ইরাক-ইরান সীমান্তে সংঘটিত শক্তিশালী ভূমিকম্পে নিহতের সংখ্যা পাঁচশত ছাড়াইয়া গিয়াছে। আহতের সংখ্যা কয়েক হাজার। ইরানের একটি সংবাদ সংস্থা জানাইয়াছে, ভূমিকম্পে দেশটির কিরানশাহ প্রদেশের একটি শহরেই শতাধিক প্রাণহানির ঘটনা ঘটিয়াছে। রেড ক্রিসেন্ট সূত্রে জানা যায়, ইরানের কমপক্ষে আটটি গ্রাম ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হইয়াছে। বিদ্যুত্ ও টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা ভাঙিয়া পড়িয়াছে আরো অনেক এলাকায়। সব চাইতে উদ্বেগের বিষয় হইল, উপদ্রুত এলাকায় বাস্তুহারা হইয়া পড়িয়াছে ৭০ হাজারেরও বেশি মানুষ। বিধ্বস্ত বাড়ির মধ্যে চাপা পড়িয়াছে তাহাদের সহায়-সম্বল। তবে স্বস্তির বিষয় হইল, বাস্তুহারা এইসকল মানুষের জরুরি খাদ্য ও আশ্রয়ের প্রয়োজন মিটাইতে দুই দেশের সরকার যথাসাধ্য চেষ্টা করিতেছেন। ভূমিকম্পপরবর্তী ভূমিধসের কারণে উদ্ধার-তত্পরতা সাময়িকভাবে ব্যাহত হইলেও উদ্ধারকাজ থামিয়া নাই। উল্লেখ্য যে, গত রবিবার স্থানীয় সময় রাত ৯টা ২০ মিনিটে ইরান ও ইরাকের সীমান্তবর্তী এলাকায় ইরাকের হালাবজা শহর হইতে ২১ মাইল দক্ষিণে ৭ দশমিক ৩ মাত্রার এই শক্তিশালী ভূমিকম্পটি আঘাত হানে। ইহার উত্পত্তিস্থল ছিল ইরান সীমান্তের সন্নিকটে আধা-স্বায়ত্তশাসিত কুর্দিস্তান অঞ্চলে সুলাইমানিয়াহ প্রদেশের পেনজিনে। হতাহতের এই ঘটনায় আমরা গভীরভাবে শোকাহত।
বংশানুক্রমিকভাবে দুর্যোগ আমাদের নিত্য সঙ্গী। অতএব, আমরা জানি—এই ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ পারিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় জীবনে কী অপরিমেয় বিপর্যয় ডাকিয়া আনে। ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যক্রমের মাধ্যমে বস্তুগত ক্ষতি কিছুটা কাটাইয়া উঠা সম্ভব হইলেও ভুক্তভোগীদের মনে যে-ক্ষতের সৃষ্টি হয় তাহা তাহাদের তাড়াইয়া বেড়ায় দীর্ঘ সময় ধরিয়া। বস্তুত স্বজন হারাইবার যে-ক্ষতি তাহা পূরণ হইবার নহে। আমাদের অভিজ্ঞতা হইতে ইহাও সুবিদিত যে, যত সাহায্য-সহযোগিতাই দেওয়া হউক না কেন— এমনকি বস্তুগত যে-ক্ষতি, বিশেষ করিয়া বিষয়-সম্পত্তি ও অবকাঠামোগত ক্ষতিও খুব কম ক্ষেত্রেই সহজে কাটাইয়া উঠা সম্ভব হয়। তাহা সত্ত্বেও আমরা আশা করি, সংশ্লিষ্ট দেশদুইটির সরকারসহ সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় দুর্গত মানুষ অচিরেই এই বিপর্যয় কাটাইয়া উঠিবেন। আমরা ইরাক ও ইরানের ভূমিকম্পকবলিত পরিবারগুলির প্রতি গভীর সমবেদনা জানাই।