• রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১১:৪৩ পূর্বাহ্ন

ইবি ভিসির নিয়োগ সংক্রান্ত অডিও ফাঁস

নিউজ ডেস্ক
আপডেটঃ : সোমবার, ১২ জুন, ২০২৩

ফের ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. শেখ আবদুস সালামের ‘কণ্ঠসদৃশ্য’ দুইটি অডিও ভাইরাল হয়েছে। ‘রক সালাম’ নামে ফেসবুক আইডি থেকে শুক্রবার (৯ জুন) রাতে ৫৩ সেকেন্ডের ও শনিবার (১০ জুন) রাতে ৪৬ সেকেন্ডের দুইটি অডিও পোস্ট করা হয়। অডিওতে নিয়োগ বাণিজ্য সংক্রান্ত বিষয়ে ভিসির কণ্ঠসদৃশ কথোপকথন শোনা যায়। তবে অডিওতে অপরপ্রান্তে থাকা ব্যক্তির কথা শোনা যায়নি।

এর আগে গত ২ ফেব্রুয়ারি থেকে পৃথক তিনটি ফেসবুক আইডিতে অন্তত ১০টি অডিও ভাইরাল হয়েছে। অডিওগুলোতে ভাইভার আগে চাকরির প্রশ্নফাঁস, নিয়োগে অর্থলেনদেন সংক্রান্ত কথোপকথন ও শিক্ষক-কর্মকর্তাদের নিয়ে নেতিবাচক মন্তব্য শোনা যায়।

৫৩ সেকেন্ডের অডিওর পোস্টে ক্যাপশনে লেখা হয়েছে, ‘ইবির মার্কেটিং ও ফাইন আর্টস বিভাগেও তার সিন্ডিকেটের মূল হোতার পরামর্শ নিয়েই শিক্ষক নিয়োগ দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন। কে এই ক্লিয়ারেন্স দাতা? প্রতিটি টেন্ডার ও নিয়োগের ক্লিয়ারেন্স দেন সেই বড় ভাই। সকল অর্থ কালেকশন ও বন্টন করে সব জায়গায় পৌঁছানোর দায়িত্ব বড় ভাইয়ের।’

পাঠকদের উদ্দেশ্যে অডিওর কথোপকথন তুলে ধরা হলো, ‘ফাইন আর্টসের ওটা করে দিতে পেরেছি। সিন্ডিকেট পর্যন্ত কাউকেই কিছু করার দরকার নেই। সিন্ডিকেটে চূড়ান্ত হবে। আজকে সকালে দেখলাম যে, মার্কেটিংয়ের একটা ইয়ে পাঠিয়েছিলেন। ওটা তো কালকে সিদ্ধান্ত হয়ে গেছে। আমি একটু আগে জানলে হয়তো…. (অস্পষ্ট) খুব খারাপ ছিল না, হয়তো পাঁচে ছিল। সোজা কথা, আমি আপনার ক্লিয়ারেন্স ছাড়া এখানে কাউকে নিয়োগ দিব না।

৪৬ সেকেন্ডের অডিওর ক্যাপশনে বলা হয়, গত অনুষ্ঠিত মেডিকেলের বোর্ডে ভিসি ডিসিশন নেয়নি। আগামী ১৩ জুন অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া ডাক্তার নিয়োগ বোর্ডে পছন্দের প্রার্থীকে নিয়োগ দিতে বর্তমানে ঢাকায় অবস্থান করছেন। সালাম মেডিকেল (ডাক্তারের) নিয়োগ বোর্ড করেছেন কিন্তু সিদ্ধান্ত নেননি। কারণ সেসময় তার নিয়োগ সিন্ডিকেটের ক্লিয়ারেন্স ছিল নির্দিষ্ট একজন ডাক্তারের কিন্তু স্থানীয় নেতৃবৃন্দের ও ছাত্রলীগের শক্ত সুপারিশ ছিল অন্যজনের তাই তিনি নিয়োগ দিতে পারেননি।

পাঠকদের উদ্দেশ্যে অডিওর কথোপকথন তুলে ধরা হলো, ‘আমরা কিন্তু মেডিকেলেরটা ডিসিশন নেইনি। একটা সুযোগ তৈরি হচ্ছে ওর জন্যই নেইনি। ৭ তারিখের ভিতরেই, না এ মাসের ভিতরেই আরেকটা অ্যাড (বিজ্ঞপ্তি) আছে ওইটাতে যেন অ্যাপ্লাই করে দেয়। একটা তো… (অস্পষ্ট) আমাকে এখানে একটা একোমোডেট করতে হবে।’

এর আগে, ১২ মার্চ অডিও ফাঁসের নেপথ্যের মানুষদের চিহ্নিত করতে জীববিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. রেজওয়ানুল ইসলামকে আহবায়ক করে ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে কর্তৃপক্ষ। কমিটিকে যথাশীঘ্রয় প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়। তবে এখন পর্যন্ত ওই কমিটির কোনো মিটিং হয়নি বলে জানিয়েছেন কমিটির সদস্য ও শাপলা ফোরামের সভাপতি অধ্যাপক ড. মামুনুর রহমান। তিনি বলেন, আহ্বায়ক মিটিং ডাকবেন তারপর কাজ শুরু হবে। কিন্তু এখন পর্যন্ত এমন কোনো চিঠি পাইনি।

এ বিষয়ে কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. রেজওয়ানুল ইসলামের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, শুধু উপাচার্যের (ভিসির) অডিও খতিয়ে দেখতে নয়, কোন কোন পত্রিকায় কারা নিউজ করেছিল এবং মাইকিং করে কারা উপাচার্যের পদত্যাগ চেয়েছিল তা খতিয়ে দেখতে কমিটি করা হয়েছিল। বর্তমানে কমিটির কার্যক্রম চলমান রয়েছে।

শাপলা ফোরামের সভাপতি ও ফাইন আর্টস বিভাগের সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ড. মামুনুর রহমান বলেন, শাপলা ফোরামের সাধারণ সভায় আমাদের সিদ্ধান্ত হয়েছিল শিক্ষা সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দফতরে জানাবো। সে অনুযায়ী আমরা জানিয়েছি। তবে এখনো রেসপন্স পাইনি। উপাচার্যের অবস্থান লিখিতভাবে ব্যাখা দেওয়ার দাবি করেছিলাম সেটাও তিনি করেননি। নতুন করে যেহেতু আবার অডিও আসলো। ক্যাম্পাস খুললে আমরা সবাইকে নিয়ে আবার বসবো।

শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. তপন কুমার জোদ্দার বলেন, বারবার অডিও ফাঁস হচ্ছে। এগুলো খুবই বিব্রতকর এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য মোটেই শুভকর নয়। এগুলার একটা সমাধান আসা উচিত। আমরা ইতোমধ্যে আনুষ্ঠানিকভাবে সরকারের ও শিক্ষাসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দফতরে জানিয়েছি ও তদন্ত চেয়েছি। কিন্তু এখনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ দেখিনি।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. শেখ আবদুস সালাম সাংবাদিকদের বলেন, ভিডিও-অডিও তো আসার তালেই আছে। অংশবিশেষ ধরে ধরে এগুলা করা হচ্ছে। আমি কারো কথায় চাকরি দেই না। মেধার বাইরে আমি কিছু করিনাই, করবো না। আর টাকা-পয়সা খাওয়া এসমস্ত জিনিস আমার চিন্তার বাইরে। এ ব্যাপারে আমার আর কিছু বলার নেই।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ