• বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:৩৮ পূর্বাহ্ন

সংঘবদ্ধ পকেটমার টিম পর্দার আড়ালে কৌশলে চুরি করে তারা

নিউজ ডেস্ক
আপডেটঃ : বুধবার, ১৪ জুন, ২০২৩

বোরকা পরিহিত অবস্থায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, শপিং মল, হাসপাতাল, বাস স্টপেজে ঘুরে বেড়ান নারী। দৃশ্যত পর্দানশীন নারী হিসেবে চলাফেরা হলেও আড়ালে পকেটমার হিসেবে সংঘবদ্ধভাবে কাজ করেন তারা।
আর এই নারী পকেটমাররা কৌশলে নারীদের ব্যাগ থেকেই উঠিয়ে নেন মোবাইল ফোন, টাকা ও স্বর্ণালঙ্কার। এসব নারী পকেটমার মোবাইল ফোনগুলো বিক্রি করেন বিভিন্ন এলাকার মহাজনদের কাছে।

ঢাকা মেট্রোপলিটনের গোয়েন্দা লালবাগ বিভাগের একটি দল ৯ জন পকেটমার ও ৭ জন মহাজনকে গ্রেপ্তার করেছে। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে বিভিন্ন মডেলের ৪০টি মোবাইল ফোন।
তাদের জিজ্ঞাসাবাদ ও তদন্তে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে গোয়েন্দা লালবাগ বিভাগের উপ-কমিশনার মশিউর রহমান বলেন, দুটি মোবাইল ফোন হারানোর ঘটনা তদন্ত করতে গিয়ে নারী পকেটমারদের সন্ধান পায় ডিবি।

তদন্তে প্রাপ্ত তথ্যের বরাতে তিনি বলেন, গত ১৭ এপ্রিল একজন অ্যাডিশনাল ডিসট্রিক্ট জাজের স্ত্রী নিউমার্কেট থেকে রিকশায় করে ইডেন মহিলা কলেজে যাওয়া পথে কোনো এক পর্যায়ে তার ব্যাগ থেকে হারিয়ে ফেলেন আই-ফোনটি। ফোনটি উদ্ধার করে ডিবি।

গত ২ মে একজন সিনিয়র সাংবাদিকের স্ত্রী তার সন্তানকে স্কুল থেকে আনার জন্য যান আজিমপুরের ভিকারুননিসা নূন স্কুলে। স্কুলের গেটে হঠাৎ দেখেন তার ব্যাগের চেইন খোলা; মোবাইলটি নেই। ১৪ মে ডিবি পুলিশ উদ্ধার করে দেয় আই-ফোনটি। দুটি ফোন উদ্ধারের পর নারী পকেটমারদের সন্ধান পায় তদন্ত সংশ্লিষ্ট ডিবির সদস্যরা।
ডিসি মশিউর রহমান বলেন, রমনা এবং লালবাগ বিভাগে অবস্থিত বিভিন্ন মার্কেট, হাসপাতাল এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আসা নারীদের ব্যাগ-পকেট কেটে মোবাইল ও টাকা বিশেষ কৌশলে চুরি করার জন্য গড়ে ওঠেছে নারী পকেটমারের একটি বড় চক্র। এরা বোরখা পরে, পর্দানশীন নারী সেজে ছোট বাচ্চা কোলে নিয়ে স্নেহময়ী মায়ের অভিনয় করে সহসাই ঢুকে পড়েন ভিড়ে। চোখের পলকে হাতিয়ে নেন মোবাইল, নগদ টাকা ও ব্যাগে থাকা স্বর্ণালঙ্কার।
ডিবি লালবাগ বিভাগের অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার ও মাদক নিয়ন্ত্রণ টিমের সদস্যরা মঙ্গলবার (১৩ জুন) সকাল থেকে দুপুরের মধ্যে ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ও আশপাশের এলাকা এবং গুলিস্তান এলাকায় তথ্য প্রযুক্তি ও গোপন তথ্যের ভিত্তিতে ধারাবাহিক অভিযান চালিয়ে ৯ নারী পকেটমারসহ ১৬ জনকে আটক করে। তাদের কাছ থেকে বিভিন্ন মডেলের ৪০টি চোরাই মোবাইল ফোন উদ্ধার করেছে।
অভিযুক্তরা হলেন, বর্ষা আক্তার ওরফে মীম, সুমি আক্তার ওরফে প্রিয়া, শাবনুর, আলেয়া ওরফে আলো, সাথী আক্তার, মোছা. ছকিনা বেগম, সুজনা আক্তার ওরফে সুজিনা আক্তার ওরফে রুশকিনা, মোসা. তানিয়া খানম, তাসলিমা খাতুন।
চোরাই মোবাইল কেনা বেচায় জড়িত মহাজনরা হলেন, মাহাবুব হোসেন, মোক্তার হোসেন, রফিকুল ইসলাম, ইমরান হোসেন, ছৈয়দ হালদার, আশরাফ ঢালী ও জাকির হোসেন।
ডিবি কর্মকর্তারা জানান, বর্ষা আগে কাজ করেছেন ডিজে শিল্পী হিসেবে। পরবর্তীতে বান্ধবীদের হাত ধরে নতুন মডেলের মোবাইল পাওয়ার আশায় যুক্ত হন মোবাইল পকেটমারের কাজে। গত পাঁচ বছরে এ কাজ করে ধরা পড়েছেন তিনবার, ছাড়া পেয়ে পুনরায় একই কাজে ফিরেছেন।
১০ বছর বয়স থেকে মাকে পকেটমারির কাজ করতে দেখে এটাকেই পেশা হিসেবে বেছে নেওয়ার সংকল্প করেন আলেয়া আক্তার আলো। গত ৮-৯ বছর ধরে দক্ষিণ ঢাকার বিভিন্ন জায়গা করে আসছেন পকেটমারির কাজ। তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে সুমি আক্তার প্রিয়া।
মশিউর রহমান বলেন, বর্ষা- আলো- প্রিয়া এ তিন নারী পকেটমার গাউছিয়া মার্কেট, নিউমার্কেট, ইডেন কলেজ, বকশীবাজারের বদরুন নেসা মহিলা কলেজ, আজিমপুরের ভিকারুন্নেসা স্কুল অ্যান্ড কলেজ এলাকা দাপিয়ে বেড়াচ্ছিল। কোনদিন এক এক জন ৭টি পর্যন্ত মোবাইল চুরি করেছে।
ডিবি জানায়, আই-ফোন বাদে অন্য ফোনের জন্য তাদের দেওয়া হয় ২ থেকে ৪ হাজার টাকা। আর আই-ফোনের জন্য দেয়া হয় ৭ থেকে ৮ হাজার টাকা।
তদন্ত কর্মকর্তারা জানান, চুরি করা মোবাইলগুলো থেকে বাটন মোবাইলগুলো ইনটেক্ট বিক্রি করা হয় কম দামে। আই-ফোনগুলোর যন্ত্রাংশ খুচরা দামে বিক্রি করা হয়। এছাড়া আইএমইআই পরিবর্তন করেও বিক্রি করা হয়।
মার্কেট, স্কুলের ফটক, হাসপাতাল বা বাস স্টপেজে থাকা অবস্থায় নিজের মালামাল নিয়ে আরও সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে গোয়েন্দা লালবাগ ডিসি বলেন, উদ্ধার হওয়া ৪০টি মোবাইলের মধ্যে মাত্র একটি ফোন হারানোর জিডি পাওয়া গেছে। আইনানুগ ব্যবস্থা নিলে কখনও না কখনও সুফল পাওয়া যায়। মোবাইল বা অন্যান্য জিনিস চুরি বা হারিয়ে গেলে থানায় সাধারণ ডায়েরি বা মামলা করুন।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ