দু’বছর আগে অর্থাৎ ৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংকে জমাকৃত বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে ৮১ মিলিয়ন ডলার হ্যাকড হয়েছিল। হ্যাকড হওয়া অর্থের একটি অংশ এর মধ্যে শ্রীলংকা ও ফিলিপাইন থেকে ফেরত এসেছে। বাকী অর্থ ফেরত পেতে বাংলাদেশ ব্যাংক নীরবে কাজ করে যাচ্ছে। অর্থ আদায়ের স্বার্থে অনেক কথাই হয়তো প্রকাশ্যে বলতে পারছে না তারা। তবে এই মূহুর্তে ফিলিপাইনে থাকা বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুসন্ধানী দলের একজন সদস্য (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) জানিয়েছেন, ‘এক্ষেত্রে ভালো অগ্রগতি হয়েছে এবং তারা ফিরে এসে তা দেশবাসীকে জানাবেন।’
এ বিষয়ে গবেষণারত অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক শীর্ষ কর্মকর্তার দাবি, ‘আক্রমণটা হয়েছে বিদেশ থেকে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় (উত্তর কোরিয়া)। তাই এই ঘটনায় বাংলাদেশের সাবেক গভর্নর ফরাস উদ্দিনের নেতৃত্বে গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন প্রকাশ করেনি সরকার।’ বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট আইনজ্ঞও মনে করেন যে, ঐ প্রতিবেদনটি আইনের দৃষ্টিতে অগ্রহণযোগ্য। উল্টো ঐ অপরিপক্ব প্রতিবেদন এবং বাংলাদেশের একজন মন্ত্রীর প্রমাণবিহীন, অপরিণামদর্শী ও আত্মবিনাশী কথাবার্তার কারণে ফিলিপাইন থেকে অর্থ উদ্ধার বেশ কষ্টসাধ্য করে ফেলা হয়েছে। বাংলাদেশ সরকার ঐ অন্যায্য প্রতিবেদন না প্রকাশ করে দূরদৃষ্টির পরিচয় দিয়েছে। তিনি সিআইডি অনুসন্ধান দলের এযাবৎ পাওয়া তথ্যাদি ভিত্তিক একটি প্রতিবেদন অবিলম্বে জমা দেবার পক্ষে মত প্রকাশ করেন।
এটিই হবে গ্রহণযোগ্য অনুসন্ধান প্রতিবেদন। আর এই প্রতিবেদনও প্রকাশের প্রয়োজন নেই। শুধুমাত্র অর্থ উদ্ধারের কাজে তা ব্যবহৃত হবে। ফিলিপাইন বা ফেডও তাদের অনুসন্ধান প্রতিবেদন আজও সবার জন্য প্রকাশ করেনি। অপরদিকে বাংলাদেশ পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ জানায়, ‘এটি ছিল একটি বহুজাতিক সাইবার আক্রমণ যার সঙ্গে ৯-১০টি দেশের অন্তত ৪০ জন নাগরিক জড়িত। যদিও এ ঘটনায় তদন্তের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একজন এফবিআই কর্মকর্তা রয়টার্সকে ২০১৭ সালের ২৯ মার্চ জানিয়েছিলেন, নিউইয়র্ক ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে ২০১৬ সালে ৮১ মিলিয়ন ডলার রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় (উত্তর কোরিয়া) হ্যাকড হয়েছে।’
এ বিষয়ে ম্যানিলাস্থ মার্কিন দূতাবাসের কর্মকর্তা ল্যামন্ট সিলারের আইনি সংযোজনটিও বিস্তারিতভাবে ব্যাখ্যা করেনি। তবে ওই সংবাদ প্রতিবেদন অনুযায়ী ম্যানিলায় এক বক্তৃতায় তিনি যা বলেছিলেন তাতে বুঝা যায় যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃপক্ষ এর সঙ্গে সম্পৃক্তদের চিহ্নিত করার খুব কাছাকাছি রয়েছে। তখন ওয়াশিংটনের কর্মকর্তারা নাম প্রকাশ না করার শর্তে উত্তর কোরিয়াকে দায়ী করেছিলেন। সিলার বলেন, ‘আমরা সবাই বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ হ্যাকিংয়ের বিষয়টি জানি। ব্যাংকিং সেক্টরে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় (উত্তর কোরিয়া) আক্রমণের এটা ছিল একটি উদাহরণ।’