দেশের চিকিত্সা বিজ্ঞানে প্রথম বারের মতো যুক্ত হয়েছে থ্রাম্বোলাইসিস চিকিত্সা পদ্ধতি। গতকাল সোমবার থেকে ব্রেইন স্ট্রোকে আক্রান্ত রোগীদের জন্য প্রাথমিকভাবে রাজধানীর আগারগাঁওয়ের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরো সায়েন্সেস ও হাসপাতাল ৬ শয্যার একটি ইউনিটে এ চিকিত্সা সেবা চালু হয়েছে।
ইউনিটটি উদ্বোধন করেন দিল্লির নিউরোলোজিস্ট অধ্যাপক ডা. এম ভি পদ্মা শ্রীভাসটাভা। এ সময় উপস্থিত ছিলেন হাসপাতালের পরিচালক ও প্রখ্যাত নিউরো বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. দীন মোহাম্মদ, যুগ্ম পরিচালক অধ্যাপক ডা. বদরুল আলমসহ বিশেষজ্ঞ চিকিত্সকরা। সাধারণ মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে দেশের আটটি পুরাতন সরকারি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে এ চিকিত্সা সেবা চালু করার পরিকল্পনা আছে। আক্রান্ত রোগীরা এখন থেকে দেশেই কম খরচে এ চিকিত্সা সেবা পাবেন।
চিকিত্সকরা বলেন, থ্রাম্বোলাইসিস পদ্ধতিতে ব্রেইন স্ট্রোক আক্রান্ত রোগীর ধমনিতে আল্টাপ্লাস নামক একটি ইনজেকশন পুস করা হয়। যা স্ট্রোকের কারণে রোগীর মস্তিষ্কে জমাটবাধা রক্তকে তরল করে রক্ত চলাচল স্বাভাবিক করে। তখন রোগী সুস্থ হয়ে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে। তবে এ পদ্ধতিতে রোগীকে আক্রান্ত হওয়ার চার ঘণ্টার মধ্যে ওষুধ প্রয়োগ করতে হবে। তিন ঘণ্টার মধ্যে প্রয়োগ করতে পারলে সবচেয়ে বেশি কার্যকর ফল পাওয়া সম্ভব। আর এজন্য আক্রান্ত রোগীকে চার ঘণ্টার মধ্যে হাসপাতালে পৌঁছতে হবে। চিকিত্সার পর রোগী এক ঘণ্টার মধ্যে সুস্থ হয়ে স্বাভাবিকভাবে বাড়ি ফিরবে বলে জানান চিকিত্সকরা।
উন্নত বিশ্বে ১৯৯৫ সাল থেকে এ চিকিত্সা পদ্ধতি চালু রয়েছে। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে ২০০০ সালে থ্রাম্বোলাইসিস চিকিত্সা পদ্ধতি চালু হয়। দেশটির রাজধানী দিল্লিতে ২০০২ সাল থেকে থ্রাম্বোলাইসিস চিকিত্সা পদ্ধতিতে চিকিত্সা সেবা দিচ্ছেন দেশটির নিউরো বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. এম ভি পদ্মা শ্রীভাসটাভা। গতকাল রাজধানীর ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরো সায়েন্সেস ও হাসপাতালে তিনি প্রতিবেদকে বলেন, ব্রেইন স্ট্রোক আক্রান্ত রোগীদের জন্য থ্রাম্বোলাইসিস পদ্ধতি একটি কার্যকরি চিকিত্সা। সঠিক সময়ে রোগীকে এ পদ্ধতিতে চিকিত্সা দেওয়া হলে শতভাগ সফল হওয়া সম্ভব। ২০০২ সাল থেকে আমি দিল্লিতে এ পদ্ধতিতে চিকিত্সা দিয়ে আসছি। ৯০ ভাগ সফল হয়েছি। এ পদ্ধতিতে ওষুধের কোন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নাই, সফলতার হার বেশি।
তার এক গবেষণায় দেখা গেছে, শুধু রাজধানী ঢাকায় ব্রেইন স্ট্রোক আক্রান্ত পাঁচ লাখ রোগী রয়েছেন। যার মধ্যে ৮০ শতাংশ রোগী প্যারালাইসিসে ভোগছেন। অন্যদিকে দেশের মোট জনসংখ্যার প্রতি এক হাজার জনের তিন জন স্ট্রোক আক্রান্ত রোগী। ব্রেইন স্ট্রোক আক্রান্ত রোগীর অবস্থা কি দুর্বিষহ তা ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার ছাড়া আর কেউ বোঝে না।
ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরো সায়েন্সেস ও হাসপাতাল এর যুগ্ম পরিচালক নিউরো বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. বদরুল আলম ইত্তেফাককে বলেন, থ্রাম্বোলাইসিস চিকিত্সা পদ্ধতিতে বিশ্বে আলোচিত এবং সফল চিকিত্সা সেবা। এখন থেকে আমাদের দেশের রোগীরা অল্প খরচে এ চিকিত্সা সেবা পাবেন। এ চিকিত্সা পদ্ধতি এখন থেকে আমাদের চিকিত্সা বিজ্ঞানে বিল্পব ঘটাবে। কারণ আমাদের দেশে ব্রেইন স্ট্রোকে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা অনেক বেশি। আক্রান্ত রোগীর ৮০ শতাংশ প্যারালাইসিস আক্রান্ত হয়ে ভোগে। ফলে এখন থেকে আক্রান্ত রোগীকে প্যারালাইসিস হয়ে ভুগতে হবে না বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
আল্টাপ্লাস ওষুধটি জার্মানিতে তৈরি হয়। এরপর সারা বিশ্বে জনপ্রিয়তা পেয়েছে। বাজারজাতকরণের নানা জটিলতায় দেশে ওষুধটি বাজারজাত করতে বিলম্ব হলেও এখন থেকে ওষুধটি খুব সহজে মিলবে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। প্রশাসনের অনুমতি পেয়ে ওষুধটি দেশে আমদানি করছে রেডিয়েন্ট নামক একটি ওষুধ প্রতিষ্ঠান।
প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান মো. নাসের শাহরিয়ার জাহেদী ইত্তেফাককে বলেন, ওষুধটি এখন থেকে দেশে সহজে পাওয়া যাবে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এর দাম পড়ে এক লাখ থেকে দেড় লাখ টাকা। তবে আমাদের দেশের মানুষ যাতে সহজে চিকিত্সা নিতে পারেন সেজন্য ওষুধের দাম মাত্র ৫০ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে, যা পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের চেয়েও কম।