গুলিভর্তি পিস্তলসহ যাত্রী আটকের পরেও আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ না করে ধামাচাপা দেওয়ার অভিযোগে বিমান বন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ও এক এসআইকে ভর্ৎসনা করেছে হাইকোর্ট।
আদালত বলেছেন, দীর্ঘদিন ধরেই ফৌজদারি মোশন বেঞ্চের বিচারিক দায়িত্বে রয়েছি। এ সময় বিভিন্ন সোনা চোরাচালান মামলার নথি পর্যালোচনায় দেখা যাচ্ছে বেশি সোনা (শত কেজি) আটকের মামলায় আপনারা (পুলিশ) চার্জশিট প্রদানে বিলম্ব করছেন। আবার অল্প সোনা আটকের মামলায় দ্রুত চার্জশিট দেয়া হচ্ছে। বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি সহিদুল করিমের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ এ ভর্ৎসনা করেন।
আদালত বলেন, বিমানবন্দর হচ্ছে নিশ্চিদ্র নিরাপত্তা বেষ্টিত এলাকা এবং সবচেয়ে স্পর্শকাতর জায়গা। ওখানে অনুমতি ব্যাতীত অস্ত্র নিয়ে কেন যাবে? আরেকটা বিষয় অস্ত্রের লাইসেন্স যাচাই না করেই আসামিকে তার বাবার জিম্মায় ছেড়ে দিয়েছে। অন্য কেউ হলে পুলিশ এভাবে ছেড়ে দিত কিনা? ওই ঘটনার পর এসআই সুকান্তর বোন ফারমার্স ব্যাংকে চাকরি পায়-বিষয়টি উল্লেখ করে আদালত বলেন, তাহলে কনসিকোয়েন্সটা কি দাঁড়ালো? তার মানে তাদের সঙ্গে আপনার (এসআই) এক ধরনের সেটেলমেন্ট হয়েছে। বিমানবন্দর থানার ওসি নূর-ই-আজম মিয়া ও এসআই সুকান্ত সাহা এই ঘটনার জন্য আদালতে নি:শর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করেন। ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা ঘটবে না বলেও তারা অঙ্গীকার করেন। আদালত আগামী ৩০ জানুয়ারি এ বিষয়ে রায়ের জন্য দিন ধার্য রেখেছেন। আদালতে ওসি ও এসআইয়ের পক্ষে আইনজীবী ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন ও রাষ্ট্রপক্ষে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ফরহাদ আহমদ উপস্থিত ছিলেন।
গত বছরের ১৫ ফেব্রুয়ারি রাতে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে গুলিভর্তি পিস্তলসহ ফারমার্স ব্যাংকের পরিচালক আজমত রহমানকে আটক করা হয়। পরে তার নামে জিডি করে পুলিশ। কিন্তু নিয়মিত মামলায় তাকে আদালতে না পাঠিয়ে আজমত রহমানের বাবা ফারমার্স ব্যাংকের চেয়ারম্যান ড. আতাহার উদ্দিনের জিম্মায় ছেড়ে দেয় পুলিশ।
অভিযোগ রয়েছে, কর্তৃপক্ষের অনুমতি না নিয়েই ওই যাত্রী অস্ত্র বহন করছিলেন। এই ঘটনাটি গত ১০ ডিসেম্বর পত্রিকায় প্রতিবেদন আকারে প্রকাশ পায়। ১২ ডিসেম্বর প্রতিবেদনটি আদালতের নজরে আনেন ডিএজি ফরহাদ হোসেন। ওইদিনই হাইকোর্ট স্বতপ্রণোদিত হয়ে রুল জারি করে। পাশাপাশি ওসি ও এসআইকে তলব করে। ওই তলব আদেশে তারা হাজির হন আদালতে।
ফরহাদ আহমদ সাংবাদিকদের বলেন, আদালতে হাজির এ ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করে বিমানবন্দর থানার ওই দুই পুলিশ কর্মকর্তা নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়েছেন। ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা আর ঘটবে না বলে আদালতকে জানিয়েছেন।