• সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০২:২১ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম:

২৭৫ কোটি ডলার ৬ মাসে বিদেশী ঋণ বেড়েছে 

নিউজ ডেস্ক
আপডেটঃ : সোমবার, ৮ জুলাই, ২০২৪

বিদেশী ঋণ বেড়েই চলছে। ছয় মাসের হিসাবে সরকারি বেসরকারি মিলে বিদেশী ঋণ বেড়েছে ২৭৫ কোটি ৪০ লাখ ডলার। টাকার অঙ্কে যা ৩২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা (প্রতি ডলার ১১৮ টাকা হিসাবে)। গত সেপ্টেম্বরে বিদেশী ঋণ ছিল ৯ হাজার ৬৫৫ কোটি ডলার, গত মার্চে এসে তা বেড়ে হয়েছে ৯ হাজার ৯৩০ কোটি ৩৫ লাখ ডলার। বিশ্লেষকরা জানিয়েছেন, যে হারে বিদেশী ঋণ বাড়ছে তা থামানো না গেলে ভবিষ্যতে বৈদেশিক মুদ্রার ওপর চাপ আরো বেড়ে যাবে। বেড়ে যাবে দায় পরিশোধের চ্যালেঞ্জ। ঋণ নিয়ে ঋণ পরিশোধ করতে হবে। এতে জনগণের ঘাড়ে ঋণের বোঝা বাড়বে। আর এসব ঋণ পরিশোধের জন্য জনগণের ঘাড়ে চাপবে করের বোঝা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন বলেন, বিদেশী ঋণ বাড়ানো ঠিক না। কারণ, বৈদেশিক ঋণ বেড়ে যাওয়ার অর্থই ভবিষ্যতে চাপ বেড়ে যাওয়া। এমনিতেই আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে যাচ্ছে, এর ওপর বিদেশী ঋণ বাড়লে সুদে আসলে তা পরিশোধ করতে হবে। আর এ দায় পরিশোধ করতে হবে বৈদেশিক মুদ্রায়। এতে রিজার্ভের ওপর চাপ আরো বেড়ে যাবে। তিনি বলেন, যেসব প্রকল্পের জন্য ঋণ নেয়া হয়, তা সঠিকভাবে বাস্তবায়ন হয় না। তিনি মনে করেন, এভাবে ঋণ নিতে থাকলে সামনে ঋণ নিয়ে ঋণ পরিশোধ করতে হবে। আর এতে জনগণের ঘাড়ে চাপবে করের বোঝা।

বেসরকারি খাতে বিদেশী ঋণ নেয়ার বিষয়ে বলেন, বেসরকারি খাতে বৈদেশিক মুদ্রার ঋণ নেয়া নানা ধরনের ঝুঁকি থাকে। প্রথমত, যাকে বা যে শিল্প গ্রুপকে বৈদেশিক মুদ্রায় ঋণ আনার অনুমোদন দেয়া হবে, ওই ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের ঋণ ফেরত দেয়ার সক্ষমতা কতটুকু রয়েছে সেটা আগে যাচাই করতে হবে। কী উদ্দেশ্যে ঋণ নেয়া হবে, সেটা বৈদেশিক মুদ্রা আয় বর্ধক খাত কি না তা আগে দেখতে হবে। যদি ঋণ ফেরত দেয়ার সক্ষমতা না থাকে, বা যে উদ্দেশ্যে ঋণের অনুমোদন দেয়া হচ্ছে সেটা থেকে যদি বৈদেশিক মুদ্রা আয় না হয় তাহলে বৈদেশিক মুদ্রায় ঋণ ফেরত দিতে পারবে না। এতে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপর চাপ বেড়ে যাবে।

দ্বিতীয়ত, ডলারের সাথে বিনিময় মূল্যের ঝুঁকি বেড়ে যায়। কারণ, কয়েক বছর আগেও প্রতি ডলার ছিল ৭৭ টাকা। এখন প্রতি ডলার ১১৮ টাকা। এতে আপাতত সুদ কম হলেও পরিশোধের সময় এসে প্রকৃত সুদ বেড়ে যাচ্ছে। কারণ, বৈদেশিক মুদ্রায় ঋণ নিয়ে বৈদেশিক মুদ্রায় ফেরত দিতে হবে। যিনি ঋণ ফেরতে দেবেন, তাকে স্থানীয় মুদ্রায় ডলার কিনেই ফেরত দিতে হবে। ফলে প্রকৃত সুদ অনেক বেড়ে যায়। তৃতীয় ঝুঁকি হলো বৈদেশিক মুদ্রা পাচার হওয়ার আশঙ্কা থাকে। অনেকেই বৈদেশিক মুদ্রায় ঋণ নিয়ে প্রকৃত পণ্য না কিনে অথবা কম দামের পণ্য এনে বেশি দাম দেখিয়ে বৈদেশিক মুদ্রা পাচার করে থাকে। এরকম কয়েকটি ব্যাংকের বিরুদ্ধে এমন ঘটনা উদঘাটন করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এ কারণে এক্ষেত্রে অত্যন্ত সতর্ক থাকতে হয় নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে। আবার অনেকেই বৈদেশিক মুদ্রায় যে উদ্দেশ্যে ঋণ আনে ওই কাজে আর ব্যবহার করেন না। কেউবা স্থানীয় ঋণ পরিশোধ করেন বৈদেশিক মুদ্রায় ঋণ নিয়ে। এভাবে বৈদেশিক মুদ্রায় বেসরকারি খাতে ঋণ ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি। এ কারণে গভর্নরের নেতৃত্বে একটি কমিটি রয়েছে। ওই কমিটিতে অত্যন্ত সতর্কতার সাথে ঋণ অনুমোদন দিতে হয়। তিনি মনে করেন, এসব ঝুঁকি কমাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তদারকি বাড়াতে হবে। তা না হলে বৈদেশিক মুদ্রায় দায় বেড়ে যাবে। চাপ বেড়ে যাবে বৈদেশিক মুদ্রার মজুদের ওপর।

বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায, গত ছয় মাসে সরকারি ঋণ বেড়েছে সবচেয়ে বেশি। সেপ্টেম্বরে সরকারি খাতে বিদেশী ঋণ ছিল সাত হাজার ৫২৭ কোটি ডলার। মার্চে তা বেড়ে হয়েছে সাত হাজার ৯০০ কোটি ডলার। আলোচ্য সময়ে সরকারের বিদেশী ঋণ বেড়েছে প্রায় ৩৭৪ কোটি ডলার। টাকার অঙ্কে যা প্রায় ৪৪ হাজার কোটি টাকা। আর বেসরকারি খাতে মার্চ শেষে বিদেশী ঋণ হয়েছে দুই হাজার ৩০ কোটি ডলার, যা ছয় মাস আগে অর্থাৎ সেপ্টেম্বরে ছিল দুই হাজার ১২৮ কোটি ডলার।
তবে, বেসরকারি খাতে স্বল্পমেয়াদির তুলনায় দীর্ঘমেয়াদে বেশি বাড়ছে। সেপ্টেম্বরে দীর্ঘমেয়াদি বিদেশী ঋণ ছিল ৮৮৫ কোটি ডলার, মার্চে এসে তা বেড়ে হয়েছে প্রায় ৯২৬ কোটি ডলার। আলোচ্য সময়ে বেসরকারি খাতে দীর্ঘমেয়াদি বিদেশী ঋণ বেড়েছে ৪০ কোটি ৫০ লাখ ডলার। সূত্র নয়া দিগন্তক


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ