• রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:৫২ অপরাহ্ন

ঢাবির চার শিক্ষার্থীকে পিটিয়ে হলছাড়া করার অভিযোগ ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে

নিউজ ডেস্ক
আপডেটঃ : বুধবার, ২৪ মে, ২০২৩

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চার শিক্ষার্থীকে টানা পাঁচঘন্টা মারধরের পর মিথ্যা অপবাদ দিয়ে হলছাড়া করার অভিযোগ উঠেছে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে। মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টার দা সূর্য সেন হলে নির্যাতনের এই ঘটনা ঘটে। হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সিয়ামুর রহমানের কক্ষে বিকাল ৩টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত পেটানোর পর ওই চার শিক্ষার্থীকে জোর করে ‘মুচলেকা’ নিয়ে হল থেকে বের করে দেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।
অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতারা হলেন- হল শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি হামিদ কারজাই, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক তৌহিদ জামান অভি, আব্দুল আহাদ, আপ্যায়ন সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম নীরব ও উপ-আইন সম্পাদক মুহাম্মদ তালহা। সাধারণ সম্পাদক সিয়ামের নেতৃত্বে নির্যাতনের ঘটনা ঘটে বলে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা জানান। আহত চারজন শিক্ষার্থী হলেন- ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের ২০১৬-১৭ সেশনের শিক্ষার্থী আলম বাদশা, একই বিভাগের ২০১৭-১৮ সেশনের শিক্ষার্থী লুৎফুর রহমান, মনোবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৮-১৯ সেশনের আল আমীন ও একই সেশনের আরবি বিভাগের শিক্ষার্থী আশিকুর রহমান।

মারধরের পর ভুক্তভোগীরা রাতেই ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (ঢামেক) থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন। ভয় ও আতঙ্কে গতকাল রাত থেকে হলের বাইরে অবস্থান করছেন চারজনই। আজ বুধবার বিকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিক সমিতির কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে ঘটনার বিস্তারিত বর্ণনা দেন ভুক্তভোগীরা। সংবাদ সম্মেলনে আলম বাদশাহ জানান, হলের ৫০৪ নম্বর কক্ষে আমরা চারজনসহ সর্বমোট ছয়জন শিক্ষার্থী থাকতাম। এরমধ্যে ২০১৩-১৪ সেশনের নাট্যকলা বিভাগের সুমন আহমেদ ছাত্রত্ব শেষ হয়ে যাওয়ার পরেও দীর্ঘদিন ধরে রুমে অবস্থান করে আসছিলেন। রুমের অন্যান্য শিক্ষার্থীদের সাথে বিরুপ আচরণ করে আসছেন।

তার এই মানসিক নিপীড়নের ধারাবাহিকতায় সে মাঝেমধ্যে শারীরিকভাবে মারতে উদ্যত হয়েছেন বেশ কয়েকবার।
গত শনিবার (২০ মে) সুমন আহমেদসহ আমাদের মধ্যে রুম গুছানো নিয়ে কথা হচ্ছিল। সবাই তাকে রুমে তার জিনিস ও বইপত্র অন্যান্যদের মত গুছিয়ে রাখতে অনুরোধ করলে সে রাগান্বিত হয়ে গালিগালাজ করে। এক পর্যায়ে ক্রিকেট স্টাম্প নিয়ে মারতে তেড়ে আসে রুমের অন্যদের। পরবর্তীতে একই দিনে রাত আনুমানিক দেড়টার সময় উনি রুমে জুনিয়র এনে সবাইকে গালিগালাজ ও রুম থেকে বের করে দেয়ার হুমকি দেয়।

এ বিষয়ে আমাদের বিরুদ্ধে সিয়াম ভাইকে (হল ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক) মিথ্যা অভিযোগ দেয়ার পর গতকাল বিকেলে অভিযুক্ত আহাদ আমাদের ফোন দিয়ে ৪৫০ নং কক্ষে নিয়ে যান যেখানে সিয়াম রহমান থাকেন। সেখানে গেলে দেখতে পাই সিয়াম রহমান এবং সুমন আহমেদ ও অন্যান্যরা আগে থেকেই লাঠিসোঁটা নিয়ে অবস্থান করছিলেন। আমরা রুমে প্রবেশ করার সাথে সাথে আমাদের মোবাইল কেড়ে নিয়ে চেক করতে থাকে। মোবাইলে আশানুরূপ কিছু না পেয়ে সিয়াম ভাই ও বাকিরা আমাদের উপর্যপুরি কিল, ঘুষি ও লাথি দেয়া শুরু করে। আমাদের সবাইকে তিন থেকে চার ঘণ্টা ধরে শারীরিকভাবে নির্যাতন করে। একপর্যায়ে আমাদের স্ট্যাম্প দিয়ে পিঠে এবং পায়ে প্রচণ্ড আঘাত করা হয়। ফলে আমরা সবাই অসুস্থ হয়ে পড়ি।

তিনি বলেন, এক দফা মারার পরে বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে পাশের আরেকটি কক্ষে নিয়ে গিয়ে সিয়াম রহমান আমাদের কাছ থেকে জোরপূর্বক মুচলেকা নেন। সেখানে লিখতে বাধ্য করেন যে, আমরা বর্তমানে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সঙ্গে সম্পৃক্ত নই। আমরা রুমের বড় ভাইকে অন্যায়ভাবে বের করে দিয়েছি এবং সরকারের উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে একমত নই। আমার এরকম পোস্ট হলের বড় ভাইরা জানার পর হল থেকে বের করে দেন। এছাড়া আমি নাকি সজ্ঞানে হল থেকে বের হয়ে যাচ্ছি। মুচলেকা নেয়া শেষে রাত ৮টার পর তারা আমাদের ছেড়ে দেন। এরপর থেকে আমরা হলের বাইরেই অবস্থান করছি।

এ বিষয়ে আজ হল প্রাধ্যক্ষ বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন বাদশাহ। লিখিত অভিযোগ পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে ইতিমধ্যে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করার কথা জানান সূর্য সেন হলের প্রভোস্ট প্রফেসর ড. জাকির হোসেন ভুঁইয়া। অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে সিয়াম রহমান বলেন, ছাত্রলীগের নাম করে জোরপূর্বক একজনকে বের করে দিতে চাইলে আমি তাদের রুমে ডেকে কথা বলি। কেন ছাত্রলীগের নাম ব্যাবহার করে তারা একজনকে বের করে দিচ্ছেন এবং বিভিন্ন সময় হলে মেহমান নিয়ে আসার বিষয়ে জানতে চাই। পরে তাদের ফেসবুকে পদ্মা সেতু নিয়ে ব্যঙ্গ করা একটি পোস্ট দেখা যায়। এ কারণে তাদের ভয় দেখানোর জন্য শুধুমাত্র একটি চড় মেরেছি তার গালে। এর বাইরে আর কেউ হাত তুলেনি।

জোরপূর্বক মুচলেকার বিষয়ে তিনি বলেন, তাদের আমি নিজেই হলে তুলেছি। তাদের মধ্যে তিনজন পদ্মা সেতু নিয়ে ব্যঙ্গ করার কারণে নিজ থেকেই হল থেকে বের হয়ে যাওয়ার কথা বলেন। যাতে পুলিশি ঝামেলা বা কোনো ধরনের মারধরের শিকার হতে না হয়। পরে স্বেচ্ছায় তারা লিখিত দেন এই বলে যে, তাদের আমরা বের করে দেইনি। কিন্তু এখন তারা আমাদের নামে প্রোপাগান্ডা চালাচ্ছেন। বাকি অভিযুক্তদের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য ফোন করা হলেও তারা ফোন ধরেননি।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ