রেলক্রসিংয়ে দুর্ঘটনা বাড়ছেই। কোনোভাবেই এ অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যু ঠেকানো যাচ্ছে না। সারাদেশে অবৈধ ১ হাজার ৭৬১টি রেল ক্রসিং যেন মৃত্যুস্থলে পরিণত হয়েছে। এসব অবৈধ ও অরক্ষিত রেলক্রসিং ট্রেন চলাচলকে ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলেছে। এতে প্রাণ ও সম্পদহানি ঘটছে। অরক্ষিত রেলক্রসিং, অপরিকল্পিত ও অননুমোদিত সংযোগ এবং সচেতনতার অভাবে গত তিন বছরে দুর্ঘটনা ঘটেছে মোট ৮৩৭টি। এতে দেড় শতাধিক মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে।
রেলপথ সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দুর্ঘটনার পেছনে সংশ্লিষ্ট দফতরগুলোর অব্যবস্থাপনাও সমানতালে দায়ী। ঝুঁকিপূর্ণ ক্রসিংগুলোতে রেল কর্তৃপক্ষ ‘সতর্কীকরণ’ সাইনবোর্ড টানিয়ে দেওয়া ছাড়া আর কিছুই করার নেই। সর্বশেষ গতকাল বুধবার ফেনী পৌর শহরের বারাহিপুর এলাকায় ট্রেনের ধাক্কায় কাভার্ডভ্যানের চারজন নিহত হয়েছে। দুর্ঘটনার পর ঢাকা-চট্টগ্রামের লাইনে রেল যোগাযোগ কয়েক ঘন্টা বন্ধ ছিল। এ ঘটনার পর রেলক্রসিং বা রেলগেইটের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ ট্রাক কাভার্ডভ্যান মালিক সমিতি। গতকাল সমিতির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক জরুরি সভায় এ দাবি জানানো হয়। হাজী মো. তোফাজ্জল হোসেন মজুমদারের সভাপতিত্বে সভায় বক্তব্য রাখেন সাধারণ সম্পাদক রুস্তম আলী খান, যুগ্ম সম্পাদক হোসেন আহম্মেদ মজুমদার প্রমুখ।
এ ব্যাপারে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব মোফাজ্জল হোসেন বলেন, অনুমোদিত এবং অনুমোদনহীন রেলক্রসিং প্রায় সমান সমান। তাছাড়া যে পরিমাণ লোকবল প্রয়োজন তা আমাদের নে্ই। তবে অনুমোদনহীন বেশকিছু রেলক্রসিং আমরা বন্ধ করে দিয়েছি। আবার কিছু অনুমোদনহীন রেলক্রসিং অনুমোদন দেয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, রেলক্রসিং সমস্যাটা একটু জটিল। তার পরও রেলক্রসিং উন্নয়ন ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে রেল কর্তৃপক্ষ তিনটি সংস্থার সঙ্গে কাজ করছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সারাদেশে রেল নেটওয়ার্কে মোট ২ হাজার ৫৪১টি লেবেল ক্রসিং আছে। যার মধ্যে অনুমোদিত ক্রসিংয়ের সংখ্যা মাত্র ৭৮০টি। সারাদেশে ৩৭১টি রেলক্রসিংয়ে গেইটম্যান আছেন। ২৫০ জন চুক্তিভিত্তিক নিয়োগপ্রাপ্ত। অনেকে দৈনিকভিত্তিক মজুরিতে কাজ করেন। তাদের প্রশিক্ষণও নেই। পাশাপাশি দীর্ঘদিন থেকে গেইটম্যান নিয়োগ বন্ধ আছে। সম্প্রতি নিয়োগের উদ্যোগ নিলে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগপ্রাপ্তরা মামলা করে তা আটকে দেয়। অপরদিকে দুর্ঘটনার পর রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ তদন্ত কমিটি করে। প্রতিবেদনে দুর্ঘটনার মূল কারণ হিসেবে অবৈধ রেলক্রসিংয়ের কথা উল্লেখ করে দায়সারা প্রতিবেদন দেয়া হয়। অবৈধ রেলক্রসিংয়ের নামে যে মরণফাঁদ তৈরি হয়েছে, সেটির নিরাপত্তা বিধানে কোনো ব্যবস্থাই নেয়া হয় না।
রেলওয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ কোন স্থানে ক্রসিং নির্মাণ করে সেখানে গেইটকিপার নিয়োগ দেয়া হয়। কিন্তু রেল কর্তৃপক্ষকে না জানিয়ে বা অনুমোদন না নিয়ে এলজিইডি, সড়ক ও জনপথ বিভাগ, ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা, সিটি করপোরেশনসহ বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থাও রেললাইনের উপর রেল ক্রসিং নির্মাণ করে থাকে। যা রেলওয়ের আইনে নিষিদ্ধ।
সূত্র জানায়, সমপ্রতি রেলওয়ের পূর্ব ও পশ্চিমাঞ্চলের বেশ কিছু ট্রেনের গতি বাড়ানো হয়েছে। তাতে করে অবৈধ ও অরক্ষিত রেলক্রসিংগুলো আরো বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে। অরক্ষিত ক্রসিংগুলোর আগে ট্রেনের গতি কমানো ছাড়া চালকদের উপায় থাকে না। সাবধানতার পরেও যে কোনো মুহূর্তে দুর্ঘটনা ঘটনার আশঙ্কা থাকে। কিন্তু নির্ধারিত গতিতে ট্রেন চালানোর জন্য চালকদের ক্রমাগত চাপে মধ্যে রাখা হয়। বলা হয়- ডিপার্টমেন্ট যে গতি নির্ধারণ করে দিয়েছে সেই গতিতে চালানোর।