• মঙ্গলবার, ০৭ মে ২০২৪, ০৮:২৪ অপরাহ্ন
শিরোনাম:
যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে হামাস রাজি হওয়ায় অবাক হয়েছে ইসরাইল রাষ্ট্রপতির কাছে ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা’ খচিত নতুন ‘স্মার্ট এনাইডি’ হস্তান্তর ইসি’র চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে আশ্রয়ণের ৮০ ঘর বিক্রির অভিযোগ ইউক্রেনে সেনা পাঠানো হবে না, ফের জানাল যুক্তরাষ্ট্র জনগণের সম্পদ লুটপাটে বারবার ডামি নির্বাচন : রিজভী রাঙামাটিতে দুর্বৃত্তের গুলিতে আহত শিশুর মৃত্যু রোহিঙ্গাদের জন্য তহবিল গঠনে নতুন অংশীদার খুঁজুন : আইওএমের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী ধানখেত থেকে গৃহবধূর গলাকাটা লাশ উদ্ধার কারও একার পক্ষে ডেঙ্গু মোকাবেলা সম্ভব না: স্বাস্থ্যমন্ত্রী মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে এলো ১২৮ বিজিপি

আকাশেও সমান সফল নারীরা

আপডেটঃ : বৃহস্পতিবার, ১৫ মার্চ, ২০১৮

দুঃসাহসিক চ্যালেঞ্জিং বিমানবাহিনীতেও অভূতপূর্ব সাফল্য দেখিয়ে চলেছে নারীরা। ২০০০ সাল ৮ জন নারীর যোগদানের মধ্য দিয়ে বিমানবাহিনীতে নারীদের আগমন শুরু। বর্তমানে কর্মরত রয়েছেন ১৭৩ কর্মকর্তা। দুই নারী পাইলট ইতিমধ্যে আকাশ জয় করেছেন। নারী পাইলটদের সাফল্যের গল্পগুলো ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পড়েছে সারা বিশ্বে। জাতিসংঘ শান্তি রক্ষা মিশন সম্পন্ন করেছেন বিমানবাহিনীর ৬৫ নারী কর্মকর্তা। বর্তমানে শান্তি রক্ষা মিশনে কর্মরত রয়েছেন ১৫ জন বাংলাদেশী নারী।

বিমান চালনা পৃথিবীর অন্যতম সাহসী ও চ্যালেঞ্জিং কাজগুলোর একটি। শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ, সাহসী ও দক্ষরাই কেবল বিমান চালনার জন্য নির্বাচিত হয়ে থাকেন। একটা সময় ছিল যখন বিমান চালানোর মতো চ্যালেঞ্জিং কাজটি পুরুষের পক্ষেই সম্ভব বলে মেনে নেওয়া হতো। নারীদের বিমান চালনায় দেখা যেত কম। কিন্তু এই ধারণাটি ভুল প্রমাণ করেছেন কয়েকজন নারী। ইতিহাসে এই নারীদের সাহসিকতা ও বিমান চালনায় দক্ষতার গল্পগুলো রোমাঞ্চকর ও অনুকরণীয় হয়ে রয়েছে। আকাশজয়ে ইতিহাস গড়েছেন বাংলাদেশের দুই নারী। ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট নাইমা হক ও ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট তামান্না-ই-লুত্ফী বৈমানিক হিসেবে প্রথমবারের মতো যুক্ত হন বাংলাদেশ বিমান বাহিনীতে। তারা যশোরে বাংলাদেশ বিমান বাহিনী ঘাঁটি বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমানের ১৮ নম্বর স্কোয়াড্রনে বেল-২০৬ হেলিকপ্টারে বেসিক কনভার্সন কোর্স সম্পন্ন করেন। নাইমা হক ও তামান্না-ই-লুত্ফী এর আগে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীতেই যুদ্ধসংক্রান্ত নয়, এমন কাজের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তবে বিমান বাহিনীতে প্রথমবারের মতো সামরিক পাইলট নিয়োগের পথ উন্মুক্ত হলে তারা এতে যুক্ত হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে সফল হন। এই দুই নারী পাইলট বর্তমানে কঙ্গোতে শান্তি রক্ষা মিশনে কর্মরত আছেন। তবে তাদের এ যাত্রায় কম খাটুনি খাটতে হয়নি। নানা বৈরী পরিবেশে কাজ করার প্রশিক্ষণ নিতে হয়েছে। সাত বছর ধরে শিখতে হয়েছে নানা কৌশল। দেশের পার্বত্য এলাকায় দুর্গম জায়গায় তারা প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। পাহাড়ি অঞ্চলে বিমান উড্ডয়নের প্রশিক্ষণও নিয়েছেন।

দুর্গম কঙ্গো আর বৈরী পরিবেশ একদমই তাদেরকে ভাবাচ্ছে না। এখন তারা যে কোনো প্রতিকূলতা মোকাবিলায় সক্ষম। পরিশ্রম করলে পুরুষের মতো নারীরাও যে এগিয়ে যেতে পারে তারই দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন এ দুই নারী বৈমানিক। পেশাদারিত্বের মধ্যদিয়ে দুনিয়ার বুকে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করার প্রতিশ্রুতি তাদের। এর মধ্য দিয়ে তারা শিখিয়েছেন নারীদের এগিয়ে যাওয়ার মন্ত্র। পাশাপাশি নারীদের উত্সাহিত করতে তাদের এই দুঃসাহসিক যাত্রা। আর এই এগিয়ে চলায় পরিবার থেকে উত্সাহ পেয়েছেন          বলে জানান এ দুই নারী বৈমানিক। ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট নাইমা হকের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার শাহবাজপুরে। বাবা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক ছিলেন, মা গৃহিণী। নাইমা হলিক্রস স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এসএসসি ও এইচএসসি পাস করেন। ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস থেকে বিমান চালনা বিষয়ে বিএসসিতে প্রথম শ্রেণি পেয়ে উত্তীর্ণ হন। দেশ-বিদেশে উড্ডয়নসহ সামরিক নানা প্রশিক্ষণে অংশ নেন তিনি। নাইমা হক বলেন, ইচ্ছা করলেই সবকিছু হবে না বরং ইচ্ছার পাশাপাশি কঠোর পরিশ্রম করলে যে কেউ এ জায়গায় আসতে পারবে। আর সেজন্য যথেষ্ট ধৈর্য থাকতে হবে। আমরা সেভাবেই এসেছি। ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট তামান্না-ই-লুত্ফীর বাড়ি যশোরের বেনাপোল। বাবা বিমান বাহিনীতে চাকরি করতেন। মা গৃহিণী। তামান্না বিএএফ শাহীন কলেজ থেকে এসএসসি ও এইচএসসি পাস করেন। ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস থেকে তিনি বিমান চালনা বিষয়ে প্রথম শ্রেণি পেয়ে বিএসসি উত্তীর্ণ হন। দেশ-বিদেশ থেকে উড্ডয়নসহ সামরিক নানা প্রশিক্ষণে অংশ নেন তিনি। তামান্না-ই-লুত্ফী বলেন, বাবা বিমান বাহিনীর একজন অফিসার ছিলেন। সেখান থেকেই মূলত এদিকের আগ্রহ বা ঝোঁক। পরিবারের সর্বোচ্চ সহযোগিতায় আজকে এ জায়গায় এসেছি। বিমান বাহিনী যথেষ্ট সহযোগী। সমাজ আমাদের (নারী) অনেক সুযোগ দিচ্ছে। বিভিন্ন জায়গায় মেয়েদের জন্য নতুন নতুন দ্বার খুলছে। এখন প্রয়োজন পজিশন তৈরি করা। পরিশ্রম করলে পুরুষের মতো নারীরাও এগিয়ে যেতে পারে।

এদিকে বিমানবাহিনীতে একজন সফল নারী কর্মকর্তা হলেন উইং কমান্ডার লুত্ফুন্নাহার। ২০০০ সালে ছেলে-মেয়ে যৌথ প্রশিক্ষণে অংশ নিয়ে গ্রাউন্ড বাঞ্চ সেরা ক্যাডেট বিবেচিত হয়ে বিমানবাহিনী প্রধানের ট্রপি লাভ করেন লুত্ফুন্নাহার। অপরদিকে স্কোয়াড্রন লিডার ইশরাত জাহান ২০০৫ সালে বিমানবাহিনীতে যোগদান করেন। ইত্তেফাকের সঙ্গে আলাপকালে ইশরাত জাহান বলেন, বিমানবাহিনীতে নারীবান্ধব পরিবেশ বিরাজ করছে। প্রশিক্ষণসহ সর্বক্ষেত্রে নারী-পুরুষ সকলের সম্পর্ক সৌহার্দ্যপূর্ণ। পরিবারের উত্সাহে ইশরাত জাহান বিমানবাহিনীতে আসেন। তার স্বামীও বিমানবাহিনীতে কর্মরত। তারও উত্সাহ ছিল। তিনি বলেন, দুঃসাহসিক চ্যালেঞ্জিং পেশা বিমানবাহিনীতে আগের চেয়ে নারীরা বেশি যোগদান করছে। প্রশিক্ষণকালে রয়েছে নারীবান্ধব পরিবেশ। একে অপরকে সহযোগিতা করে থাকে। নারী-পুরুষের একই ধরনের প্রশিক্ষণ। এ প্রশিক্ষণের মাধ্যমে উভয়ের মধ্যে গড়ে ওঠে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক। প্রশিক্ষকও থাকেন সহানুভূতিশীল। সব জায়গায় সেইফটি থাকায় নারীদের বিমানবাহিনীতে আরো বেশি করে যোগদানের আহ্বান জানান তিনি। মোটকথা নারীরা বিমানবাহিনীতে যোগদান করে দেশের সেবায় চ্যালেঞ্জিং ও দুঃসাহসিক কাজে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করতে উদার ও নিরাপদ কর্তৃপক্ষ পাচ্ছেন।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ