তুরস্কের রাজনীতিতে টানা দুই দশক আধিপত্য ধরে রেখেছেন প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান। তিনি আরও পাঁচ বছর ক্ষমতায় থাকার প্রত্যাশায় এবারের নির্বাচনে লড়ছেন। তবে এবার নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়াটা তার জন্য বেশ কঠিন হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তুরস্কে আজ প্রেসিডেন্ট ও পার্লামেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। বিবিসি জানায়, মূলত প্রধান দুই প্রার্থীর মধ্যেই তীব্র লড়াই জমে উঠবে বলে মনে করা হচ্ছে। কোনো প্রার্থী ভোটারদের ৫০ শতাংশের বেশি ভোট না পেলে দুই সপ্তাহ পর দ্বিতীয় রাউন্ডের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। আর রোববারের নির্বাচনে কেউ যদি অর্ধেকের বেশি ভোট পান, তাহলে তিনিই সরাসরি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হবেন।
এরদোয়ানের জন্য বড় ধরনের মাথাব্যথার কারণ হয়ে উঠেছেন বিরোধী জোটের প্রার্থী কেমাল কুলুচদারুলু। তিনি ছয়টি বিরোধী দল নিয়ে গঠিত জোট টেবিল এবং সিক্সের’ প্রতিনিধিত্ব করছেন। আরও কিছু সরকারবিরোধী গ্রুপও কুলুচদারুলুর প্রতি সমর্থনের কথা ঘোষণা করেছে। আল-জাজিরা জানায়, তুরস্কে চলমান গভীর অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে এবারের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
এরদোয়ানের আমলে এই মুদ্রাস্ফীতি, জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধিতে জেরবার ভোটাররা তাদের ক্ষোভ ভোটের মাধ্যমে তুলে ধরতে পারেন। এ ছাড়া গত ফেব্রুয়ারিতে তুরস্কের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে ভয়াবহ ভূমিকম্পের রেশ এবারের নির্বাচনে বড় প্রভাব ফেলবে। ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ আর প্রায় ৫০ হাজার মানুষের প্রাণ কেড়ে নেয়া ওই ভূমিকম্পে এরদোয়ান সরকারের তৎপরতা আর ব্যর্থতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে বহু মানুষ। ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত আনতাকিয়ার ২৯ বছর বয়সী বাসিন্দা ফুরকান ওজবিলজিন। তিনি মনে করেন, এরদোয়ানের দুর্বল নীতির কারণে কনট্রাক্টররা দুর্বল ভবন নির্মাণ করার সুযোগ পেয়েছে। এ কারণে ভূমিকম্পে এসব ভবন সহজেই ধসে পড়ে হাজার হাজার মানুষ নিহত হয়েছেন।
এবার তুরস্কের নির্বাচনে যারা ভোট দিচ্ছেন, তাদের আট শতাংশ নতুন ভোটার। অনেকে মনে করেন, তুরস্কে যেসব গ্রুপ এখনো মনস্থির করেনি যে, তারা কাকে ভোট দেবে, তাদের মধ্যে এই ফার্স্ট-টাইম ভোটার গ্রুপটি সবচেয়ে বড়। তবে ২০ বছর বয়সী তুর্কি তরুণ সালিহ কাকে ভোট দেবেন সেটা তার কাছে পরিষ্কার। বিবিসিকে তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি এরদোয়ান একজন ক্যারিশম্যাটিক নেতা। তুরস্কের রাজনীতিতে এ ধরনের ক্যারিশমা থাকা গুরুত্বপূর্ণ।’ তিনি বিশ্বাস করেন, এরদোয়ান তার শাসনামলের বিভিন্ন অর্জনের ওপর ভিত্তি করে তুরস্কের ভবিষ্যৎ গড়ে তুলতে পারবেন।
অন্যদিকে বিরোধী প্রার্থী কুলুচদারুলু তরুণ ভোটারদের মনোযোগ আকৃষ্ট করার চেষ্টা করছেন। এরদোয়ান নির্বাচনী প্রচারণায় জোর দিয়েছেন প্রতিরক্ষা ও প্রযুক্তি খাতের অগ্রগতির ওপর। অপরদিকে কুলুচদারুলু আরও বেশি স্বাধীনতা ও উন্নত কর্মসংস্থানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
এবারের নির্বাচনে নারী ভোটাররা কাকে ভোট দেবেন সেটাও জয়-পরাজয় নির্ধারণে বড় ধরনের ভূমিকা রাখবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তুরস্কে মোট ভোটারের ৫০.৬% নারী। ধারণা করা হয় যে, দেশটির রক্ষণশীল নারীরা দুই দশক আগে মি. এরদোয়ানকে ভোট দিয়েছিলেন, যে কারণে তিনি ক্ষমতায় আসতে পেরেছিলেন। কিন্তু সেই সমর্থন এখন দুর্বল হয়ে পড়েছে। পারিবারিক নির্যাতনের হাত থেকে নারীকে রক্ষা করার জন্য যে আন্তর্জাতিক চুক্তি হয়েছিল, সেই ইস্তাম্বুল সনদে তুরস্ক সই করেনি। এ কারণে তিনি বহু নারীর সমর্থন হারিয়েছেন।