আগামী এপ্রিলে দেশে ফিরছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। সেটা এপ্রিল মাসের যেকোনো সময় হতে পারে। জ্যেষ্ঠপুত্র তারেক রহমানের বাসায় যুক্তরাজ্যের লন্ডন ক্লিনিক হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসাধীন আছেন তিনি। লন্ডন হাসপাতালের চিকিৎসকরা ‘হোম ভিজিট’-এর মাধ্যমে প্রতিদিনই তাঁর চিকিৎসা চালিয়ে যাচ্ছেন। তাঁর শারীরিক অবস্থার উন্নতি হয়েছে। চিকিৎসকরা যখন পরিষ্কারভাবে ছাড়পত্র দেবেন তখনই তিনি দেশে ফেরার সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন।
বিএনপি চেয়ারপারসনের ব্যক্তিগত চিকিৎসক এবং দলের জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন লন্ডন থেকে গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে এ তথ্য জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘ম্যাডাম দেশে ফেরার পর হয়তো ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ পরিবারের অন্য সদস্যরাও দেশে ফিরে যাবেন।’ প্রফেসর জাহিদ হোসেন আরও বলেন, ‘ম্যাডামের শরীরের অবস্থা আল্লাহর রহমতে এখন অনেকটাই স্ট্যাবল আছে। তাঁর পুত্র তারেক রহমানের বাসায় থেকে লন্ডন হসপিটালের চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসাধীন রয়েছেন তিনি।
তাঁরা (চিকিৎসকরা) হোম ভিজিটের মাধ্যমে এই চিকিৎসা চালিয়ে যাচ্ছেন। আমরা দেশীয় ডাক্তাররাও তাদের সঙ্গে সব সময়ই সমন্বয় করছি। আমরা আশাবাদী যে ম্যাডামের শারীরিক অবস্থার ইনশা আল্লাহ আরও উন্নতি হবে এবং সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকরা দেশে ফেরার ব্যাপারে পরামর্শ দিতে পারবেন। সবকিছু মিলে আশা করছি তিনি আগামী এপ্রিল মাসের যেকোনো সময়ই বাংলাদেশে ফিরতে পারবেন।
ডা. জাহিদ আরও বলেন, ‘দীর্ঘদিন পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন থাকার পর ম্যাডাম এখন তাঁর পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে একসঙ্গে দিন কাটাচ্ছেন। মানসিকভাবেও তিনি এখন অনেকটাই উচ্ছ্বসিত। বিশেষ করে পুত্র তারেক রহমান, পুত্রবধূ ডা. জুবাইদা রহমান ও সৈয়দা শর্মিলা রহমান, নাতনি ব্যারিস্টার জায়মা রহমান, জাহিয়া রহমান ও জাফিয়া রহমান ম্যাডামকে ঘিরে আছেন সব সময়। তাঁদেরও ম্যাডামের ওপর একসঙ্গে সময় কাটানোর একটা অধিকার আছে।
চিকিৎসা গ্রহণের পাশাপাশি সব মিলিয়েই তিনি এখন তাঁদের সঙ্গে সময় কাটাচ্ছেন। এখন সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকরা যখন বলবেন যে তিনি দেশে যেতে পারবেন, তখনই তিনি ইনশা আল্লাহ দেশে ফিরবেন। আমরা আশা করছি তিনি এপ্রিলেই দেশে ফিরতে পারবেন। এরপর ক্রমান্বয়ে পরিবারের অন্য সদস্যরাও দেশে ফিরে যাবেন।’ ডা. জাহিদ হোসেন বলেন, ‘ম্যাডাম খালেদা জিয়া দেশবাসীর কাছে দোয়া চেয়েছেন এবং দেশের সকল স্তরের মানুষকে আসন্ন ঈদুল ফিতরের অগ্রিম শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।
অন্যদিকে যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি এম এ মালেক জানিয়েছেন, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া আগামী এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি সময়ে দেশে ফিরবেন। গতকাল লন্ডনের স্থানীয় সময় সন্ধ্যায় বেগম খালেদা জিয়ার রোগমুক্তি কামনায় নোয়াখালী জাতীয়তাবাদী ফোরাম ইউকে আয়োজিত এক ইফতার মাহফিল শেষে তিনি সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। এম এ মালেক বলেন, ‘আমরা বেগম খালেদা জিয়াকে অনুরোধ করেছিলাম লন্ডনে ঈদ উদযাপন করে দেশে যেতে। তিনি আমাদের অনুরোধ রেখেছেন।
এখন তিনি ঈদের পরে এপ্রিলের মাঝামাঝি সময়ে দেশে ফিরবেন বলে আশা করছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘সংশ্লিষ্ট ডাক্তাররাও সে হিসেবে প্রস্তুতি নিয়ে ম্যাডামকে সেভাবেই চিকিৎসা দিচ্ছেন। তবে এখানে ফ্লাইটেরও একটি বিষয় আছে। ফ্লাইট যদি নির্ধারিত সময়ে না পাওয়া যায়, তাহলে দুই-এক দিন এদিক সেদিক হতে পারে। তবে ম্যাডাম দেশে যাওয়ার জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত রয়েছেন।’ তারেক রহমানের দেশে ফেরার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি স্থানীয় সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমাদের লিডারের (তারেক রহমান) দেশে যাওয়ার সময় নিয়ে এখনো নিশ্চিত বলতে পারছি না। ম্যাডাম খালেদা জিয়া যাওয়ার কিছু দিন পরে হয়তো তিনি দেশে ফিরবেন। একসঙ্গে দুজন অবশ্যই যাবেন না এটা আমি বিশ্বাস করি।
লন্ডন মহানগর বিএনপির উপদেষ্টা আবুল হোসেন জসিমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন যুক্তরাজ্য বিএনপির সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট আবুল কালাম আজাদ। আরও ছিলেন সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পারভেজ মল্লিক, জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম ইউকের সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার হামিদুল হক আফেন্দী লিটন, জিয়া পরিষদ যুক্তরাজ্য শাখার সভাপতি প্রফেসর ড. সাইফুল আলম চৌধুরী প্রমুখ।