বাণিজ্য ও বিনিয়োগের সার্বিক বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে একটি প্রতিনিধি দল নিয়ে ঢাকায় আসছেন ইউনাইটেড স্টেটস ট্রেড রিপ্রেজেন্টেটিভের (ইউএসটিআর) দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক ভারপ্রাপ্ত অ্যাসিসটেন্ট সেক্রেটারি ব্রেনডেন লিঞ্চ। চলতি মাসের ২০ মে থেকে ব্রেনডেন প্রতিনিধি দল নিয়ে চার দিন ঢাকায় অবস্থান করবেন।
কূটনৈতিক ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সূত্র থেকে এসব তথ্য মিলেছে। ঢাকার একটি কূটনৈতিক সূত্র জানায়, আগামী ২০ মে ঢাকায় আসবেন ইউএসটিআরের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক ভারপ্রাপ্ত অ্যাসিসটেন্ট সেক্রেটারি। তিনি সঙ্গে করে ছয় থেকে সাত জনের মতো প্রতিনিধি নিয়ে আসবেন। বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সংক্রান্ত মন্ত্রণালয় ছাড়াও বাংলাদেশ সরকারের কয়েকটি মন্ত্রণালয়ের গুরত্বপূর্ণ কর্মকর্তা ও মন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠকে বসবেন ব্রেনডেন। তার মূল বৈঠক হবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে। সেই বৈঠক হবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের জ্যৈষ্ঠ সচিব তপন কান্তি ঘোষের সঙ্গে।
বাণিজ্য সচিবের সঙ্গে ব্রেনডেনের আলোচনার বিষয়ে কূটনৈতিক সূত্রগুলো ইঙ্গিত দিচ্ছে, বাণিজ্য ও বিনিয়োগের সার্বিক বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে। শ্রম অধিকার বাস্তবায়নে বেশ কয়েক বছর ধরেই বাংলাদেশকে তাগিদ দিচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। তারই ধারাবাহিকতায় ওয়াশিংটনের পক্ষ থেকে শ্রম আইনের আন্তর্জাতিক মান নিশ্চিতের বিষয়ে জোর দেওয়া হবে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশের চেষ্টা থাকবে শ্রম আইনের মানের ক্ষেত্রে যেসব অগ্রগতি হয়েছে, সেগুলো তুলে ধরা।
যুক্তরাষ্ট্র থেকে তুলা আমদানি বাড়ানোর বিষয়ে আলোচনা করতে চাইবে বাংলাদেশ। এক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করা তুলা দিয়ে প্রস্তুত করা পোশাকের শুল্কমুক্ত বাজার সুবিধা চাওয়া হবে। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগ ও কৃষি ক্ষেত্রে সহযোগিতা নিয়েও আলোচনা হবে। আর প্রতিবারের মতো এবারের বৈঠকেও যুক্তরাষ্ট্রকে পুনরায় জিএসপি সুবিধা ফিরিয়ে দিতে আহ্বান জানানো হবে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, সামনে বাংলাদেশে নির্বাচন। যার কারণে সরকারের পরিকল্পনা হচ্ছে, জুন-জুলাইয়ের মধ্যে সব আলোচনা শেষ করা। আমাদের দিক থেকে কিছু এনগেজমেন্ট আছে, তাদের দিক থেকেও। একে একে সবই হয়ে যাবে।
মন্ত্রণালয়ের এ কর্মকর্তা বলেন, সম্প্রতি ওয়াশিংটনে অংশীদারিত্ব সংলাপ করেছে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্র। সংলাপে শ্রম ইস্যুতে আলোচনা ছিল। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে এ খাতের অগ্রগতি তুলে ধরা হয়। তাদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে শ্রম খাতের পরিস্থিতি সরেজমিনে দেখে যেতে। প্রতিনিধি দলের মূল এনগেজমেন্ট হবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে।
জানা গেছে, ঢাকা সফরকালে ব্রেনডেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ছাড়াও শ্রম, শিল্প, ডাক ও টেলিযোগাযোগ, কৃষি মন্ত্রণালয়ের জ্যৈষ্ঠ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করবেন। এছাড়া তিনি প্রতিনিধি দল নিয়ে ব্যবসায়িদের শীর্ষ সংগঠন ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বারস অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ড্রাস্ট্রিজ (এফবিসিসিআই), তৈরি পোশাক মালিকদের সংগঠন (বিজিএমইএ) এবং ট্রেড ইউনিয়নের কর্তাব্যক্তিদের সঙ্গেও বসবেন।
কূটনৈতিক অন্য একটি সূত্র বলছে, স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকায় থাকার কারণে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার কাছে থেকে মেধাস্বত্ব ছাড়ের সুবিধা পাচ্ছে। তবে তালিকা থেকে উত্তরণ হয়ে গেলে এ সুবিধা আর মিলবে না। ব্রেনডেনের সফরে মেধাস্বত্ব আইন নিয়ে উভয়পক্ষের মধ্যে আলোচনা হবে। ইতোমধ্যে ওয়াশিংটনের পক্ষ থেকে ঢাকাকে বিষয়টি জানানো হয়েছে। আলোচনায় ঢাকার পক্ষ থেকে এলডিসি তালিকা থেকে বাংলাদেশের বের হয়ে যাওয়ার পরও আরও কিছু দিনের জন্য মেধাস্বত্ব ছাড়ের সুবিধার বিষয়ে অনুরোধ করা হবে।
ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস বাংলাদেশে মার্কিন বিনিয়োগ নিয়ে বিভিন্ন সময়ে কথা বলে আসছেন। রাষ্ট্রদূত বরাবরই যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগকারীদের বরাত দিয়ে বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োকারীদের জন্য বাংলাদেশ আকর্ষণীয় গন্তব্য। তবে এখানে কিছু বাধা আছে, সেগুলো দূর করতে না পারলে বিনিয়োগকারীরা অন্যত্র চলে যাবে।
চলতি বছরের মার্চের শেষের দিকে একটি অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রদূত পিটার বলেছিলেন, বাংলাদেশের অনেক সুযোগ-সুবিধা আছে, যা বিনিয়োগকারীদের জন্য আকর্ষণীয়। আমাকে আমেরিকান ব্যবসায়ী নেতারা বলেছেন যে, মাল্টিন্যাশনাল ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর অনেক জায়গাতেই বিনিয়োগ করার সুযোগ আছে। বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশের বাজারে দুর্নীতি কমানোর বিষয়ে আশ্বস্ত করতে পারলে এখানে বিনিয়োগ বাড়বে।
রাষ্ট্রদূত বলেছিলেন, যে দেশে দুর্নীতির সবচেয়ে কম, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা কম, আইনের শাসনের প্রতি সর্বোচ্চ সম্মান দেখানো হয় এবং ব্যবসার জন্য সর্বোচ্চ লজিস্টিক অবকাঠামো আছে, বিনিয়োগের জন্য এমন কোনো দেশ তারা বেছে নেবে।
উল্লেখ্য, ভারপ্রাপ্ত অ্যাসিসটেন্ট সেক্রেটারি ব্রেনডেন লিঞ্চ যুক্তরাষ্ট্র-ভারত ট্রেড পলিসি ফোরাম (টিপিএফ) পরিচালনার পাশাপাশি বাণিজ্য ও বিনিয়োগ ফ্রেমওয়ার্ক চুক্তির অধীনে কার্যকলাপের সমন্বয়সহ এ অঞ্চলের ১৫টি দেশের ক্ষেত্রে মার্কিন বাণিজ্য নীতির উন্নয়ন ও বাস্তবায়নের তদারকি করেন।
এর আগে ব্রেনডেন দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়ার উপ-সহকারী মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধি ছিলেন। তিনি এ অঞ্চলে কৃষি, উৎপাদন, পরিষেবা এবং মেধাস্বত্ব অধিকারসহ বিভিন্ন সেক্টরের আলোচনা পরিচালনা করেছেন।