• বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:৪০ অপরাহ্ন

মানবাধিকার লঙ্ঘনে অভিযুক্ত মোদিকে আমন্ত্রণ জানিয়ে সমালোচিত হোয়াইট হাউস

নিউজ ডেস্ক
আপডেটঃ : বুধবার, ২১ জুন, ২০২৩

মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসন এ সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্র সফররত ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির জন্য একটি রাষ্ট্রীয় নৈশভোজের আয়োজন করার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এদিকে, সমালোচকরা বলছেন যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মোদির ডানপন্থী সরকারের অধীনে ভারতে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে চোখ বন্ধ রাখছে।

মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র জন কিরবি সাংবাদিকদের বলেন যে মোদির মার্কিন সফর একটি ‘গভীর এবং ঘনিষ্ঠ’ অংশীদারিত্বের প্রতিশ্রুতি দেবে৷ ‘এই সফরটি একটি অবাধ, উন্মুক্ত, সমৃদ্ধ এবং ইন্দো-প্যাসিফিকের নিরাপত্তায় আমাদের দুই দেশের অংশীদারিত্বকে শক্তিশালী করবে,’ কিরবি বলেন, ‘ভারত হবে আগামী দশকগুলিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত অংশীদার।’

কিরবির মন্তব্যে অনেকাংশে অনুপস্থিত ছিল ভারতের মানবাধিকার রেকর্ড এবং মোদি সরকারের হিন্দুত্ববাদ নামে পরিচিত একটি অতি-ডান হিন্দু জাতীয়তাবাদী নীতি গ্রহণ সম্পর্কে উদ্বেগ, যা সমালোচকদের মতে দেশের সংখ্যালঘুদের, বিশেষ করে মুসলমানদের জন্য একটি প্রতিকূল পরিবেশ তৈরি করেছে। ‘মিডনাইটস বর্ডারস: এ পিপলস হিস্ট্রি অফ মডার্ন ইন্ডিয়া’ এর লেখক সুচিত্রা বিজয়ন বলেন, গত প্রায় এক দশক ধরে মানবাধিকার কর্মীরা নিয়মিত হোয়াইট হাউসকে জানিয়ে আসছেন যে, মোদির সরকার কর্তৃত্ববাদী, কট্টর ডানপন্থি, মুসলিম বিরোধী এবং সব সংখ্যালঘুদের বিরোধী।

সমালোচকরা বলছেন, হিন্দু জাতীয়তাবাদের তীব্র উত্থানের কারণে ভারতে যে মানবাধিকার লঙ্ঘন হচ্ছে তার বিষয়ে মোদিকে চাপ দিতে হবে। হিন্দু জাতীয়তাবাদীরা ভারতের ধর্মনিরপেক্ষ পরিচয়কে মুছে দিয়ে দেশটিকে একটি হিন্দু রাষ্ট্রে রূপান্তর করতে চায়। তাদের উত্থানের সঙ্গে সঙ্গে দেশটিতে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের অবস্থা দিন দিন খারাপ হচ্ছে। ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা অব্যাহতভাবে রাষ্ট্র-অনুমোদিত সহিংসতা এবং হয়রানির ঝুঁকিতে রয়েছে। মানবাধিকার সংস্থাগুলোর দাবি, এমন অবস্থায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কোনোভাবেই এই হিন্দুত্ববাদের উত্থানের পেছনে মোদির ভূমিকা উপেক্ষা করতে পারে না।

মোদিকে ২০০৫ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। তিনি প্রধানমন্ত্রী হওয়ার আগে হিন্দু চরমপন্থি গোষ্ঠীগুলিকে সমর্থন দিয়েছিলেন। অথচ এই গোষ্ঠীগুলো সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ও মুসলমানদের টার্গেট করার জন্য অভিযুক্ত। তবে এখন নিজের তৃতীয় হোয়াইট হাউস সফরের জন্য প্রস্তুত হচ্ছেন মোদি। অথচ ভারতে প্রতিনিয়ত মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে বলে একযোগে সরব হয়েছে একাধিক মানবাধিকার সংগঠন।

মোদির আমেরিকা সফর চলাকালীন আগামী সপ্তাহে সেই নিয়ে ওয়াশিংটনে বিক্ষোভ দেখাতে চলেছে তারা। আগামী ২২ জুন মোদিকে হোয়াইট হাউসে স্বাগত জানাবেন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। যে কারণে ওই দিন হোয়াইট হাউসের বাইরে মানবাধিকার সংগঠনগুলি একজোট হয়ে বিক্ষোভ দেখালেও, তাতে পারস্পরিক আলোচনা এবং সম্পর্ক প্রভাবিত হবে না বলেই ইঙ্গিত মিলছে। ভারতীয় গণমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, মোদি হোয়াইট হাউসে যাবেন যখন, সেই সময় বাইরে বিক্ষোভ দেখাবে দ্য আমেরিকান মুসলিম কাউন্সিল, পিস অ্যাকশন, ভেটরান্স ফর পিস এবং বেথেসডা আফ্রিকান সিমেট্রি কোয়ালিশন প্ল্যানের মতো সংগঠন। হোয়াইট হাউসের বাইরে মোদিকে লক্ষ্য করে ‘মোদি নট ওয়েলকাম’, ‘সেভ ইন্ডিয়া ফ্রম হিন্দু সুপারমেসি’র মতো ধ্বনি তোলা হতে পারে বলে জানা গেছে।

এর পাশাপাশি ওয়াশিংটনে আগামী সপ্তাহে মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এবং হিউম্যান রাইটস ওয়াচের তরফে বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। সেখানে বিভিন্ন দেশের নীতি নির্ধারণকারী থেকে সাংবাদিক, বিশেষজ্ঞদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। ওই অনুষ্ঠানে গুজরাট দাঙ্গায় মোদির ভূমিকা নিয়ে তৈরি বিতর্কিত তথ্যচিত্রের প্রদর্শন করা হবে।

মোদির সফর নিয়ে ইতোমধ্যেই হিউম্যান রাইটস ওয়াচ সংগঠনের এশিয়া বিভাগের ডিরেক্টর এলেন পিয়ার্সন বাইডেনকে চিঠি দিয়েছেন। মোদির সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে তো বটেই, প্রকাশ্যেই ভারতে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়টি তুলে ধরার আবেদন জানিয়েছেন তিনি। তবে মোদিকে বেশ ভাল রকমের সম্মানই দেখাতে যাচ্ছেন বাইডেন। তার জন্য আয়োজন করা হচ্ছে স্টেট ডিনারের। এর আগে শুধুমাত্র দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট ও ফ্রান্সের ফার্স্ট লেডির সম্মানে এ আয়োজন করেছিলেন বাইডেন। সূত্র: আল-জাজিরা।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ