রাশিয়া, চীন, সিঙ্গাপুর, ভারত ও থাইল্যান্ড এই পাঁচ দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান গত দুই বছরে মিয়ানমারে অন্তত ১০০ কোটি মার্কিন ডলারের অস্ত্র ও সরঞ্জাম রপ্তানি করেছে। বুধবার জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞ প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে র পর মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর কাছে ওই অস্ত্র বিক্রিকে ‘মৃত্যু বাণিজ্য’ হিসেবে অভিহিত করেছেন মিয়ানমারের মানবাধিকার পরিস্থিতিবিষয়ক জাতিসংঘের স্পেশাল র্যাপোর্টিয়ার টম অ্যান্ড্রুজ। প্রতিবেদন অনুসারে, মিয়ানমারের কেনা অধিকাংশ অস্ত্রই এসেছে রাশিয়া, চীন এবং সিঙ্গাপুরভিত্তিক প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে।
অ্যান্ড্রুজ বলেন, মিয়ানমারের জনগণের বিরুদ্ধে দেশটির সামরিক বাহিনীর নৃশংস অপরাধের প্রমাণ থাকার পরও জেনারেলরা উন্নত অস্ত্র, যুদ্ধবিমানের খুচরা যন্ত্রাংশ, কাঁচামাল ও দেশীয় অস্ত্র উৎপাদনের সরঞ্জাম পাচ্ছেন। বিদ্যমান নিষেধাজ্ঞার কার্যকর বাস্তবায়ন না থাকায় সহজেই এসব রপ্তানি সম্ভব হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মিয়ানমারে অভ্যুত্থানের পর জান্তাকে রাশিয়া ৪০ কোটি মার্কিন ডলারের এবং চীন ২৬ কোটি মার্কিন ডলারের অস্ত্র সরবরাহ করেছে। অস্ত্র সরবরাহ করা প্রতিষ্ঠানগুলোর বেশির ভাগই রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন। এছাড়া সিঙ্গাপুরের কয়েক ডজন সংস্থা থেকে ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে গত ডিসেম্বর পর্যন্ত মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীকে ২৫ কোটি ৪০ লাখ ডলারের অস্ত্র সরবরাহ করেছে। অস্ত্র ব্যবসায়ী সিঙ্গাপুরের ব্যাংকিং নেটওয়ার্ক ব্যাপকভাবে ব্যবহার করেছে।
প্রতিবেদনে আর ও বলা হয়েছে, থাইল্যান্ডভিত্তিক প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে মিয়ানমার বাহিনীকে দুই কোটি ৮০ লাখ মার্কিন ডলারের অস্ত্র সরবরাহের তথ্য পাওয়া গেছে। ভারতভিত্তিক প্রতিষ্ঠানগুলো মিয়ানমারের জান্তাকে পাঁচ কোটি ১০ লাখ ডলারের অস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জাম সরবরাহ করেছে।
জাতিসংঘের বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, যে বৈচিত্র্যময় এবং যে পরিমাণ অস্ত্র মিয়ানমারের জান্তাবাহিনীকে সরবরাহ করা হয়েছে তা এক কথায় আশ্চর্যজনক। এসব অস্ত্রের মধ্যে ড্রোন থেকে শুরু করে যুদ্ধবিমান এবং যোগাযোগ উপকরণ থেকে শুরু করে নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজ সবই রয়েছে।
মিয়ানমারে সামরিকবাহিনীর অভ্যুত্থানের পর ব্যাপক সংকটের সূত্রপাত হয়। দেশটির জান্তাবিরোধী রাজনীতিবিদ থেকে শুরু করে সাধারণ জনগণ বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। সরকার কঠোরভাবে এসব বিক্ষোভ-আন্দোলন দমন করে। যা আবার দেশজুড়ে সশস্ত্র বিদ্রোহকে উসকে দেয়। দেশের বিভিন্ন সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী জোট বেধে গঠন করে পিপলস ডিফেন্স ফোর্সেস (পিডিএফ) গঠন করে।
উল্লেখ্য, বর্তমানে পিডিএফ জান্তাবাহিনীর হাতে উৎখাত হওয়া বিরোধী রাজনীতিবিদদের সমন্বয়ে গঠিত পাল্টা জাতীয় ঐক্যের সরকারের ছত্রছায়ায় থেকে সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করে যাচ্ছে।সূত্র: আলজাজিরা, ওয়াশিংটন পোস্ট