সৌদি আরবের ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের (এমবিএস) সঙ্গে ফোনালাপ করেছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। ফোনালাপে এই দুই নেতা দেশ দুটির মধ্যে সম্পর্ক এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার বিভিন্ন উপায় নিয়ে গভীর আলোচনা করেছেন। এছাড়া অভিন্ন কিছু উদ্বেগসহ বেশ কিছু বিষয় নিয়ে কথা হয়েছে তাদের। বুধবার রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা এসপিএ’র বরাত দিয়ে এ খবর দিয়েছে আরব নিউজ।
সাম্প্রতিক সময়ে রাশিয়ার সাথে সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ করছে সৌদি আরব। এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের আপত্তি সত্ত্বেও রাশিয়ার সাথে হাত মিলিয়ে তেলের উৎপাদন হ্রাস করেছে সৌদি আরব। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিপক্ষ চীনের মধ্যস্ততায় ইরানের সাথেও কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনঃস্থাপন করেছে সৌদি আরব। যুক্তরাষ্ট্র যেখানে চায় সৌদি আরব ইসরাইলকে স্বীকৃতি দিয়ে সম্পর্ক স্থাপন করুক, সেখানে সৌদি এখনও দ্বিধা প্রকাশ করতে শুরু করেছে।
সৌদি আরবকে আবারও নিজের বলয়ে আনতে মঙ্গলবার তিন দিনের সফরে সৌদি আরব গেছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন। এই সফরে তিনি সৌদি আরবকে বুঝানোর চেষ্টা করবেন যে, চীন-রাশিয়া ব্লক থেকেও যুক্তরাষ্ট্রের থেকে বেশি কিছু পেতে পারে রিয়াদ। ব্লিঙ্কেনের সৌদি সফরের পরপরই ক্রাউন প্রিন্স বিন-সালমানকে ফোন করেন পুতিন। ক্রেমলিনের তরফ থেকে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, মূলত তেল বাণিজ্য নিয়ে বুধবার টেলিফোনে আলোচনা করেছেন পুতিন ও বিন-সালমান।
ক্রেমলিনের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, তেল উৎপাদনকারী দেশগুলোর জোট ওপেক প্লাসের সহযোগিতা বাড়াতে দুই দেশের নেতা আলোচনা করেছেন।
এ ছাড়া, অর্থনীতি, বাণিজ্য, বিনিয়োগ, পরিবহন ও জ্বালানি সহযোগিতা বিষয়ে দুই দেশের সম্পর্ক কীভাবে আরও জোরদার করা যায়, তা নিয়ে আলোচনা করেছেন তারা। জ্বালানি তেলের বৈশ্বিক বাজার কীভাবে স্থিতিশীল রাখা যায়, তা নিয়েও আলোচনা করেছেন পুতিন ও সৌদি ক্রাউন প্রিন্স। সম্প্রতি রিয়াদে মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে যেসব চুক্তি হয়েছে, তার গুরুত্ব নিয়েও আলোচনা করেছেন তারা।
এর আগে গত ২১শে এপ্রিল শেষবারের মতো টেলিফোনে কথা বলেছিলেন ভ্লাদিমির পুতিন ও মোহাম্মদ বিন সালমান। গত ৩রা জুন অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনায় ওপেক প্লাসের সদস্য দেশগুলোর মন্ত্রীদের দীর্ঘ সাত ঘণ্টার বৈঠক শেষে তেল উৎপাদন কমানোর ঘোষণা দেয় সৌদি আরব। দেশটির জ্বালানিমন্ত্রী প্রিন্স আব্দুল আজিজ বিন সালমান আল সৌদ বলেন, জুলাই থেকে তেলের উৎপাদন প্রতিদিন ১০ মিলিয়ন ব্যারেল থেকে কমিয়ে ৯ মিলিয়নে নামিয়ে আনা হবে। কারণ আমরা তেলের বাজারে স্থিতিশীলতা চাই।
সৌদি আরবের এ ঘোষণার পর বিশ্ববাজারে রাতারাতি বেড়ে যায় জ্বালানি তেলের দাম। বার্তা সংস্থা রয়টার্স বলছে, ব্রেন্ট তেলের দাম ব্যারেল প্রতি ৭৮ ডলারে গিয়ে দাঁড়িয়েছে। আর অপরিশোধিত তেলের দাম হয়েছে ৭৪ ডলার। এদিকে ওপেক প্লাসের বৈঠকের পর রাশিয়ার উপ-প্রধানমন্ত্রী আলেকজান্ডার নোভাক বলেছেন, ক্রেমলিন ২০২৪ সালের এপ্রিল থেকে প্রতিদিন প্রায় দেড় মিলিয়ন ব্যারেল কম তেল উৎপাদন করবে। আগামী বছরের শেষ পর্যন্ত এ উৎপাদন হ্রাস অব্যাহত থাকবে। এর চারদিন পর সৌদি যুবরাজ ও রুশ প্রেসিডেন্ট ফোনালাপ করলেন।