ভারতের মনিপুর রাজ্যে সহিংসতা থামছে না। কিছু দিন পর পর সংঘাতে জড়িয়ে পড়ছে সেখানকার বিভিন্ন জাতি ও গোষ্ঠী। কিছুতেই নিভছে না জাতিগত দাঙ্গার আগুন। বিষয়টি আরও মারাত্মক আকার ধারণ করেছে যখন বিভিন্ন পাহাড়ি গোষ্ঠী এতে উস্কানি দেওয়া শুরু করেছে। এমন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এবার অভিযান শুরু করেছে ভারতের আসাম রাইফেলস ও সেনাবাহিনী।
দেশটির গণমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, সংঘাতের কেন্দ্রবিন্দু ও ইম্ফল উপত্যকা ঘিরে রাখা পাহাড়গুলোতে অভিযান শুরু করেছে ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনী। গভীর জঙ্গলে আত্মগোপন করে থাকা কুকি ও নাগা সশস্ত্র বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনগুলোর বিরুদ্ধেই এই অভিযান।
সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্র বলছে, জাতি দাঙ্গায় ইন্ধন জোগাচ্ছে ইউনাইটেড পিপলস ফ্রন্ট ও কুকি ন্যাশনাল অর্গানাইজেশনের মতো বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনগুলো। পাহাড়ে মেতেইদের ওপর হামলা চালাচ্ছে তারা। আজ শনিবার থেকেই সেনাপতি জেলার মতবুং, সদর হিল অটোনোমাস ডিস্ট্রিক্ট কাউন্সিলের সাইকুল, পুখাও ও সাংগলমাং এলাকায় অভিযান শুরু করেছে নিরাপত্তা বাহিনী।
৩ মে থেকে মণিপুরে সংখ্যাগুরু মেতেই জনজাতির সঙ্গে রক্তাক্ত সংঘাত চলছে কুকি-ঝোমি ও অন্য আদিবাসীদের। এখনও পর্যন্ত প্রাণ হারিয়েছেন পঞ্চাশ জনেরও বেশি মানুষ। সেখানে জারি করা হয়েছে কারফিউ, বন্ধ আছে ইন্টারনেট।
এ বিষয়ে ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বলেন, আদালতের নির্দেশেই এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। তবে এখন সব নিয়ন্ত্রণে আছে।
উল্লেখ্য, মণিপুরে ট্রাইবাল বা আদিম জনগোষ্ঠীর মধ্যে লড়াই নতুন কিছু নয়। কয়েক শ’ বছর ধরে তা চলছে। তবে এবার তা ভিন্ন মাত্রা ধারণ করেছে। বিশ্লেষকদের অনেকেই বলছেন, মণিপুরে সংখ্যাগুরু মেতেইরা তফসিলি উপজাতির তকমা দাবি করে বারুদের স্তূপে আগুন দিয়েছে।
গত এপ্রিল মাসে রাজ্য সরকারকে মেতেইদের দাবি খতিয়ে দেখার নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট। তাই রাজ্য ও কেন্দ্রকে প্রতিবাদী বার্তা দিতেই ৩ মে ‘ট্রাইবাল সলিডারিটি মার্চ’ শুরু করে ‘অল ট্রাইবাল স্টুডেন্টস ইউনিয়ন অফ মণিপুর’। মেতেইদের তফসিলি উপজাতির তকমা না দেওয়ার দাবিতেই ছিল এই মিছিল। ক্রমেই তা হিংসাত্মক আকার ধারণ করে। মেতেই সংখ্যাগুরু ইম্ফল উপত্যকায় বেশকিছু বাড়িঘরে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। আর এর প্রতিক্রিয়াও হয় প্রায় সঙ্গে সঙ্গে। গোটা রাজ্যে ছড়িয়ে পড়ে সহিংসতা।