• বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ০২:৩৬ অপরাহ্ন

কেন বিশ্বের ৮২ কোটি মানুষ অনাহারে ভুগছে?

নিউজ ডেস্ক
আপডেটঃ : সোমবার, ২৯ মে, ২০২৩

বিশ্বজুড়ে ক্ষুধার্ত মানুষের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার ১০ শতাংশ বা প্রায় ৮২ কোটি ৮০ লাখ মানুষ রোজ রাতে না খেয়ে ঘুমাতে যায়। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) মতে, এ সংখ্যা গত বছরের চেয়ে প্রায় সাড়ে চার কোটি বেশি।

এসব ক্ষুধার্তদের মধ্যে দুই-তৃতীয়াংশই নারী এবং ৮০ শতাংশ জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় বাস করে। বিশ্বব্যাপী ক্ষুধার মাত্রা সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে, অলাভজনক সংস্থা দ্য হাঙ্গার প্রজেক্ট ২৮ মে দিনটিকে বিশ্ব ক্ষুধা দিবস হিসাবে মনোনীত করেছে। শরীর যখন দীর্ঘ সময়ের জন্য খাদ্য থেকে বঞ্চিত হয়, তখন যেই অবস্থার সৃষ্টি হয় সেটিই ক্ষুধা। দীর্ঘস্থায়ী ক্ষুধার কারণে স্বাস্থ্য সমস্যা হতে পারে এবং আজীবনের জন্য শারীরিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক ক্ষতি হতে পারে, বিশেষ করে শিশুদের মধ্যে।

অপুষ্টির ধারণাটি দৈনিক ক্যালোরি গ্রহণের পরিমাণের চেয়ে বিস্তৃত। অপুষ্টি বোঝাতে শরীরে শক্তি ও প্রোটিনের পাশাপাশি অত্যাবশ্যক ভিটামিন এবং খনিজ পদার্থের অভাবকে নির্দেশ করা হয়। এক দশকের ধারাবাহিক হ্রাসের পর, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিশ্বব্যাপী ক্ষুধার ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা দেখা গেছে। ২০১৯ এবং ২০২১ সালের মধ্যে, অপুষ্টির শিকার ব্যক্তির সংখ্যা ১৫ কোটিরও বেশি বেড়েছে। আর এতে সহায়তা করেছে সংঘাত, জলবায়ু পরিবর্তন, অর্থনৈতিক ধাক্কা এবং কোভিড-১৯ মহামারীর মতো বিষয়।

সেইসাথে বেড়েছে খাবারের দামও। ২০১৯ এবং ২০২২ সালের মধ্যে, খাদ্য ও কৃষি সংস্থার ফুড প্রাইস ইনডেক্স ৯৫ দশমিক ১ পয়েন্ট থেকে ১৪৩ দশমিক ৭ পয়েন্টে পৌঁছেছে। এ ইনডেক্স চিনি, মাংস, সিরিয়াল, দুগ্ধ এবং উদ্ভিজ্জ তেলসহ খাদ্যপণ্যের বৈশ্বিক মূল্যের পরিবর্তন পরিমাপ করে। খাদ্য ও কৃষি সংস্থার ট্রেড অ্যান্ড মার্কেটস বিভাগের অর্থনীতিবিদ মনিকা তোথোভা বলেন, বিশ্বব্যাপী খাদ্যদ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধি হলেও বিভিন্ন দেশে এই বৃদ্ধির হার ভিন্ন, কারণ বিভিন্ন দেশ বিভিন্ন নীতি প্রয়োগ করে৷ উদাহরণস্বরূপ, অনেক দেশ নির্বাচিত কিছু পণ্যের জন্য ভোক্তা ভর্তুকি দেয়, ভোক্তাদের জন্য মূল্য নির্ধারণ করে এবং জাতীয় বাজেটের বিশ্ববাজারে দাম ওঠানামা থেকে ভোক্তাদের রক্ষা করে।

জাতিসংঘের সর্বশেষ স্টেট অফ ফুড সিকিউরিটি অ্যান্ড নিউট্রিশন ইন দ্য ওয়ার্ল্ড (এসওএফআই) রিপোর্টে দেখা গেছে, বিশ্বে অপুষ্টিতে ভোগা জনসংখ্যার বেশিরভাগ এশিয়ায় বাস করে। এ মহাদেশে ২০২১ সালে প্রায় ৪২ কোটি পাঁচ লাখ মানুষ ক্ষুধার্ত ছিল। তবে আফ্রিকাতে ক্ষুধার প্রাদুর্ভাব সবচেয়ে বেশি, যেখানে একই বছর ২৭ কোটি আট লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তীব্র খাদ্য ঘাটতির সম্মুখীন লোকের সংখ্যা ২০২২ সালে টানা চতুর্থ বছরের জন্য বৃদ্ধি পেয়েছে। এটি একজন ব্যক্তির পর্যাপ্ত খাদ্য গ্রহণে অক্ষমতাকে পরিমাপ করে এবং ফলস্বরূপ, তাদের জীবন বা জীবিকাকে তাৎক্ষণিক বিপদের মধ্যে ফেলে।

খাদ্য সংকটের বৈশ্বিক রিপোর্টের ২০২৩ সংস্করণ অনুসারে, এ বছর ২৫ কোটি আট লাখ মানুষ তীব্র ক্ষুধার সম্মুখীন হয়েছে। তোথোভা বলেন, বিভিন্ন প্রধান খাদ্য সংকটে তীব্র খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা এবং অপুষ্টির প্রাথমিক চালক হিসাবে সংঘর্ষকে ছাড়িয়ে গেছে অর্থনৈতিক ধাক্কা। ‘খাদ্যের ঊর্ধ্বগতি এবং বাজারে মারাত্মক ব্যাঘাতসহ ক্রমবর্ধমান বৈশ্বিক অর্থনৈতিক ধাক্কা, দেশগুলোর স্থিতিস্থাপকতা এবং খাদ্য অভিঘাত মোকাবেলা করার ক্ষমতাকে দুর্বল করে।’

২০২২ সালে প্রধান খাদ্যশস্য, তৈলবীজ এবং সারের দুই বৃহত্তম উত্পাদক রাশিয়া এবং ইউক্রেনের মধ্যে যুদ্ধ আন্তর্জাতিক সরবরাহ শৃঙ্খলে বিশাল বিঘ্ন ঘটায় যা শস্য, সার এবং জ্বালানির দামকে বাড়িয়ে দেয়। এর ফলে বিশ্বব্যাপী এফপিআই সে বছর রেকর্ড স্তরে পৌঁছায়। বিশ্বব্যাপী ক্ষুধার ভবিষ্যদ্বাণী বলছে, চরম আবহাওয়ার আরও বিধ্বংসী প্রভাবসহ ক্ষুধার এই প্রাদুর্ভাব অব্যাহত থাকবে। সূত্র: আল-জাজিরা।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ