• শনিবার, ১২ এপ্রিল ২০২৫, ০৬:৫৯ অপরাহ্ন

যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কারোপে যে প্রভাব পড়বে তা সামাল দেওয়া কঠিন হবে না

নিউজ ডেস্ক
আপডেটঃ : রবিবার, ৬ এপ্রিল, ২০২৫

অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কারোপে অর্থনীতিতে যে প্রভাব পড়বে তা সামাল দেওয়া কঠিন হবে না। প্রভাব কীভাবে সামলানো যায় তা দেখা হবে।

রোববার (৬ এপ্রিল) সচিবালয়ে অর্থ উপদেষ্টার অফিসকক্ষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এসব কথা বলেন তিনি।

অর্থ উপদেষ্টা বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের নতুন শুল্ক আরোপের ফলে অর্থনীতিতে যে প্রভাব পড়বে তা সামাল দেওয়া কঠিন হবে না। এটি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রশাসনের সঙ্গে নেগোসিয়েশনের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। ভালো কিছু হবে বলে আশাবাদী।

রমজান এবং ঈদে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করা গেছে এবং মানুষ স্বস্তি পেয়েছে। দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা ভালোর দিকে যাচ্ছে, রিজার্ভ বৃদ্ধি পেয়েছে বলেও উল্লেখ করেন অর্থ উপদেষ্টা।

এত দিন যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি পণ্যের ওপর গড়ে ১৫ শতাংশ শুল্ক ছিল। ২ এপ্রিল নতুন করে আরও ৩৭ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন। এই শুল্কের কারণে বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যের বড় বাজারটিতে পণ্য রপ্তানি, বিশেষ করে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে বড় ধাক্কার আশঙ্কা করছেন রপ্তানিকারকেরা। বাংলাদেশের মোট পণ্য রপ্তানির ১৮ শতাংশের গন্তব্য যুক্তরাষ্ট্র।

শুধু বাংলাদেশ নয়, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ওপর পাল্টা শুল্ক বসিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। এই ঘটনায় দুনিয়াজুড়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে। ট্রাম্পের এই ঘোষণা নিয়ে বিবিসি, সিএনএন, নিউইয়র্ক টাইমসসহ আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে বিশ্বনেতাদের ক্রিয়া–প্রতিক্রিয়া উঠে এসেছে।

ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) বলেছে, ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্ত বিশ্ব অর্থনীতির জন্য বড় ধাক্কা। অস্ট্রেলিয়া বলেছে, ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্ত বন্ধুসুলভ নয়। যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার বলেছেন, নিঃসন্দেহে এই ঘটনার অর্থনৈতিক প্রভাব অনুভূত হবে। চীন বলেছে, তারা এই ঘটনার প্রতিশোধ নেবে। অর্থাৎ ট্রাম্পের পাল্টা শুল্কের জবাবে তারাও পাল্টা শুল্ক আরোপ করবে। বিশ্বনেতাদের প্রতিক্রিয়ায় স্পষ্ট, ডোনাল্ড ট্রাম্প বিশ্বজুড়ে বাণিজ্যযুদ্ধ শুরু করে দিলেন।

তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য বাংলাদেশের পক্ষে। আমদানির তুলনায় যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রপ্তানি অনেক বেশি। তবে রপ্তানি তৈরি পোশাকের ওপর অত্যন্ত নির্ভরশীল, যার মধ্যে বেশিরভাগ মৌলিক আইটেম অন্তর্ভুক্ত। অন্যদিকে, বাংলাদেশে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রপ্তানি লোহা, ইস্পাত, খনিজ জ্বালানি, তুলা, তেলবীজ ও নিউক্লিয়ার রেক্টরসহ পাঁচটি পণ্যের ওপর নির্ভরশীল।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশ-মার্কিন দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ছিল ১০ দশমিক ১৩ বিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের রপ্তানি ছিল ৭ দশমিক ৫৯ বিলিয়ন ডলার এবং দেশ থেকে আমদানি ছিল ২ দশমিক ৫৩ বিলিয়ন ডলার।

২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশ ৬০১ দশমিক ৪ মিলিয়ন ডলার মূল্যের লোহার ইস্পাত আমদানি করেছে, তারপরে খনিজ জ্বালানি ৫৯৫ দশমিক ২ মিলিয়ন ডলার, তুলা ৩৬১ মিলিয়ন ডলার, তেলবীজ ৩৪১ মিলিয়ন ডলার ও নিউক্লিয়ার রেক্টর ১১১ মিলিয়ন ডলারের আমদানি করেছে।

বাংলাদেশের রপ্তানি আয় বেশিরভাগ আসে তৈরি পোশাক থেকে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৭ দশমিক ৫৯ বিলিয়ন ডলারের রপ্তানি আয়ের ৭ দশমিক ৪৩ বিলিয়ন ডলার এসেছে তৈরি পোশাক থেকে। বাকিটা এসেছে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, চামড়ার জুতা, ফার্মাসিউটিক্যালস ও বিভিন্ন কৃষিপণ্য থেকে।

২০২২-২৩ অর্থবছরে বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি ছিল ৯৭০১ দশমিক ৩৪ মিলিয়ন ডলারের পণ্য, আমদানি ২৩৪৪ দশমিক ২৬ মিলিয়ন ডলার। ২০২১-২২ অর্থবছরে রপ্তানি ১০৪১৭ দশমিক ৭২ মিলিয়ন ডলার, আমদানি ২৮২৫ দশমিক ৭৪ মিলিয়ন ডলার; ২০২০-২১ অর্থবছরে রপ্তানি ৬৯৭৪ দশমিক ০১ মিলিয়ন ডলার, আমদানি ২২৬৮ দশমিক ২০ মিলিয়ন ডলার; ২০১৯-২০ অর্থবছরে রপ্তানি ছিল ৫৮৩২ দশমিক ৩০ মিলিয়ন ডলার, আমদানি ২১২৬ দশমিক ১০ মিলিয়ন ডলার। এছাড়া ২০১৮-১৯ অর্থবছরে রপ্তানি ছিল ৬৮৭৬ দশমিক ২৯ মিলিয়ন ডলার, আমদানি ১৭৭৩ দশমিক ৫০ মিলিয়ন ডলার এবং ২০১৭-১৮ অর্থবছরে রপ্তানি ছিল ৫৯৮৩ দশমিক ৩১ মিলিয়ন ডলার, আমদানি ১৭০৪ দশমিক ৬৬ মিলিয়ন ডলারের পণ্য।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ