• রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:৫৭ অপরাহ্ন

ঢাকায় আন্তর্জাতিক সাহিত্য উত্সব

আপডেটঃ : সোমবার, ২০ নভেম্বর, ২০১৭

সমাপ্ত হইয়াছে ঢাকা লিট ফেস্ট ২০১৭। বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে ১৬ হইতে ১৮ নভেম্বর, এই তিন দিন ধরিয়া আন্তর্জাতিক এই সাহিত্য উত্সব অনুষ্ঠিত হইয়াছে। এইবারের আসরে অংশ নিয়াছেন ২৪টি দেশের দুই শতাধিক সাহিত্যিক। তাহাদের মধ্যে বিদেশি অতিথি ছিলেন ৭৫ জন। তিনদিনের এই উত্সবে প্রায় ৯০টি সেশনের আয়োজন করা হইয়াছে। এই আন্তর্জাতিক সাহিত্য উত্সব প্রথম আয়োজন করা হয় ২০১১ সালে। তখন ইহার নাম ছিল হে লিটারেরি ফেস্টিভাল। পরে ২০১৫ সালে ইহার নামকরণ করা হয় ঢাকা লিটারেরি ফেস্টিভাল বা ঢাকা লিট ফেস্ট। ইহার মধ্য দিয়া আন্তর্জাতিক উত্সবটি একটি স্থানীয় চরিত্র পাইয়াছে। কারণ যুক্তরাজ্যের ওয়েলসে যেই হে ফেস্টিভাল অব লিটারেচার অ্যান্ড আর্টস অনুষ্ঠিত হইয়া থাকে, তাহারই নামে ঢাকায় ২০১১ সালে উত্সবটি শুরু হইয়াছিল। ২০১৫ সালে উত্সবটির নাম পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় ইহার পৃষ্ঠপোষকতায় যুক্ত হয়। নিয়মিতভাবে দক্ষতার সহিত আয়োজনের মধ্য দিয়া সাহিত্য উত্সবটি দেশ-বিদেশে স্বীকৃতি পাইয়াছে।

হে ফেস্টিভাল যখন প্রথম শুরু হয়, তখন স্থানীয় সাহিত্যিক ও সচেতন সাহিত্যামোদীরা উত্সবটির তীব্র সমালোচনা করিয়াছেন। যেই বাংলা একাডেমির সহিত একুশে বইমেলার অচ্ছেদ্য বন্ধন, সেই বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে ভিন্ন ভাষার দাপট দেখা যাইবে, তাহা অনেকেই প্রাথমিকভাবে গ্রহণ করিতে পারেন নাই। তাহা ছাড়া এই উত্সবের আয়োজক মূলত ঢাকায় বসবাসরত কিংবা ঢাকার পরিচয় লইয়া বিদেশে বসবাসরত ইংরেজি ভাষার উঠতি লেখকরা। তাই এই উত্সব ঢাকাস্থ অভিজাত লোকদের আয়োজন বলিয়া অনেকেই গোড়াতে সন্দেহের চোখে দেখিয়াছে। তবে ইহাতে ক্রমশ বাংলাভাষী ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির লেখকদের অংশগ্রহণ বৃদ্ধি পাইতেছে। এই বছর বাংলাভাষী তথা স্থানীয় সাহিত্যিকদের অংশগ্রহণ ছিল চোখে পড়িবার মত। তবে এই উত্সবে অন্যতম আকর্ষণীয় ব্যাপার হইল বিদেশি লেখকদের সহিত স্থানীয় লেখক-পাঠকদের মতবিনিময়ের সুযোগ বৃদ্ধি। ইহাতে সক্রিয় বিদেশি লেখকদের যেমন জানা যাইতেছে, তেমনি বিদেশিরাও বাংলাদেশি লেখক সম্পর্কে জানিতে পারিতেছেন। পাশাপাশি এই উত্সবকে ঘিরিয়া অনেক বাংলাদেশি লেখকের গ্রন্থ ইংরেজিতে অনূদিত হইতেছে। অর্থাত্ বিশ্বসাহিত্যের সঙ্গে বাংলাদেশের বাংলা-ইংরেজি উভয় ভাষার লেখকদের যোগাযোগ বৃদ্ধি পাইতেছে।

গত বছর বিশ্ববিখ্যাত সাহিত্যিক ভি এস নাইপল আসিয়াছিলেন। এইবার উত্সবের উদ্বোধন করিয়াছেন সিরিয়ার বিখ্যাত লেখক আদোনিস। ইহা ছাড়া এই বছর বেন ওকরি, লিওনেল শ্রিভার, নবনীতা দেবসেন, উইলিয়াম ডারিম্পেল, এসথার ফ্রয়েড প্রমুখ লেখক আসিয়াছিলেন। কেবল সাহিত্য বিষয়ক আলোচনাই নহে, একাধিক চলচ্চিত্রের প্রিমিয়ারও হইয়াছে উত্সবে। আমাদের বাংলা ভাষা ও সাহিত্য অনেক সমৃদ্ধ। কিন্তু আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে আমাদের সাহিত্যের সেইরূপ কোনো স্বীকৃতি নাই। রবীন্দ্রনাথের পর সাহিত্যক্ষেত্রে কোনো লেখক তেমন আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পান নাই। অথচ আমাদের দেশে উন্নত মানের সাহিত্যিকের খুব অভাব নাই। তাই ইহাদের সাহিত্যকর্মের অনুবাদ হওয়া প্রয়োজন। বাংলাদেশ সরকার অনুবাদকর্মের উদ্যোগ নিতে পারে। আমাদের একুশে বইমেলায় কেবলই বাংলা বই পাওয়া যায়। আমরা বাংলা ভাষার জন্য রক্ত ঢালিয়াছি মানে এই নয় যে, কেবল বাংলা বইই আমাদের পড়িতে হইবে। একুশে ফেব্রুয়ারি যদি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হইতে পারে তবে সময় আসিয়াছে বইমেলাকেও আন্তর্জাতিক বইমেলায় পরিণত করার। বহির্বিশ্বের জ্ঞান ও বইপুস্তকের সঙ্গে পরিচিত হওয়া নিজেদের সমৃদ্ধির জন্যই প্রয়োজন। এই ক্ষেত্রে ঢাকা লিট ফেস্ট একটা সুযোগ সৃষ্টি করিয়াছে। এই সুযোগকে কাজে লাগাইয়া আমাদের সাহিত্যকে অগ্রবর্তী ও আন্তর্জাতিক মঞ্চে পরিচিত করাইতে হইবে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ