‘আগে রাজনীতি নেশা ছিল আর এখন পেশা হয়েছে’ মন্তব্য করেছেন সংসদে বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ। তিনি বলেন, ‘এখন যদি শোনে পাত্র সরকারি দল করে, তাহলে কয় আলহামদুলিল্লাহ। এর চেয়ে ভালো পাত্র আর হয় না।’
রবিবার জাতীয় সংসদ সংসদের সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে ১৪৭ বিধিতে উত্থাপন করা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রস্তাবের আলোচনায় অংশ নিয়ে এসব কথা বলেন তিনি। জাতীয় সংসদের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে গত শুক্রবার জাতীয় সংসদে স্মারক বক্তব্য দেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।
কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, জীবনকে রাতারাতি বদলে দেওয়ার একমাত্র পন্থা হচ্ছে রাজনীতি। এখন এটা পেশা হয়ে দাঁড়িয়েছে। আগে রাজনীতি নেশা ছিল, জীবনকে বাজি রেখে রাজনীতি করত। এখন সেই নেশা নেই। এটা সবচেয়ে বড় পেশা। পাকিস্তান আমলে দেখা যেত পাত্র যদি রাজনীতি করে তাহলে বিয়ে দিত না। কারণ সে কোনো চাকরি পাবে না, তাহলে সে খাওয়াবে কী? খাওয়াতে হলে পত্রিকা অফিসে চাকরি করতে হবে, নাহলে বটতলার উকিল হতে হবে, না হয় মুদি দোকানদার হতে হবে অথবা এজিবির কেরানিগিরি। কার কাছে মেয়ে দেবে? কিন্তু এখন যদি শোনে পাত্র সরকারি দল করে, তাহলে কয় আলহামদুলিল্লাহ। এর চেয়ে ভালো পাত্র আর হয় না। কারণ সে কিছু করতে পারবে।
সংসদের অনেক অর্জনের সঙ্গে দুর্বলতাও আছে বলে দাবি করেন ফিরোজ রশীদ। তিনি বলেন, আজ পর্যন্ত একটা কমিশন (বঙ্গবন্ধু হত্যা) গঠন করতে পারছেন না। কারা জড়িত ছিল এই জাতি যদি জানতে না পারে, তাহলে ইতিহাসের ভগ্নাংশ রেখে লাভ নাই। কারণ বঙ্গবন্ধুকে মারা ছিল বিশাল ষড়যন্ত্রের কাজ। ডালিম, ফারুক, রশিদ গিয়ে করল, তা নয়। এর পেছনে ষড়যন্ত্র ছিল, তা আপনারা বের করলেন না।
ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন ও জাসদের (একাংশ) সভাপতি হাসানুল হক ইনুর দিকে ইঙ্গিত করে জাপার এ সংসদ সদস্য বলেন, চরম বামপন্থী, চরম দক্ষিণপন্থী তাদের নাম উচ্চারণ করা যাবে না। কারণ সমস্ত নৌকায় উঠে চলে গেছে। নৌকাতো আপনারা বাইবেন। নৌকার পাইলট আপনারা। তারা উঠে বসে আছেন। কয় মাঝি আর কতদূর? পার হতে কতদূর। নির্বাচনের আর ৯ মাস আছে। এরপরই পার করে দিব। তারপর পাঁচ বছরের জন্য আপনারা নিশ্চিন্ত। তারা নৌকায় উঠে বসে গেছে। এতেইতো অবস্থা আওয়ামী লীগের।
ফিরোজ রশীদ বলেন, জাতি এখন দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে গেছে। নিরপেক্ষ কোনো মানুষ নেই। শিক্ষক, ডাক্তার, বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিক সবাই বিভক্ত। পুরো দেশই এখন দুই ভাগে বিভক্ত। এ আমলে বিএনপির ব্যবসায়ীরা সবচেয়ে বেশি ব্যবসা পেয়েছে বলেও দাবি করেন তিনি। বলেন, আওয়ামী লীগ ব্যবসা নেয়। আর পিছে থাকে বড় বড় বিএনপি।
মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার চেতনার বিরুদ্ধে যারা কথা বলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য একটি নতুন আইন করার প্রস্তাব দেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। বিএনপিকে উদ্দেশে তিনি বলেন, সংসদ অকার্যকর করার জন্য গত দুটি নির্বাচন তারা প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা করেছিল। তারা শুধু ষড়যন্ত্রই করছে না তারা দেশি বিদেশি চক্রান্তকারীদের মুখপাত্র হিসেবে কাজ করছে। মিথ্যাচার, ইতিহাস বিকৃতি, স্বাধীনতার বিরুদ্ধাচারণকারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ না থাকলে রাষ্ট্র হুমকির মুখে পড়তে পারে বলে তিনি মনে করেন।