সংস্কারের অভাবে জামালপুর জেলার সাতটি উপজেলায় ১৬৮টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবন জরাজীর্ণ হইয়া পড়িয়াছে। এই ভবনগুলির ছাদ ও দেওয়াল হইতে খসিয়া পড়িতেছে পলেস্তারা। বাহির হইয়া আসিয়াছে মরিচা ধরা রড। তাহাছাড়া ভূমিকম্পের কারণে কোনো কোনো বিদ্যালয় ভবনের ছাদে দেখা দিয়াছে অসংখ্য বড় বড় ফাটল। ফলে সামান্য বৃষ্টিতেই ভবনগুলির ছাদ চুয়াইয়া পানি পড়ে। তখন শিক্ষার্থীদের দুরবস্থার শেষ থাকে না। উদ্বেগের ব্যাপার হইল—এইভাবে প্রতিনিয়তই ঝুঁকির মাত্রা বাড়িয়া চলিয়াছে। কিন্তু বারবার তাগাদা দেওয়া সত্ত্বেও ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলির সংস্কার বা নূতন ভবন নির্মাণের কোনো উদ্যোগ পরিলক্ষিত হইতেছে না। কবে নাগাদ নির্মাণ বা সংস্কার হইবে মিলিতেছে না সেই আশ্বাসও। এমতাবস্থায় একরকম জীবনের ঝুঁকি লইয়াই কোমলমতি শিক্ষার্থীরা তাহাদের দৈনন্দিন শিক্ষা কার্যক্রম চালাইয়া যাইতেছে। অথচ এই ব্যাপারে সরকারের সদিচ্ছার কোনো অভাব নাই।
জামালপুর একটি উদাহরণ মাত্র। প্রকৃতপক্ষে সারাদেশে এমন জরাজীর্ণ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা অনেক। সামপ্রতিক একটি পরিসংখ্যান হইতে জানা যায়, দেশে জামালপুরের মতো এমন জরাজীর্ণ আরো প্রায় ২০ হাজার প্রাথমিক বিদ্যালয় রহিয়াছে। সুতরাং সরকারের যত সদিচ্ছাই থাকুক, জরাজীর্ণ ও পরিত্যক্ত কয়েক হাজার বিদ্যালয় রাতারাতি সংস্কার কিংবা নূতন করিয়া নির্মাণ করা যে প্রায় অসম্ভব তাহা অনুমান করা কঠিন নহে। কেননা, একটি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়া ভবনগুলি মেরামত বা নূতন করিয়া নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। কিন্তু যখন এমন অভিযোগ শোনা যায় যে, কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত বা বয়সের ভারে ন্যূব্জ বিদ্যালয়গুলি মাসের পর মাস ধরিয়া জীর্ণ বা পরিত্যক্ত হইয়া আছে এবং বারংবার তাগাদা দেওয়া সত্ত্বেও কোনো প্রতিকার মিলিতেছে না, তখন উদ্বিগ্ন না হইয়া উপায় থাকে না। শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং তাহাদের শিক্ষা কার্যক্রমকে সর্বতোভাবে বাধামুক্ত রাখা যাহাদের অবশ্যপালনীয় কর্তব্য তাহারা যদি কোনো কারণে তাহাতে শৈথিল্য বা উদাসীনতা প্রদর্শন করেন, তাহা হইলে অবধারিতভাবে দায়িত্বটি বর্তায় স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের উপর। আমরা বিশ্বাস করি যে, জনপ্রতিনিধিরা তাহাদের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করিলে দীর্ঘদিন ধরিয়া কোনো বিদ্যালয় পরিত্যক্ত বা ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় থাকিতে পারে না।
সংস্কার কিংবা নূতন করিয়া বিদ্যালয় ভবন নির্মাণ—উভয়ই মূলত:সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। তবে নীতিনির্ধারক মহল ইচ্ছা করিলে এই প্রক্রিয়াটি কিছুটা দ্রুততর করিতে পারেন বৈকি। কেননা, অনুকূল পরিবেশে পাঠদানের নিমিত্তে অবকাঠামোগত সুযোগ-সুবিধা যথাযথভাবে নিশ্চিত করা না হইলে স্বভাবতই শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে ধরিয়া রাখিবার অনিশ্চয়তা বহুলাংশে বাড়িয়া যায়। এমনকি জরাজীর্ণ এইসব ভবন ধসিয়া প্রাণহানির মত দুর্ঘটনার আশঙ্কাও উড়াইয়া দেওয়া যায় না। তাই এই ব্যাপারে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের দায়িত্বশীল ভূমিকা একান্তভাবে প্রত্যাশিত। তাহাছাড়া বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষেরও বিষয়টি লইয়া সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলদের তাগাদা দিবার আবশ্যকতা রহিয়াছে। পাশাপাশি স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা আন্তরিকভাবে উদ্যোগী হইলে সরকার প্রদত্ত বিভিন্ন উন্নয়নমূলক বরাদ্দ দিয়াও সাময়িকভাবে বিদ্যালয় ভবনগুলি ঝুঁকিমুক্ত করিয়া ব্যবহার উপযোগী করা অসম্ভব কিছু নহে।