ঢাকাই সিনেমার রানি শাবানা। সিনেমা ছাড়ার দুই যুগ পরেও তাকে ভুলেনি কেউ। আজকেই এই দিনে জন্মেছিলেন তিনি। বিশেষ এই দিনে চলচিচত্র সহকর্মীদের শুভেচ্ছা ও ভালোবাসায় সিক্ত হচ্ছেন জিবন্ত কিংবদন্তি এই তারকা।
দীর্ঘ ক্যারিয়ারে অসংখ্য সিনেমা করেছেন তিনি, সংখ্যায় ২৯৯টি। এরমধ্যে ১৩০টি সিনেমায় জুটি বেঁধেছেন চিত্রনায়ক আলমগীরের সঙ্গে। এরপর নাদিম, রাজ্জাক, উজ্জ্বল, সোহেল রানা থেকে শুরু করে অনেকের সঙ্গেই কাজ করেন।
জন্মদিনে কিংবদন্তিকে নিয়ে গণমাধ্যমে কথা বলেন তার সহশিল্পী উজ্জ্বল। উজ্জ্বলের প্রথম সিনেমার নায়িকা ছিলে কবরী, দ্বিতীয় সিনেমা ‘সমাধান’র নায়িকা হন শাবানা। এরপর তারা কাজ করেন ‘অনুভব’, ‘স্বীকৃতি’ সিনেমায়। প্রতিটা সিনেমাই ছিল হিট।
সেসময়ের স্মৃতিচারণ করে উজ্জ্বল বলেন, ‘আমি সিনেমায় আসার আগেই তিনি স্টার। তারপরও কখনো তাকে অহংকার করতে দেখিনি। যদিও তখন আমি টেলিভিশনে নায়ক, কিন্তু সিনেমায় নতুন। ওই সময়ে তার সঙ্গে শুটিং করতে পারাটাই ছিল বড় বিষয়। তার ‘চকোরী’ সিনেমা বহুবার দেখেছি। আমি নিজেই শাবানার দর্শক ছিলাম। সেটা ‘চকোরী’ সিনেমা দেখে। এখনও ওটা পছন্দের সিনেমা।
‘সমাধান’ সিনেমার শুটিং করেছিলাম সাভারে। গড়াই নামে একটি জায়গায়। নৌকা চালানোর দৃশ্য ছিল, গানটা হচ্ছে- প্রেম যেন এক গোধূলী বেলার। এই গানটি আজও জনপ্রিয়। সেসময় ‘অনুভব’ সিনেমার ‘যদি সুন্দর একখান মুখ পাইতাম-সদরঘাটের পানি খিলি তারে বানাই খাওয়াইতাম’ গান ব্যাপক জনপ্রিয় হয়েছিল।’
‘শাবানার সঙ্গে ‘সমাধান’ মুক্তি পাবার কথা ছিল ১৯৭১ সালের ২ মার্চ। ৭ মার্চের জন্য তখন মুক্তি পায়নি। দেশ স্বাধীনের পর মুক্তি পায় এবং এদেশের দর্শকরা তা লুফে নেয়। এটি আমার অভিনয় জীবনে স্মরণীয় হয়ে আছে। আমার প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান থেকেও শাবানাকে নিয়ে সিনেমা বানিয়েছি। তার মধ্যে একটি সেরা সিনেমা হচ্ছে ‘নসিব’। এদেশের অন্যতম সুপারহিট সিনেমা হচ্ছে ‘নসিব’। এটার কথা কোনোদিনও ভুলব না। যেখানে শাবানাসহ অনেকেই ছিলেন। আজও সেইসব দৃশ্য চোখে ভাসে।’- যোগ করেন এ নায়ক।
শাবানা প্রসঙ্গে তার ভাষ্য, ‘এদেশের সিনেমায় তার মতো সফল অভিনেত্রী খুব কম এসেছেন। শাবানার সিনেমা মানেই হিট। যেখানে শাবানা সেখানেই সাফল্য। ২০ বছরেরও বেশি সময় তিনি অভিনয়ে নেই, তারপরও সবার হৃদয়ে আছেন। কীভাবে তা সম্ভব? একজন ভালো মানুষ এবং অতি মাত্রায় বড় মনের মানুষ হলেই তা সম্ভব। এটাই তার প্রাপ্তি।
তিনি আরও বলেন, ‘ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির সবচেয়ে অতিথিপরায়ণ অভিনেত্রী শাবানা। তিনি যে অবস্থানে ছিলেন, সেখানে থেকে এতটা বড় হৃদয়ের মানুষ হয়ে থাকা কম মানুষের পক্ষেই সম্ভব। তারপরও তিনি বড় মানুষ পরিচয় থেকে বিচ্যুত হননি। একেবারে নিচু থেকে শুরু করে টপ লেবেল পর্যন্ত ফিল্মের সবাই তার সঙ্গে কথা বলতে পারতেন, মিশতে পারতেন। ফিল্মের মানুষদের তিনি এতটাই সুন্দর চোখে দেখতেন এবং আপন ভাবতেন। এখানেই শাবানার কৃতিত্ব। তার বাড়িতে ফিল্মের সবাই যেতে পারতেন। মনটা বড় ছিল বলেই তা সম্ভব। অন্যদের চেয়ে তার বড় বৈশিষ্ট্য এখানেই। ফিল্মের সবার সঙ্গে তিনি আন্তরিক ছিলেন। এটা বিরল ঘটনা বলে আমি মনে করি।
‘শাবানা একদিনে হয়নি। অনেক সাধনা ও পরিশ্রম করে হয়েছেন। অনেক সাধনা করে তার মতো শিল্পীর জন্ম হয়েছে। তিনি এই উপমহাদেশের বড় অভিনেত্রী। তার খ্যাতি ছড়িয়ে আছে উপমহাদেশজুড়ে।’