পতিত স্বৈরাচার হাসিনা পদত্যাগ করে পলায়নের পর ছাত্র-জনতার স্বতঃস্ফূর্ত সমর্থনে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ‘গরিবের ব্যাংকার’খ্যাত বিশ্ববরেণ্য অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে নিয়ে প্রায় এক দশক আগে ইতিবাচক কথা বলেছিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ঘটনাস্থল মুম্বাই, তারিখ ৩ জানুয়ারি, ২০১৫। তখন তিনি বলেছিলেন, ‘আজ আমাদের সঙ্গে এমন একজন নোবেল বিজয়ী আছেন, সমাজবিজ্ঞান নিয়ে যার নিজস্ব ব্যাখ্যা ও রূপায়ণের সুবাদেই সমাজের দরিদ্রতমরা তাদের জীবনে আশা, সুযোগ আর মর্যাদার সন্ধান পেয়েছেন।
যে মঞ্চে দাঁড়িয়ে নরেন্দ্র মোদি এই কথাগুলো বলছিলেন, সেটা ছিল ভারতের ১০২তম বিজ্ঞান কংগ্রেসের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান। এই বিজ্ঞান কংগ্রেস হলো ভারতের সামগ্রিক বিজ্ঞানচর্চা তথা বিজ্ঞানীদের সবচেয়ে মর্যাদাব্যঞ্জক বার্ষিক সম্মেলন। চিরাচরিতভাবে ভারতের প্রধানমন্ত্রীরাই এই সম্মেলন উদ্বোধন করে থাকেন, আর নরেন্দ্র মোদি প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর সেটাই ছিল দেশের প্রথম বিজ্ঞান কংগ্রেস।
মুম্বাইয়ের সেই সম্মেলনে মোট পাঁচ জন নোবেল বিজয়ীকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল– যার মধ্যে চারজন বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় নোবেল পেয়েছিলেন, আর পঞ্চম জন ছিলেন শান্তিতে ২০০৬ সালের নোবেল বিজয়ী মুহাম্মদ ইউনূস। প্রধানমন্ত্রী মোদির হাত থেকে সম্মাননা গ্রহণ করার পর ড. ইউনূস বিজ্ঞান কংগ্রেসের প্রায় ২০ হাজার প্রতিনিধির সামনে প্লেনারি সেশনে ভাষণও দিয়েছিলেন।
প্রথাগত অর্থে বিজ্ঞানী না হলেও মুহাম্মদ ইউনূসকে যে ভারতের বিজ্ঞান কংগ্রেসে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল, তা কিন্তু ছিল প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের আগ্রহেই।
ড. ইউনূস যখন নোবেল পুরস্কার পান (২০০৬), তখন নরেন্দ্র মোদি ছিলেন গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী। বস্তুত তখন থেকেই তিনি ড. ইউনূসের গ্রামীণ ব্যাংক তথা ক্ষুদ্রঋণ প্রকল্পের কাজকর্ম খুব নিবিড়ভাবে ফলো করে আসছেন। গুজরাট রাজ্যেও সমবায় আন্দোলনের একটি খুব সমৃদ্ধ ইতিহাস আছে, সেখানে ড. ইউনূসের প্রবর্তিত মাইক্রোফিন্যান্স বা ক্ষুদ্রঋণ কীভাবে গরিব মানুষের কাজে আসতে পারে, তা নিয়েও মোদির রাজ্য সরকার চিন্তা-ভাবনা করেছিল।
উল্লেখ্য, গত ৮ আগস্ট সন্ধ্যায় ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে শপথ নেয় অন্তর্বর্তী সরকার। শপথের কয়েক মিনিটের মধ্যেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তাকে শুভেচ্ছা জানিয়ে টুইট করেন। টুইটে মোদি বলেন, ‘নতুন দায়িত্ব গ্রহণ করা প্রফেসর ইউনূসের প্রতি আমার শুভেচ্ছা। আমরা আশা করি (বাংলাদেশে) স্থিতিশীলতা ফিরবে, হিন্দু ধর্মাবলম্বীসহ সকল সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে।’ তিনি আরও বলেছেন, ‘ভারত— বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করার প্রতিশ্রুতি, উভয় দেশের নাগরিকের শান্তি, নিরাপত্তা ও উন্নয়নের আকাঙ্ক্ষার প্রতি বদ্ধপরিকর।’