ছাত্র-জনতার ব্যাপক বিক্ষোভের মুখে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে পালিয়েছেন শেখ হাসিনা। পদত্যাগের পর ভারতে চলে যান তিনি। তার ক্ষমতাচ্যুতিতে দেশটিতে সৃষ্টি হয়েছে তোলপাড়।
হচ্ছে বৈঠকের পর বৈঠক। এর মধ্যে বাংলাদেশ নিয়ে ভারতে সর্বদলীয় বৈঠকও অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেখানে শেখ হাসিনাকে উৎখাতে পাকিস্তানের হাত আছে কি না, সেই প্রশ্ন তুলেছেন ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের সাবেক সভাপতি ও দেশটির বিরোধী দলীয় নেতা রাহুল গান্ধী।
মঙ্গলবার (৬ আগস্ট) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ব্যাপক বিক্ষোভের মধ্যে শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে ক্ষমতাচ্যুত করার পর বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে আয়োজিত সর্বদলীয় বৈঠকের সময় পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের কাছে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তুলেছেন বিরোধী দলের নেতা রাহুল গান্ধী।
বেশ কয়েকটি সূত্রের বরাত দিয়ে এনডিটিভি জানিয়েছে, ঢাকায় ক্ষমতার পালাবদলের কূটনৈতিক প্রভাব মোকাবিলায় মোদি সরকারের স্বল্পমেয়াদী এবং দীর্ঘমেয়াদী কৌশল কী তা জানতে চেয়েছেন রাহুল গান্ধী।
জবাবে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর জানিয়েছেন, ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার ঘনিষ্ঠভাবে বাংলাদেশের পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করছে যাতে বাংলাদেশ বিষয়ে নয়াদিল্লি তার পরবর্তী পদক্ষেপটি ঠিক করতে পারে।
পরে এই কংগ্রেস নেতা আরও জিজ্ঞাসা করেন, ব্যাপক বিক্ষোভের জেরে হাসিনার ক্ষমতাচ্যুতির চূড়ান্ত পরিণতিতে বিদেশি শক্তিগুলো, বিশেষ করে পাকিস্তান জড়িত থাকতে পারে কি না। এর জবাবে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার জানায়, তারা এই বিষয়টি তদন্ত করছে।
সর্বদলীয় এই বৈঠকের বিষয়ে একটি সূত্র আরও উল্লেখ করেছে, পাকিস্তানি একজন কূটনীতিক হিংসাত্মক বিক্ষোভের মধ্যে বাংলাদেশের পরিস্থিতি প্রতিফলিত করতে ক্রমাগত তার সামাজিক মিডিয়া প্রদর্শনের ছবি পরিবর্তন করছেন বলে সরকার বলেছে। মোদি সরকার বলেছে, এই ধরনের কাজ আরও বড় কিছু নির্দেশ করে কিনা সেটিও তারা তদন্ত করছে।
রাহুল গান্ধী আরও জিজ্ঞাসা করেন, নয়াদিল্লি বাংলাদেশের ঘটনাপ্রবাহের এই নাটকীয় মোড়ের কোনও পূর্বাভাস পেয়েছিল কিনা। এর উত্তরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী জয়শঙ্কর বলেন, ভারত পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে।
এনডিটিভি বলছে, মঙ্গলবারের এই সর্বদলীয় বৈঠকে কংগ্রেস এবং অন্যান্য বিরোধী দলগুলো প্রতিবেশী বাংলাদেশে সংকট মোকাবিলায় নরেন্দ্র মোদি সরকারকে তাদের পূর্ণ সমর্থনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
বৈঠকের পরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী জয়শঙ্কর বিরোধীদের সর্বসম্মত সমর্থনের প্রশংসা করে সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এক্সে একটি পোস্ট দিয়েছেন। সেখানে তিনি লিখেছেন, ‘বাংলাদেশের চলমান ঘটনাবলী সম্পর্কে আজ সংসদে একটি সর্বদলীয় বৈঠকের সংক্ষিপ্ত বিবরণ দেওয়া হয়েছে। এখানে সবার সর্বসম্মত সমর্থন এবং বোঝাপড়ার প্রশংসা করছি।’
এর আগে সোমবার রাতে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার সিসিএস বা ক্যাবিনেট কমিটি অন সিকিউরিটির বৈঠক বসেছিল। সিসিএসের বৈঠকে আলোচনার প্রধান বিষয় ছিল বাংলাদেশের পরিস্থিতি। সিসিএস হলো নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিষয়ে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও শীর্ষ কমিটি।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং, পররাষ্ট্রমন্ত্রী জয়শঙ্কর সকলেই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।
তবে শুধু এই গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক নয়, সোমবার সকাল থেকে একের পর এক বৈঠক হয়েছে। নানা স্তরে হয়েছে। নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞদের মধ্য়ে হয়েছে। কূটনীতিকদের মধ্যে হয়েছে। নীতি-নির্ধারকদের মধ্যে হয়েছে। অনেক বিশেষজ্ঞকে ডাকা হয়েছে। তাদের সঙ্গে কথা বলা হয়েছে।
এক নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ জানিয়েছেন, ‘ভারতের এক্ষেত্রে একটা বড় চিন্তা রয়েছে। তা হলো, চীন ও পাকিস্তানকে নিয়ে। ভারতের প্রতিবেশী এই দুই দেশ এই পরিস্থিতিতে কী ভূমিকা নেবে, সেটা ভারতের একটা প্রধান বিচার্য বিষয়।