেয়ে ফেলতো বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের (ব্রি) মহাপরিচালক (ডিজি) ড. মো: শাহজাহান কবীর।

খাদ্যের উৎপাদন না বাড়লে মানুষ খাবার নিয়ে কুকুরের সাথে কাড়াকাড়ি করতো বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

মঙ্গলবার (২৮ মে) রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ‘জিএমও নিয়ে প্রচলিত ভুল ধারণা ও বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় তিনি এমন মন্তব্য করেন। এগ্রিকালচার বায়োটেকনোলোজি কোয়ালিশন (এবিসি), গ্লোবাল সাউথ হাব, ফার্মিং ফিউচার বাংলাদেশ ও এলায়েন্স ফর সাইন্স যৌথভাবে ওই আলোচনা সভার আয়োজন করে।

ইরি ও ব্রি’র যৌথ গবেষণায় উদ্ভাবিত গোল্ডেন রাইস ধানের জাত ছাড়করণ নিয়ে পরিবেশবিদসহ নাগরিক সংগঠনের বিরোধিতা করে চিঠি দেয়ার এক দিন পরেই এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন সংশ্লিষ্টরা।

ব্রি’র ডিজি বলেন, ‘বিজ্ঞানীরা কাজ করছি সাধারণ মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য। আজকের বাংলাদেশে ১৭ কোটি মানুষ, আজকে দেশে খাবারের অভাব নেই। যদি এই অর্জনটা না হতো কোটি কোটি মানুষ রাস্তায় না খেয়ে মারা যেতো, কুকুরের সাথে মানুষ খাবার নিয়ে কাড়াকাড়ি করতো। ১২ লাখ রোহিঙ্গাকে আমরা জায়গা দিচ্ছি, আমরা খাওয়াচ্ছি, টাকা হয়তো বাইরে থেকে আসছে, আমরা নিজেরা প্রডিউস করছি, সেখান থেকে তাদের খাবার দিচ্ছি। মানুষ রোহিঙ্গাদের তো খেয়ে ফেলতো। তোরা আসছিস, তোদেরকে আমরা আগে খেয়ে ফেলবো।’

তিনি আরো বলেন, ‘ব্রি বা এর বিজ্ঞানীরা গবেষণাসিদ্ধ তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে কথা বলে, অনুমান বা আবেগের ভিত্তিতে নয়। ব্রি’র বিজ্ঞানীরা বহু বছর ধরে এই চাল নিয়ে নানাবিধ পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়ে নিশ্চিত হয়েছেন যে এটি মানব শরীর, পশুপাখি ও পরিবেশের জন্য সম্পূর্ণ নিরাপদ। ব্রি ধান২৯ যতটুকু নিরাপদ, গোল্ডেন রাইসও ততটুকুই নিরাপদ। যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফডিএ) এই চাল পরীক্ষা করে বলেছে এটি সম্পূর্ণ নিরাপদ। একই কথা বলেছে হেলথ কানাডা এবং অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডের ফুড স্ট্যান্ডার্ডসের মতো প্রতিষ্ঠানও। বিশ্বের কোনো গবেষণা বা কোনো জার্নালে জিএম ফসলের পরিবেশ, স্বাস্থ্য এবং অন্যান্য ঝুঁকির বিষয়টি প্রমাণিত হয়নি।’

ফিলিপাইনে বিচারবিভাগ কর্তৃক গোল্ডেন রাইস এবং বিটি বেগুনের বাণিজ্যিক চাষের বিরুদ্ধে গৃহীত নিষেধাজ্ঞা এবং বাংলাদেশের জিএমও বিরোধী প্রতিষ্ঠানসমূহের তৎপরতার পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. আব্দুল কাদের বলেন, ‘এটি ভীষণ অনাকাঙ্ক্ষিত একটি ঘটনা যে কিছুসংখ্যক মানুষ জিএমও বিষয়ে ভ্রান্ত ধারণার বশবর্তী হয়ে মন্তব্য করছেন এবং বিজ্ঞানের অগ্রগতির পথে বাধা সৃষ্টি করে যাচ্ছেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, প্রতি পাঁচজন প্রাক-স্কুলগামী শিশুর মধ্যে একজন শিশু ভিটামিন-এ’র ঘাটতিতে ভুগছে। যাদের সিংহভাগই অসচ্ছল পরিবারে জন্মেছে এবং এই ঊর্ধ্বমূল্যের বাজারে প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় ভিটামিন এ সম্পন্ন বিভিন্ন প্রকার শাক-সবজি কেনার ক্রয়ক্ষমতা তাদের পরিবারে নেই। সেক্ষেত্রে রোজকার খাদ্যতালিকায় গোল্ডেন রাইসের উপস্থিত ভিটামিন-এ’র এই ঘাটতি পূরণে সক্ষম হবে। কাজেই আমি সকলকে প্রকৃত সত্য জানতে উৎসাহিত করছি।’

বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের গবেষণা পরিচালক ড. মো: আব্দুল্লাহ ইউসুফ আখন্দ বাংলাদেশের কৃষিখাতে বিটি বেগুনের প্রয়োজনীয়তা যে প্রমাণসাপেক্ষ তার ওপর বিশেষভাবে আলোকপাত করেন। তিনি বলেন, ‘কীটনাশকের খরচ কমানোর মাধ্যমে বিটি বেগুন দেশের অসংখ্য কৃষকের জীবন বদলে দিয়েছে। এটি প্রায় একান্ন শতাংশ কীটনাশকের ব্যবহার কমিয়েছে এবং তাদের জীবনমান উন্নত করেছে। এই কারণেই, বর্তমানে প্রায় ৬০ হাজার কৃষক এই বেগুন চাষ করছে।’

তিনি আরো বলেন, ‘যখন বিটি বেগুনের চারটি জাত বাণিজ্যিকভাবে চাষের জন্য অবমুক্ত করা হয় তখন এটিকে বিভিন্ন ধাপে কঠোর পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে এবং জাতীয় বায়োসেফটি কাঠামোর বিভিন্ন নীতিমালা অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে এর নিরাপত্তা যাচাই করা হয়। কাজেই বিটি বেগুনের নিরাপত্তা নিয়ে যেকোনো প্রশ্নই এক্ষেত্রে অবাঞ্চিত বলে বিবেচ্য হবে।’

অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, দেশে জেনেটিক্যালি মডিফায়েড অর্গানিজম (জিএমও) প্রযুক্তিতে উদ্ভাবিত ফসল নিয়ে অপপ্রচার চলছে। গোল্ডেন রাইস ও বিটি বেগুন নিয়ে একটি শ্রেণি উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এই প্রচার চালিয়ে আসছে।

এগ্রিকালচার বায়োটেকনোলজি কোয়ালিশনের আহ্বায়ক ও সাবেক কৃষি সচিব আনোয়ার ফারুকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের সাবেক মহাপরিচালক হামিদুর রহমান, ফার্মিং ফিউচার বাংলাদেশ’র সিইও আরিফ হোসাইন, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. অপর্ণা ইসলাম প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ