• বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ০১:৪৮ পূর্বাহ্ন

অর্থবছরের শেষ সময়ে বরাদ্দ কাটছাঁট

নিউজ ডেস্ক
আপডেটঃ : রবিবার, ১১ জুন, ২০২৩

অর্থবছরের একেবারেই শেষ সময়ে কাটছাঁট হচ্ছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) ১৯টি চলমান প্রকল্পের বরাদ্দ।

কাঙ্ক্ষিত খরচ করতে না পারায় এসব প্রকল্প থেকে কেটে নেওয়া হচ্ছে ৫৮০ কোটি ৭৯ লাখ টাকা। প্রকল্পগুলোয় সংশোধিত এডিপিতে বরাদ্দ আছে ৪ হাজার ৫২৬ কোটি ৮৫ লাখ টাকা।

পাশাপাশি বাড়তি চাহিদা থাকায় উপযোজনের মাধ্যমে অন্য ১৩টি প্রকল্পের অনুকূলে এই অর্থ ভাগ করে দেওয়া হবে বলে জানা গেছে।

২৫ মে পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো এক চিঠিতে বিষয়টি জানানো হয়। সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, বেশি বরাদ্দ নিয়ে ব্যয় করতে না পারায় সংশ্লিষ্টদের জবাবদিহির আওতায় আনা হচ্ছে না। ফলে একই ধরনের ঘটনা প্রতিনিয়ত ঘটছে।

পাশাপাশি এই অব্যবহৃত অর্থ যাতে ফেরত না যায়, সেজন্য কৌশলে অন্য প্রকল্পে বরাদ্দ দেওয়া হয়। এসব বিষয়ে বর্তমান নীতিমালা সংশোধন করে কঠোরতা অবলম্বন প্রয়োজন।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান শনিবার বলেন, আইনের মধ্যে থেকে যোজন-বিয়োজন সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় করতে পারে। কিন্তু আপনার মতো আমারও মৌলিক প্রশ্ন হলো-সংশোধিত এডিপিতে বরাদ্দ নিয়ে কেন তারা সেখান থেকে সরে এলো? অবশ্যই এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট নির্বাহী কর্তৃপক্ষ বা মন্ত্রণালয়ের সচিব প্রকল্পসংশ্লিষ্টদের জবাবদিহির আওতায় আনতে পারেন। আমি আইএমইডিকে দিয়ে বিষয়গুলো মূল্যায়ন করে দেখতে পারি।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিধিবিধান মেনে এটা করলে আমরা বাধা দিতে পারি না। কিন্তু সংশ্লিষ্ট নির্বাহী কর্তৃপক্ষ যারা টাকা নিয়ে খরচ করতে পারল না, তাদের বিষয়টি খতিয়ে দেখতে পারে।

বিশ্বব্যাংক ঢাকা অফিসের সাবেক লিড ইকোনমিস্ট ড. জাহিদ হোসেন বলেন, সংশোধিত এডিপিতে বরাদ্দ নিয়ে ১/২ মাসের মধ্যে বলা হচ্ছে টাকা খরচ করা যাবে না। এই সময়ের মধ্যে কী এমন ঘটনা ঘটল যে টাকা ব্যয় করা সম্ভব নয়। এরকম করার কারণে সংশোধিত এডিপির ওপর মানুষের বিশ্বাসযোগ্য নিয়ে প্রশ্ন উঠবে। তাহলে সংশোধিত বরাদ্দ দেওয়ারই বা দরকার কী ছিল? এই সংশোধন করে কী লাভ? বরং এ প্রক্রিয়া করতে গিয়ে বৈঠক করতে হয়েছে, চিঠিপত্র লেখালিখি করতে হয়েছে। এসব করতেই অনেক সময় ও অর্থ ব্যয় করাটাই ক্ষতি হয়েছে।

সূত্র জানায়, যেসব প্রকল্প থেকে বরাদ্দ কাটছাঁট করা হচ্ছে সেগুলো হলো-জামালপুর-শেরপুর জেলার পল্লি অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প থেকে কমানো হচ্ছে ১৯ কোটি ৬৫ লাখ টাকা।

এছাড়া খুলনা বিভাগ পল্লি অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প থেকে ১০০ কোটি, লাঙ্গলবন্দ অষ্টমীর পুণ্যস্নানোৎসবের অবকাঠামো উন্নয়নে ৩২ কোটি ৯০ লাখ, উপজেলা ও ইউনিয়ন সড়কে দীর্ঘ সেতু নির্মাণ প্রকল্প থেকে ২৫ কোটি এবং রূপগঞ্জ জলসিঁড়ি আবাসন সংযোগকারী প্রকল্প থেকে কমছে ৪ কোটি ২৯ লাখ টাকা। আরও আছে তিন পার্বত্য জেলায় দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত পল্লি সড়ক উন্নয়ন প্রকল্পের কমছে ৬৩ কোটি টাকা। উপজেলা-ইউনিয়ন ও গ্রাম সড়কে অনূর্ধ্ব ১০০ মিটার সেতু নির্মাণে ৫০ কোটি ২৫ লাখ টাকা।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় ৯টি সেতু নির্মাণে ১০ কোটি ৮৬ লাখ টাকা। কুমিল্লা-ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও চাঁদপুর জেলার গুরুত্বপূর্ণ গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়নে ১০ কোটি টাকা। গাজীপুর জেলার পল্লি অবকাঠামো উন্নয়নে ১৭ কোটি ৯০ লাখ টাকা। এছাড়া পল্লি সড়কে গুরুত্বপূর্ণ সেতু নির্মাণ (দ্বিতীয় পর্যায়) প্রকল্পে কমছে সাড়ে ৫ কোটি টাকা।

নারায়ণগঞ্জ জেলার সদর উপজেলায় জলাবদ্ধতা নিরসনে তিন কোটি টাকা। হাওড় অঞ্চলে অবকাঠামো ও জীবনমান উন্নয়নে ১০ কোটি ২৫ লাখ টাকা। হাওড় অঞ্চলের বন্যা ব্যবস্থাপনা ও জীবনমান উন্নয়ন প্রকল্পে ১৫ কোটি ৬০ লাখ টাকা। অবকাঠামোগত দক্ষতা উন্নয়ন ও তথ্যের মাধ্যমে ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর সহনশীলতা বৃদ্ধি (প্রভাতি) প্রকল্পে ৩ কোটি ৫৪ লাখ টাকা।

পশ্চিমাঞ্চলের অর্থনৈতিক করিডর এবং আঞ্চলিক উন্নয়ন সম্প্রসারণ কর্মসূচী থেকে ২৭ কোটি ২৭ লাখ টাকা। রুরাল ট্রান্সপোর্ট ইমপ্রুভমেন্ট প্রজেক্ট-২ থেকে ৩৯ কোটি ৯৯ লাখ টাকা। গ্রামীণ সড়কে সেতু উন্নয়ন সহায়তা কর্মসূচি থেকে ১৭৭ কোটি ২৪ লাখ টাকা এবং গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলাধীন পাঁচপীর বাজার-চিলমারী উপজেলা হেডকোয়ার্টার সড়কে তিস্তা নদীর ওপর ১৪৯০ মিটার দীর্ঘ পিসি গার্ডার সেতু নির্মাণ প্রকল্প থেকে বাদ যাচ্ছে ২৮ কোটি টাকা।

স্থানীয় সরকার বিভাগের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা জানান, এই উপযোজন করাটা আইনগতভাবে কোনো বাধা নেই। কিন্তু তারপরও আমি যতটুকু জানি, প্রকল্পসংশ্লিষ্টরা যৌক্তিক কারণ দেখিয়েই হয়তো বলেছে এই টাকা খরচ করতে পারবে না। তাদের যুক্তিতে সংশ্লিষ্টরা সন্তুষ্ট হয়েছে বলেই অর্থ কাটছাঁট করা হয়েছে। তবে এ বিষয়টি সম্পূর্ণ এলজিইডির এখতিয়ার। তারা মন্ত্রণালয়ে অনুমোদনের জন্য আসেও না। তাই আমি তেমন কিছু বলতে পারছি না। তিনি আরও জানান, সম্প্রতি সংশোধিত এডিপি বাস্তবায়নে পিছিয়ে থাকাদের নিয়ে বৈঠক করেছেন স্থানীয় সরকারমন্ত্রী।

সূত্র জানায়, চলতি অর্থবছরে ১৯ প্রকল্প থেকে অর্থ কেটে যে ১৩টি প্রকল্পে দেওয়া হচ্ছে সেগুলো হলো-বৃহত্তর রাজশাহী জেলার গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প। এছাড়া সিলেট বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন। বৃহত্তর ঢাকা গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন। মাদারীপুর-শরীয়তপুর ও রাজবাড়ী জেলার গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প। আরও আছে ময়মনসিংহ অঞ্চল পল্লি অবকাঠামো উন্নয়ন।

উপজেলা কমপ্লেক্স সম্প্রসারণ-দ্বিতীয় পর্যায়। দেশের দক্ষিণাঞ্চলে আয়রন ব্রিজ পুনর্নির্মাণ/পুনর্বাসন প্রকল্প। বৃহত্তর কুষ্টিয়া জেলা গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন। গ্রাম সড়ক পুনর্বাসন প্রকল্প। ঘূর্ণিঝড় আম্ফান ও বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত পল্লি সড়ক অবকাঠামো পুনর্বাসন। পিরোজপুর জেলার পল্লি অবকাঠামো উন্নয়ন। যশোর জেলার মনিরামপুর উপজেলার গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন এবং টাঙ্গাইল জেলার গুরুত্বপূর্ণ গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ