গ্রুপ পর্বের শেষ খেলায় আজ নাইজেরিয়ার মুখোমুখি হবে আর্জেন্টিনা। টুর্নামেন্টে টিকে থাকতে হলে এই ম্যাচে জেতার বিকল্প নেই মেসি বাহিনীর হাতে। তবে নাইজেরিয়ার বিপক্ষে জেতার পরও তাদের তাকিয়ে থাকতে হবে আইসল্যান্ড-ক্রোয়েশিয়া ম্যাচের ফলাফলের দিকে। আর্জেন্টিনা-নাইজেরিয়া ম্যাচ চলাকালে ডি গ্রুপের অন্য খেলায় মুখোমুখি হবে আইসল্যান্ড এবং ক্রোয়েশিয়া। সেই খেলায় ক্রোয়েশিয়া অন্তত ড্র করলে এবং নাইজেরিয়ার বিপক্ষে আর্জেন্টিনা জিতলে দ্বিতীয় রাউন্ডে চলে যাবে নীল-সাদার দলটি।
মেসিরা খেলবেন সেন্ট পিটার্সবার্গ স্টেডিয়ামে। অন্য ম্যাচটি হবে রেস্তাভো এরিনা স্টেডিয়ামে। দুই স্টেডিয়ামের মাঝে দূরত্ব প্রায় দুই হাজার কিলোমিটার। শুধু আর্জেন্টিনার কর্মকর্তারাই নয় দর্শকরাও বার বার টিভির পর্দায় নজর রাখবেন। সমীকরণটা এরকম- আইসল্যান্ডের বিপক্ষে ক্রোয়েশিয়া জিতলে আর্জেন্টিনা-নাইজেরিয়ার ম্যাচে যারা জিতবে তারাই শেষ ষোল’র টিকিট পাবে। আর্জেন্টিনা জিতলে তাদের পয়েন্ট হবে ৪, নাইজেরিয়া জিতলে তাদের পয়েন্ট হবে ৬। আর আইসল্যান্ড আটকে থাকবে মাত্র ১ পয়েন্টে। আর্জেন্টিনা-নাইজেরিয়া ম্যাচটি ড্র হলেও ছিটকে পড়বে আর্জেন্টিনা। সেক্ষেত্রে নাইজেরিয়া ৪ পয়েন্ট নিয়ে গ্রুপ রানার্স আপ হবে। আর্জেন্টিনার পয়েন্ট হবে ১ এবং আইসল্যান্ড ১। অর্থাৎ নাইজেরিয়ার বিপক্ষে জেতার কোন বিকল্প নেই আর্জেন্টিনার হাতে।
অন্যদিকে ক্রোয়েশিয়া-আইসল্যান্ড ড্র করলে, একইভাবে আর্জেন্টিনার বিপক্ষে নাইজেরিয়া অন্তত ড্র করলেও দ্বিতীয় রাউন্ডে উঠবে আফ্রিকান দলটি। সেক্ষেত্রে নাইজেরিয়ার পয়েন্ট হবে চার, আর্জেন্টিনার ২ এবং আইসল্যান্ডের ২। আর্জেন্টিনা জিতলে তাদের পয়েন্ট হবে ৪, নাইজেরিয়া জিতলে তাদের পয়েন্ট হবে ৬। অর্থাৎ নাইজেরিয়া-আর্জেন্টিনার মধ্যে যারা জিতবে তারাই শেষ ষোল’র টিকিট পাবে।
আর কোনভাবে আর্জেন্টিনা এবং আইসল্যান্ড দুই দলই যদি জয় পায় তাহলে গোল ব্যবধানে যারা এগিয়ে থাকবে তারা হবে ক্রোয়েশিয়ার সঙ্গী। গোল ব্যবধানে যদিও এখন পর্যন্ত আর্জেন্টিনার থেকে এগিয়ে রয়েছে আইসল্যান্ড।
বিশ্বকাপ ফুটবলের গ্রুপ পর্ব হতে এর আগেও বাদ পড়ার অভিজ্ঞতা রয়েছে আর্জেন্টিনার। ১৯৩৪, ১৯৫৮, ১৯৬২, ১৯৭৪ এবং ২০০২ বিশ্বকাপ ফুটবলের গ্রুপে থামতে হয়েছিল ম্যারাডোনা, মেসিদের পূর্বসূরিদের। কিন্তু এবার বিশ্বকাপ চলাকালে দলের মধ্যে এমন বিশৃঙ্খলা, কোচ এবং খেলোয়াড়দের মধ্যে আভ্যন্তরীণ কোন্দল দাবানলের মত ফুটবল দুনিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে। আর্জেন্টিনার ফুটবল নিয়ে সমালোচনা হচ্ছে ফিফা থেকে শুরু করে ব্রাজিল, জার্মানি শিবিরেও কানাকানি। অন্য দলগুলোর খেলোয়াড়রাও আর্জেন্টিনার ক্যাম্পের খবর নিতে নাক লম্বা করছেন। কান পেতে রেখেছেন।
রাশিয়ায় মস্কোর আর্জেন্টিনার বেস ক্যাম্পের দিকে সবার নজর। পরশু পর্যন্ত রাশিয়ায় আর্জেন্টিনার সমর্থকরা পথে-ঘাটে টু শব্দটি পর্যন্ত করেননি। নীরবে চলাফেরা করেছেন। আর ব্রাজিলের সমর্থকরা তাদের দেখে পথে ঘাটে নানা কটাক্ষ করেছেন।
মেসিদের ঘরে বাইরে কঠিন সময় যাচ্ছে। গত বিশ্বকাপের ফাইনালে খেলা একটা দলের ভেতরে এমন বিশৃঙ্খলা আর নিজেদের যুদ্ধংদেহী মনোভাব বিশ্বকাপের ইমেজে লেগেছে। ফিফা চায় সব কিছু উতরে স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে ফিরে আসুক। আর মেসিরা চায় আজ নাইজেরিয়াকে হারিয়ে নতুন করে শুরু করতে।
বিশ্বকাপে নাইজেরিয়ার বিপক্ষে আর্জেন্টিনা ৩ বার খেলেছে। কোনো দিনও হারেনি। ৯৪ বিশ্বকাপে জিতেছে। ২০০২ বিশ্বকাপেও জিতেছে। ২০১৪ বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনা ও নাইজেরিয়া একই গ্রুপে খেললেও আর্জেন্টিনা জিতেছিল। অন্যদিকে নাইজেরিয়া নাকি জয় ছাড়া অন্য কিছু ভাবছে না। নাইজেরিয়া হতে ১৭ হাজার দর্শক এখন সেন্ট পিটার্সবার্গর শহরে। তারা মুখিয়ে আছে নতুন ইতিহাস গড়ার।