• শুক্রবার, ১০ জানুয়ারী ২০২৫, ০১:৪৮ অপরাহ্ন

জান্তাবাহিনীর বিমান হামলায় রাখাইনে নিহত অন্তত ৪০

নিউজ ডেস্ক
আপডেটঃ : বৃহস্পতিবার, ৯ জানুয়ারী, ২০২৫

মিয়ানমারের পশ্চিমাঞ্চলীয় রাখাইন রাজ্যের একটি গ্রামে দেশটির সামরিক বাহিনীর বিমান হামলায় অন্তত ৪০ জন নিহত হয়েছেন। এই হামলায় আহত হয়েছেন আরও ২০ জন। বৃহস্পতিবার স্থানীয় একজন উদ্ধারকর্মী ও একটি জাতিগত সংখ্যালঘু সশস্ত্র গোষ্ঠী ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপিকে এই তথ্য জানিয়েছে।

রাখাইনের সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি (এএ) রাজ্যটির নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে দীর্ঘদিন ধরে জান্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে আসছে। গত বছর এই রাজ্যের বিস্তীর্ণ অঞ্চলের দখল নেয় আরাকান আর্মি। ইতোমধ্যে রাখাইনের রাজধানী সিত্তের সঙ্গে রাজ্যের অন্যান্য অঞ্চলকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলেছে এই বিদ্রোহী গোষ্ঠী।

মিয়ানমারে ২০২১ সালে সেনাবাহিনীর অভ্যুত্থানে দেশটির গণতন্ত্রপন্থী নেত্রী অং সান সু চি নেতৃত্বাধীন বেসামরিক সরকারের পতন ঘটে। এরপর থেকে দেশজুড়ে জান্তা-বিরোধী ব্যাপক সশস্ত্র বিদ্রোহের শুরু হয়। রক্তাক্ত এই বিদ্রোহের কেন্দ্রে রয়েছে রাখাইনের সংঘাত।

আরাকান আর্মির মুখপাত্র খাইং থু খা এএফপিকে বলেছেন, বুধবার দুপুর ১টা ২০ মিনিটের দিকে রাখাইনের রামরি দ্বীপের কিয়াউক নি মাউ শহরে সেনাবাহিনীর বিমান থেকে বোমা হামলা চালানো হয়েছে। এতে ওই এলাকায় ধরে যাওয়া আগুনে ৫ শতাধিক বাড়িঘর পুড়ে গেছে।

‘‘প্রাথমিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, সেনাবাহিনীর হামলায় ৪০ বেসামরিক নিহত ও ২০ জন আহত হয়েছেন,’’ জানিয়েছেন তিনি। স্থানীয় উদ্ধারকারী দলের একজন সদস্য এএফপিকে বলেছেন, জান্তাবাহিনীর হামলায় ৪১ জন নিহত ও ৫২ জন আহত হয়েছেন।

নিরাপত্তার স্বার্থে নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই উদ্ধারকর্মী বলেন, পরিবহন ব্যবস্থা কঠিন হওয়ায় এই মুহূর্তে আমরা তাদের চিকিৎসা সহায়তা পাঠাতেও পারছি না। এছাড়া আমাদের কাছে পর্যাপ্ত পরিমাণ বিটাডাইন ও মিথাইলেড স্পিরিটও নেই।

জান্তা বাহিনীর বোমা হামলার পর সেখানকার ছবিতে দেখা যায়, বিস্মিত বাসিন্দারা পুড়ে যাওয়া ধ্বংসাবশেষের মাঝে হাঁটছেন। বোমা হামলায় মাটিতে গর্ত ও গাছপালা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অনেক ভবনের দেয়াল ধ্বংস হয়েছে।

রাখাইনে বিমান হামলার বিষয়ে মন্তব্য জানতে জান্তা সরকারের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেছে এএফপি। টেলিফোনে কল করা হলেও কোনও সাড়া পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছে ফরাসি এই বার্তা সংস্থা।

রামরি দ্বীপে চীনের অর্থায়নে একটি গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণ প্রকল্প রয়েছে। নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হলে ভারত মহাসাগরে বেইজিংয়ের প্রবেশদ্বার হিসাবে কাজ করবে বন্দরটি। যদিও মিয়ানমারের রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণে দীর্ঘদিন ধরে বন্দরটির নির্মাণ স্থগিত রয়েছে।

মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী দেশটির একাধিক ফ্রন্টে জান্তাবিরোধী বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে লড়াই করছে। ইতোমধ্যে দেশটির বিভিন্ন প্রান্তের নিয়ন্ত্রণ সামরিক বাহিনীর হাতছাড়া হয়ে গেছে। জান্তাবাহিনীর বিরুদ্ধে অনেক এলাকায় বেসামরিক লোকজনের ওপর বিমান হামলা ও কামানের গোলা ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে।

দেশটিতে অভ্যুত্থানের বিরোধিতায় গঠিত যুব-নেতৃত্বাধীন পিপলস ডিফেন্স ফোর্সের (পিডিএফ) পাশাপাশি জাতিগত সংখ্যালঘু সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মি ও অন্যান্য গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে লড়াই করছে জান্তা। দেশটির সীমান্ত লাগোয়া বিশাল এলাকার নিয়ন্ত্রণ করছে রাখাইনের খ্রিস্টান সংখ্যাগরিষ্ঠ বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি।

গত সপ্তাহে জাতিসংঘ বলেছে, মিয়ানমারে চলমান সংঘাতে ৩৫ লাখেরও বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। যা গত বছরের তুলনায় ১৫ লাখ বেশি। চলতি বছর দেশটিতে এই সংকট আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে বলে সতর্ক করে দিয়েছে সংস্থাটি। জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা সমন্বয়-বিষয়ক কার্যালয় (ওসিএইচএ) বলছে, ২০২৫ সালে দেশটির এক কোটি ৯৯ লাখ জনসংখ্যার এক তৃতীয়াংশেরও বেশি মানুষের সহায়তার প্রয়োজন হতে পারে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ