বাংলাদেশ নৌবাহিনীর ৭৭৩ জন নবীন নাবিকের শিক্ষা সমাপনী কুচকাওয়াজ আজ বুধবার খুলনাস্থ নৌঘাঁটি বানৌজা তিতুমীর প্যারেড গ্রাউন্ডে অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে নৌবাহিনী প্রধান এডমিরাল এম শাহীন ইকবাল প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে মনোজ্ঞ কুচকাওয়াজ পরিদর্শন ও সালাম গ্রহণ করেন। পরে তিনি কৃতি নবীন নাবিকদের মাঝে পুরষ্কার বিতরণ করেন। নৌপ্রধান নবীন নাবিকদের উদ্দেশ্যে ভাষণে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অসামান্য অবদানের কথা গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করেন।
সেই সাথে তিনি স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশগ্রহণকারী বীর নৌসেনা ও মুক্তিযোদ্ধাদের সর্বোচ্চ আত্মত্যাগের কথা কৃতজ্ঞতার সাথে সরণ করেন। তিনি বলেন, বর্তমান সরকারের প্রধানমন্ত্রীর অসামান্য প্রজ্ঞা, দুরদর্শিতা ও দিকনির্দেশনায় বাংলাদেশ নৌবাহিনী আজ একটি আধুনিক ও ত্রিমাত্রিক নৌবাহিনী হিসেবে সুপরিচিত। একটি সমৃদ্ধশালী নৌবাহিনী গড়ে তোলার লক্ষ্যে ইতিমধ্যে নৌবহরে সাবমেরিনসহ আধুনিক প্রযুক্তির যুদ্ধজাহাজ যুক্ত হয়েছে। পাশাপাশি নৌবাহিনীর সাবমেরিনসমূহের অপারেশনাল কর্মকান্ড ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য কুতুবদিয়ার পেকুয়ায় সাবমেরিন ঘাঁটি ‘বানৌজা শেখ হাসিনা’ কমিশনিং করা হয়েছে।
পটুয়াখালীর পায়রা বন্দরের কাছে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের উপকূলীয় ও সমুদ্র এলাকার নিরাপত্তায় নির্মিত ‘বানৌজা শের-ই-বাংলা’ ঘাঁটি শীঘ্রই কমিশনিং করা হবে। যেখানে বড় পরিসরে নবীন নাবিকদের প্রশিক্ষণ কার্যক্রম পরিচালনায় আধুনিক সুবিধা সম্বলিত অবকাঠামো নির্মাণ করা হয়েছে। ফলে এ ঘাঁটির মাধ্যমে এ অঞ্চলের সুরক্ষা নিশ্চিত করার পাশাপাশি নৌবাহিনীর আভিযানিক, প্রশাসনিক ও প্রশিক্ষণ কার্যক্রমে আরও গতিশীলতা আসবে। ইতোমধ্যে নৌবাহিনীর জন্য খুলনা শিপইয়ার্ডে নির্মিত চারটি পেট্রোল ক্রাফ্ট এর নির্মাণ শেষ হয়েছে যা অতিশীঘ্রই নৌবহরে যুক্ত হবে। সেইসাথে নেভাল এভিয়েশনের সক্ষমতা বৃদ্ধিতে দুটি ইউটিলিটি হেলিকপ্টার নির্মাণের কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
নৌবাহিনীর অপারেশনাল সক্ষমতা বৃদ্ধিতে বিভিন্ন যুদ্ধজাহাজ সংযোজন ও আধুনিকায়নের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। নৌপ্রধান নৌবাহিনীর এই উন্নয়নের ধারাকে অব্যাহত রাখতে এবং আগামী দিনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় উচ্চ মনোবল ও সাহস নিয়ে নবীন নাবিকদের একযোগে দেশের জন্য কাজ করার নির্দেশনা দেন। তিনি নৌঘাঁটি তিতুমীরে নবীন নাবিক প্রশিক্ষণ বিদ্যালয় থেকে অর্জিত জ্ঞান যথাযথভাবে কাজে লাগিয়ে নিজেদেরকে যোগ্য নাবিক হিসেবে গড়ে তোলা এবং ভবিষ্যৎ কর্মজীবনে এই প্রশিক্ষণ কাজে লাগিয়ে জাতীয় নিরাপত্তা ও অগ্রগতির পথে সঠিকভাবে দায়িত্ব পালনের আহবান জানান। তিনি পেশা হিসেবে দেশ সেবা ও দেশ গড়ার পবিত্র দায়িত্বকে বেছে নেয়ায় নবীন নাবিকদেরকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান। সেই সঙ্গে তাদেরকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, দেশপ্রেম ও স্বাধীনতার আদর্শে উজ্জ্বীবিত হয়ে দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় নিজেদের নিয়োজিত করার পরামর্শ দেন তিনি।
নৌবাহিনীর এ/২০২৩ ব্যাচের নবীন নাবিকদের মধ্যে মো. মেহেদী হাসান মারুফ পেশাগত ও সকল বিষয়ে সেরা চৌকস নাবিক হিসেবে ‘নৌপ্রধান পদক’ লাভ করেন। মো. আল-আমিন দ্বিতীয় স্থান অধিকার করে ‘কমখুল পদক’ এবং মো. ইব্রাহীম তৃতীয় স্থান অধিকার করে ‘তিতুমীর পদক’ লাভ করেন।
কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে সহকারী নৌপ্রধান (পার্সোনেল), খুলনা নৌ অঞ্চলের আঞ্চলিক কমান্ডারসহ উচ্চ পদস্থ সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তা এবং নবীন নাবিকদের অভিভাবকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।