• রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:০৪ অপরাহ্ন

ভোগ্যপণ্যের অপচয় ও টেকসই উন্নয়ন

আপডেটঃ : বৃহস্পতিবার, ৯ নভেম্বর, ২০১৭

উন্নয়নের মহাসড়কে কেবল ছুটিবার ইচ্ছা থাকিলেই উন্নয়নের রোশনাই ঝলমল করিবে না। ইহার জন্য প্রয়োজন সঠিক পরিকল্পনা ও দূরদর্শিতা। জাতিসংঘ ঘোষিত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার (এসডিজি) বাস্তবায়ন সম্ভবপর হইলে তাত্পর্যপূর্ণ পরিবর্তন আসিবে এই জনপদের। আর এই এসডিজি বাস্তবায়নে ভোগ্যপণ্যের অপচয় রোধ করিবার বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলিয়া মনে করে জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি)। এই ব্যাপারে বিশেষজ্ঞরা মনে করিতেছেন—খাবার, বিদ্যুত্ ও পানির মত সম্পদের অপচয় রোধ না করিতে পারিলে অচিরেই ঢাকা পরিণত হইবে অচল শহরে। কারণ, বর্তমান ও ভবিষ্যতের কথা চিন্তা না করিয়াই ঢাকার বাসিন্দারা মাত্রাতিরিক্ত সম্পদের অপচয় করিতেছে। ইহাতে মারাত্মক ক্ষতি হইতেছে ঢাকার পরিবেশেরও।

মনে রাখিতে হইবে যে, ঢাকা এখন বিশ্বের সবচাইতে জনবহুল শহরগুলির একটি। এক কোটি ৬০ লক্ষাধিক জনসংখ্যার এই শহরের অধিকাংশ নাগরিকই খাদ্য, পানি ও বিদ্যুত্ ব্যবহারের ক্ষেত্রে সচেতন নহেন। আবার কীভাবে পরিবেশ রক্ষা করিয়া খাওয়া ও প্রয়োজনীয় জিনিসের টেকসই ব্যবহার করা যায়—এই ব্যাপারেও অধিকাংশ মানুষের স্বচ্ছ ধারণা নাই বলিলেই চলে। স্বাভাবিকভাবেই অপব্যবহার বা অপচয় হইতেছে সীমিত সম্পদের। এইদিকে, জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি বিষয়ক সংস্থার (এফএও) দেওয়া তথ্যানুযায়ী, সারা বিশ্বে উত্পাদিত খাদ্যের এক-তৃতীয়াংশই নষ্ট হয়। আমরাও একই হারে ভোগ্যপণ্যের অপচয় করিয়া থাকি। ইউরোপ এই ব্যাপারে সচেতন হইতে শুরু করিয়াছে। সমপ্রতি খাদ্যের অপচয় রোধে নূতন একটি আইন পাস করিয়াছে ইতালি। দেশটিতে প্রতি বত্সর অর্ধ কোটি টনের মত খাদ্য নষ্ট হয়। ইহার ফলে দেশটির ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও পরিবারগুলির মিলিত ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ১২ শত কোটি ইউরো। ইউরোপের অন্যান্য দেশও ভোগ্যপণ্য অপচয় রোধে বিভিন্ন ব্যবস্থা গ্রহণ করিতেছে। জানা যায়, সারা বিশ্বে মোট যে পরিমাণ খাদ্য উত্পাদিত হয় তাহার জন্য লাগে ২৫ শতাংশ বাসযোগ্য জমি। আমরা যে পরিমাণ পানি ব্যবহার করিয়া থাকি তাহার ৭০ শতাংশই লাগে খাদ্য উত্পাদন করিতে। যে পরিমাণ অরণ্য ধ্বংস হয় তাহার ৮০ শতাংশই খাদ্য উত্পাদনের কারণে। খাদ্য উত্পাদন প্রক্রিয়ায় নির্গত হয় জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য দায়ী গ্রিনহাউস গ্যাসের ৩০ শতাংশ। সুতরাং ক্রয় করিবার সামর্থ্য থাকিলেই অপচয় করিবার অধিকার জন্মায় না।

একদিকে যেমন বিশ্বব্যাপী এক-তৃতীয়াংশ খাদ্যের অপচয় ঘটিতেছে, অন্যদিকে বিশ্বের ক্ষুধার্ত মানুষের সংখ্যা ৮০ কোটি। সুতরাং অপচয়ের লাগাম টানিবার ব্যাপারে আমাদের নৈতিক দায়িত্ব কম নহে। তাহা ছাড়া, খাদ্য-পানি ও বিদ্যুতের মত সম্পদ ব্যবহারের ক্ষেত্রে ঢাকা মহানগরীর মানুষ খুবই অসচেতন বিধায় তাহা সর্বার্থেই অন্তরায় সৃষ্টি করিতেছে। অতএব, সময় আসিয়াছে স্বাস্থ্যকর ও টেকসই জীবনের জন্য আমাদের ভোগের আচরণ পরিবর্তন করিবার। জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার মত বৃহত্তর অর্জনের স্বার্থে আমাদের জীবনযাপনে ইতিবাচক পরিবর্তনের এই উদ্যোগে নেতৃত্ব দিতে পারে তরুণ প্রজন্ম। অপচয় রোধে তাহারাই সৃষ্টি করুক নূতন উদাহরণ।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ