• সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:৩৫ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম:

কোটা কি খুব দরকার?

আপডেটঃ : বৃহস্পতিবার, ২২ মার্চ, ২০১৮

কামরুল হাছান মাসুক

বাস্তব একটা উদাহরণ দিয়ে লেখাটা শুরু করছি। আমার ছোট ভাই ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হয়েছে। তার সঙ্গের ক্লাসমেট গল্পের ছলে বলেছিল, তার কোটা আছে। শুনতে শুনতে পুরো ক্লাস জেনে গেল ছেলেটির কোটা আছে। এখন তাকে সবাই কোটা মানিক বলেই ডাকে। বিষয়টা যতটা না মজার তার চেয়ে অনেক বেশি কষ্টদায়ক। একটা বিষয় যখন খুব বেশি তিক্ত হয়ে যায় তখনই এটাকে গালি হিসেবে ব্যবহার করা হয়। বর্তমানে কোটা নিয়ে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। বেশিরভাগ ছাত্র-ছাত্রীই মনে করে কোটা সিস্টেমটা থাকা উচিত নয়। বর্তমানে অনেক সরকারি অফিস, আদালতেও কে কোটাধারী কে কোটাধারী না তা ভাবা হচ্ছে। কোটাধারীদের কম যোগ্য মনে করা হচ্ছে। এমন অনেকেই আছেন যারা কোটা পরিচয় দিতে লজ্জাবোধ করেন। কোটা সিস্টেমটা একেবারে বাদ হোক তা হয়ত কেউ চাইবে না। তবে কমানো যেতে পারে। একটা দেশের সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে কোটাধারী লোক যদি ৫৫% হয় তাহলে তা সত্যিই দুঃখজনক। কোটা কমিয়ে তা যদি ২০-৩০%-এ কমিয়ে আনা হয় তাহলে আমার মনে হয় কারও কোনো প্রশ্ন থাকবে না। মেয়েদের কোটা আছে ১০%। আজকাল বেশিরভাগ পরীক্ষায় দেখা যায় ছেলেদের চেয়ে মেয়েরা এগিয়ে। ওদের রেজাল্ট ভালো হচ্ছে। এক্ষেত্রে মেয়েদের কোটা যদি ৫% কমিয়ে দেওয়া যায় তাহলে আমার মনে হয় মেয়েদের খুব বেশি ক্ষতি হবে না। এভাবে জেলা কোটাও ৫% কমিয়ে দেওয়া যেতে পারে। বাকি থাকে মুক্তিযোদ্ধা কোটা। এই কোটাই ৩০%। মুক্তিযোদ্ধাদের অবদানের কথা আমরা অস্বীকার করতে পারি না। তাদের জন্যই আমরা এত সুন্দর একটা দেশ পেয়েছি। আমরা স্বাধীনভাবে নিশ্বাস নিতে পারছি। ভবিষ্যত্ প্রজন্মও পারবে। তাদের সুযোগ-সুবিধা আরও বাড়ানো হলে এই দেশের মানুষ কিছু বলবে না। বা বলার থাকবে না। একটা বিষয় হচ্ছে কোটা সুবিধা মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানরা পাচ্ছে। এটাও অস্বীকার করা যায় না যে, মুক্তিযোদ্ধার সন্তানরা পাওয়ার যোগ্য কিনা? দেশের জন্য তাদের বাবা-মা রক্ত দিয়েছে। জীবন দিয়ে দেশ স্বাধীন করেছে। কিন্তু দুঃখজনক হচ্ছে, অনেক প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধারই মুক্তিযুদ্ধের সনদ নেই। আবার অনেক অমুক্তিযোদ্ধার সনদ আছে। মুক্তিযুদ্ধের সনদ নিয়েও বিতর্ক কম নেই। তাই মুক্তিযোদ্ধা কোটা যদি ৩০% থেকে ১০%-এ আনা হয় তাহলে মেধা কোটা কত দাঁড়াচ্ছে একটু হিসেব করুন। মেধা কোটা হচ্ছে ৭৫%। ৭৫% মেধা কোটায় যদি যোগ্য মেধাবীদের নেওয়া হয় তাহলে দেশের সাধারণ জনগণ থেকে কোনো শিক্ষার্থীরই আর কোনো অভিযোগ থাকবে না। আরেকটা বিষয়ও চিন্তা করা যায়। স্বাধীনতার প্রায় ৪৮ বছর হয়ে গেছে। কিছুদিন পরেই আমরা ৫০-এ পা রাখব। ১৯৭১ সালে কোনো মুক্তিযোদ্ধার বয়স যদি ১৩ হয় তাহলে বাংলাদেশের গড় আয়ু অনুযায়ী অনেকেই আছেন যারা পরপারে চলে গেছেন। যারা বেঁচে আছেন তাদের সুযোগ-সুবিধা আরও বাড়ানো হোক। সেনাবাহিনীকে যেমন করে পেনশন সুবিধা দেওয়া হচ্ছে তেমন করে মুক্তিযোদ্ধাদেরও আজীবন পেনশন সুবিধার আওতায় আনা হোক। তাদের অবদান এ জাতি কখনো অস্বীকার করতে পারবে না। যদি কেউ অস্বীকার করে তাহলে তার নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়ার অধিকার রাষ্ট্র রাখে বলে আমার মনে হয়। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের বা নকল মুক্তিযোদ্ধাদের চিরজীবন কোটা সুবিধা দিয়ে রাখলে দেশের মেধাবীদের হেয় করা হয়। পরবর্তী প্রজন্মে আবারও যদি কোনো দিন যুদ্ধ পরিস্থিতি তৈরি হয় তাহলে এই দেশের মেধাবী থেকে শুরু করে আপামর জনতা অবশ্যই দেশের প্রয়োজনে এগিয়ে আসবে।

n লেখক :শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

 


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ