তেহরানে একটি সড়ক বিভাজকে স্থাপিত ব্যালট বাক্সের প্রতিকৃতির পাশ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছেন নাগরিকরা। সংগৃহীত ছবি
হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় ইব্রাহিম রাইসির মৃত্যুতে আজ শুক্রবার (২৮ জুন) নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জন্য ভোট দেবেন ইরানিরা। দেশটির সর্বোচ্চ নেতার প্রতি অনুগত চার প্রার্থীর মধ্যে একজনকে বেছে নেবেন জনগণ। খবর এনডিটিভির।
যদিও নির্বাচনের ফলে ইসলামী প্রজাতন্ত্রটির নীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন আসার সম্ভাবনা নেই, তবে ফলাফলে সাড়ে তিন দশক ধরে ক্ষমতায় থাকা ইরানের ৮৫ বছর বয়সী সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির উত্তরাধিকার মনোনয়নে প্রভাব পড়তে পারে। অর্থনৈতিক দুর্দশা এবং রাজনৈতিক ও সামাজিক স্বাধীনতা নিয়ে জনসাধারণের অসন্তোষের মাঝেই নির্বাচন ব্যবস্থার বৈধতা সংকট কাটিয়ে উঠতে ‘সর্বোচ্চ’ ভোটার উপস্থিতি নিশ্চিতের আহ্বান জানিয়েছেন খামেনি। দেশটিতে গত চার বছরে ভোটার উপস্থিতি কমে গেছে, বিশেষ করে রাজনৈতিক ও সামাজিক বিধিনিষেধের চাপে থাকেন তরুণরা।
স্থানীয় সময় সকাল ৮টায় ভোট গ্রহণ শুরু হয়ে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত চলবে। তবে, সাধারণত ভোটগ্রহণের সময়সীমা মধ্যরাত পর্যন্ত বাড়ানো হয়ে থাকে। যেহেতু ব্যালটগুলো হাতে গোনা হয়, চূড়ান্ত ফলাফল দুই দিনের মধ্যে ঘোষণা করা হতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে। তবে, প্রাথমিক পরিসংখ্যান এর আগেই পাওয়া যেতে পারে।
যদি কোনো প্রার্থী ব্ল্যাঙ্ক ভোটসহ প্রদত্ত সব ব্যালটের মধ্যে ৫০ শতাংশের বেশি না পান, তবে নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার পর প্রথম শুক্রবার শীর্ষ দুই প্রার্থীর মধ্যে রান-অফ রাউন্ড অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনে অংশ নেওয়া প্রার্থীদের মধ্যে তিনজন কট্টরপন্থি এবং একজন তুলনামূলক মধ্যপন্থি সংস্কারবাদী অংশ সমর্থিত, যারা সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ইরানে অনেকটাই পিছিয়ে গেছে।
ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে সংস্কারপন্থিসহ ছয় প্রার্থী অংশ নেওয়ার কথা ছিল। তবে গতকাল বৃহস্পতিবার দুজন প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নেন। তারা হলেন বর্তমান ভাইস প্রেসিডেন্ট আমির হোসেন গাজী জাদেহ-হাশেমি ও তেহরানের রক্ষণশীল মেয়র আলিরেজা জাকানি। নির্বাচনি লড়াইয়ে রয়েছেন পার্লামেন্টের স্পিকার মোহাম্মদ বাগের গালিবাফ, অতিরক্ষণশীল সাবেক পারমাণবিক কর্মসূচির মধ্যস্থতাকারী সাঈদ জলিলি ও সংস্কারপন্থি প্রার্থী মাসুদ পাজেশকিয়ান ও সমালোচক মোস্তফা পোরমোহাম্মদ।
ইরানের চলামান শাসন ব্যবস্থার সমালোচকরা বলছেন, সাম্প্রতিক নির্বাচনগুলোতে কম ভোটার উপস্থিতি দেখা যায়। ভোটারদের অংশগ্রহণ ক্রমগত হ্রাস পাওয়ায় নির্বাচন ব্যবস্থার বৈধতা নষ্ট হয়ে গেছে। ২০২১ সালের নির্বাচনে মাত্র ৪৮ শতাংশ ভোটার অংশ নিয়েছিলেন। এ নির্বাচনে জয় পেয়েছিলেন রাইসি। এর তিন মাস আগে একটি সংসদীয় নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি ছিল রেকর্ড সর্বনিম্ন ৪১ শতাংশ।
গাজায় ইরানের মিত্র ফিলিস্তিনি সশস্ত্র সংগঠন হামাস এবং লেবাননে সশস্ত্র সংগঠন হিজবুল্লাহর সঙ্গে ইসরায়েলের পাল্টাপাল্টি হামলার মধ্যেই অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে এই আগাম নির্বাচন। আন্তর্জাতিক অবরোধের কারণে অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব পড়ায় এক ঝুঁকিপূর্ণ সময় পার করছে দেশটি।
গত এপ্রিলে ইরান তিন শতাধিক ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন নিয়ে হামলা চালায় ইসরায়েলে। সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কে ইসরায়েলের বিমান হামলায় ইরানের বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর সাত সদস্য নিহত হওয়ার প্রতিশোধ নিতে এ হামলা চালায় ইরান। ইসরায়েলও পাল্টা হামলা চালায় ইরানের ইস্পাহান শহরের বিভিন্ন লক্ষ্যবস্তুতে। ইরানের স্বঘোষিত শত্রু ও ইসরায়েলের ঘনিষ্ঠ মিত্র যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের পাঁচ মাস আগে ইরানের এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে।