বরিশাল বিভাগে নীরবে ভোটের প্রচার চালাচ্ছে জামায়াতে ইসলামী। বিভাগটির ২১টি নির্বাচনি এলাকার ১৮টিতে চূড়ান্ত হয়েছে দলটির প্রার্থী। এসব প্রার্থীর নামও ঘোষণা করা হয়েছে দলীয় ফোরামে। সেই সঙ্গে প্রার্থীদের পক্ষে মাঠে নামার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে নেতাকর্মীদের। প্রার্থীদের পক্ষে নেতাকর্মীদের মাঠে নামার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
পরিচয় না প্রকাশের শর্তে দলের এক নেতা বলেন, ৩০০ আসনেই প্রার্থী দেবে জামায়াত। এসব আসনকে দুটি ক্যাটাগরিতে ভাগ করেছে দলের নীতিনির্ধারক মহল। ‘এ’ ক্যাটাগরির আসনগুলোয় জয়ের জন্য লড়বেন দলের প্রার্থীরা। ‘বি’ ক্যাটাগরির আসনগুলো থাকবে রাজনৈতিক কৌশলগত প্রয়োজনে ব্যবহার ও সমর্থন যাচাইয়ে। কোনো দল বা জোটের সঙ্গে ঐক্য হলে এই ‘বি’ ক্যাটাগরির আসনগুলোয় ছাড় দেবে তারা। বরিশালে ‘এ’ ক্যাটাগরির আসন হিসাবে ৩টি নির্ধারণ করেছে জামায়াত। এই তিন আসনে তাদের প্রার্থী যেমন শক্তিশালী, তেমনই জয়ের সম্ভাবনাও রয়েছে। এ ৩টিসহ এখানে থাকা ২১ আসনের ১৮টিতে ঘোষণা হয়েছে দলের প্রার্থীর নাম। তাদের পক্ষে তৃণমূলে কাজও চলছে জোরেশোরে। বরিশালের যে ৩টি আসনে জয়ের টার্গেটে কাজ করছে জামায়াত, সেগুলো হচ্ছে পিরোজপুর-১ ও ২ এবং পটুয়াখালী-২।
পিরোজপুরের দুটি আসনে দলীয় প্রার্থী হিসাবে ঘোষণা করা হয়েছে জামায়াত নেতা ও সাবেক সংসদ-সদস্য (এমপি) দেলাওয়ার হুসাইন সাঈদীর দুই ছেলের নাম। পিরোজপুর-১ (ইন্দুরকানী-সদর-নাজিরপুর) আসনে পরপর দুবার সংসদ-সদস্য ছিলেন সাঈদী। এখানে জামায়াতের প্রার্থী হচ্ছেন তার বড় ছেলে মাসুদ সাঈদী। মেজো ছেলে শামীম সাঈদী প্রার্থী হবেন পিরোজপুর-২ (ভান্ডারিয়া-কাউখালী-স্বরূপকাঠী) আসনে। আওয়ামী লীগের শাসনামলে যুদ্ধাপরাধীর বিতর্কিত মামলায় আমৃত্যু কারাদণ্ড পাওয়া সাঈদী রহস্যজনকভাবে মারা যান কারা অভ্যন্তরেই। দুই নির্বাচনি এলাকা সূত্রে পাওয়া তথ্যানুযায়ী বাবা দেলাওয়ার হুসাইন সাঈদীর ভাবমূর্তি আর ভোটব্যাংকের ওপর ভর করে জয় ছিনিয়ে নেওয়া কঠিন হবে না দুই ভাইয়ের পক্ষে। পিরোজপুর-১ আসনে জামায়াতের অবস্থান খুবই শক্তিশালী। দলীয় প্রার্থী নির্বাচন প্রশ্নে বিএনপির সিদ্ধান্তে ভুল হলে পিরোজপুর-২ও চলে যেতে পারে তাদের দখলে।
পটুয়াখালী-২ (বাউফল) আসনে প্রার্থী হিসাবে ঢাকা মহানগর জামায়াতের সাধারণ সম্পাদক ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদের নাম ঘোষণা করেছে দলটি। ইসলামী ছাত্রশিবিরের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মাসুদ তার নির্বাচনি এলাকায় বহু বছর ধরে নীরবে চালিয়ে আসছেন জনসমর্থন তৈরির কাজ। স্বচ্ছ ভাবমূর্তির পাশাপাশি বাউফলে রয়েছে তার শক্তিশালী নীরব ভোটব্যাংক। আওয়ামী লীগ অধ্যুষিত এলাকা হিসাবে পরিচিত বাউফলে নেই বিএনপির তেমন শক্তিশালী প্রার্থী। দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার তদবিরে যারা আছেন, তারাও ব্যস্ত নেতৃত্ব দখল আর আধিপত্য বিস্তারের লড়াইয়ে। নির্বাচনে যেহেতু এবার আওয়ামী লীগের প্রার্থী থাকার সম্ভাবনা নেই, তাই এদিক থেকেও সুবিধাজনক অবস্থানে আছেন ড. মাসুদ। সাম্প্রতিক সময়ে পটুয়াখালীতে ওয়াজ-মাহফিল করে গেছেন ইসলামি চিন্তাবিদ মাওলানা মিজানুর রহমান আজহারী। লাখ লাখ লোকের উপস্থিতির ওই মাহফিল আয়োজনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন ড. মাসুদ। আজহারীর উপস্থিতিতে এ মাহফিলকেও তার নির্বাচনি প্রচারের কৌশল হিসাবে দেখছে পটুয়াখালীর মানুষ। এছাড়া বরিশাল-৫ (সদর) আসনের প্রার্থী দলের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মোয়াজ্জেম হোসাইন হেলালের জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী স্থানীয় পর্যায়ের জামায়াত নেতারা।
এর বাইরে অন্য আসনগুলোয় দলীয় প্রার্থী হিসাবে প্রাথমিকভাবে যাদের চূড়ান্ত করেছে জামায়াত, তারা হলেন বরিশাল-১ (গৌরনদী-আগৈলঝাড়া) আসনে জেলা মজলিশে শূরার সদস্য মাওলানা কামরুল ইসলাম, বরিশাল-২ (উজিরপুর-বানারীপাড়া) আসনে জেলা নায়েবে আমির মাস্টার আব্দুল মান্নান, বরিশাল-৩ (বাবুগঞ্জ-মুলাদী) আসনে মহানগর জামায়াতের আমির জহিরউদ্দিন মু. বাবর, বরিশাল-৬ (বাকেরগঞ্জ) আসনে জেলা সাধারণ সম্পাদক মাওলানা মাহমুদুন্নবী। বরিশাল-৪ (হিজলা-মেহেন্দীগঞ্জ) আসনে এখনো প্রার্থী চূড়ান্ত করেনি দলটি। পিরোজপুর-৩ (মঠবাড়িয়া) আসনে প্রার্থী করা হয়েছে আব্দুল জলিলকে। ঝালকাঠি-১ (রাজাপুর-কাঁঠালিয়া) আসনে চূড়ান্ত করা হয়নি কোনো প্রার্থী। ঝালকাঠি-২ (নলছিটি-ঝালকাঠি) আসনে দলীয় প্রার্থী হিসাবে ঘোষণা করা হয়েছে ঢাকা মহানগর উত্তরের কর্মপরিষদ সদস্য শেখ নেয়ামুল করিমকে। পটুয়াখালী-১ (সদর-দুমকি-মীর্জাগঞ্জ) আসনে জেলা আমির নাজমুল আহসান। পটুয়াখালী-৩ (গলচিপা-দশমিনা) আসনে সাবেক জেলা আমির অধ্যাপক শাহ আলম ও পটুয়াখালী-৪ (কলাপাড়া-রাঙ্গাবালী) আসনে কলাপাড়া উপজেলা জামায়াতের আমির মাওলানা আব্দুল কাইয়ুম।
বরগুনা-১ (সদর-আমতলী-তালতলী) আসনে চূড়ান্ত করা হয়েছে জেলা আমির মাওলানা মহিবুল্লাহ হারুনকে। বরগুনা-২ (বামনা-বেতাগী-পাথরঘাটা) আসনে সাবেক মজলিশে শূরা সদস্য ডা. সুলতান আহম্মেদ। ভোলা-১ (সদর) আসনে জেলা নায়েবে আমির অধ্যক্ষ মাওলানা মো. নজরুল ইসলাম, ভোলা-২ (বোরহানউদ্দিন-দৌলতখান) আসনে সাবেক জেলা আমির মাওলানা ফজলুল করিম এবং ভোলা-৪ (চরফ্যাশন-মনপুরা) আসনে সাবেক জেলা আমির মাওলানা মোস্তফা কামাল। নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী চূড়ান্ত করা প্রসঙ্গে বরিশাল বিভাগের দায়িত্বে থাকা দলের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুয়াজ্জম হোসাইন হেলাল বলেন, ‘চূড়ান্ত বলে তো কিছু নেই। নির্বাচনি তফশিল ঘোষণা থেকে চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশের পরই কেবল বলা যাবে কারা সর্বশেষ প্রার্থী হলেন। এটা আসলে একটা নিয়মিত সাংগঠনিক প্রক্রিয়া।’ কোনো দল বা জোটের সঙ্গে সমঝোতা হলে সেক্ষেত্রে কী হবে-জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘১৯৯১ সালে ২২০ আসনে আমাদের প্রার্থী ছিল। জোট হলে তখন আসন সমঝোতা হবে, জোটের পক্ষে একজন প্রার্থী থাকবে। সেটা যদি হয়, তখন আবার নতুন করে সিদ্ধান্ত নেবে দল।
দলের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুয়াজ্জম হোসাইন হেলাল বলেন, ‘জন-আকাঙ্ক্ষার ভিত্তিতে করণীয় নির্ধারণ করে সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড চালাব আমরা। সেক্ষেত্রে গণহত্যার বিচার কিংবা নির্বাচন, যেটা আগে আসবে, সেদিকেই এগোবে দল। প্রার্থী মনোনয়ন মানে এ নয় যে নির্বাচনকে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। এটি স্রেফ দলের নিয়মিত সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড।