২০২৪ সালে ভারতের লোকসভা নির্বাচন। তার আগে বিরোধী ঐক্যকে শাণ দিতে দেশটির বিহার রাজ্যের রাজধানী পাটনায় মিলিত হয় বিরোধী দলের নেতারা। মূলত লোকসভা নির্বাচনে মোদী সরকারকে শক্ত লড়াইয়ে ফেলতে বিজেপি বিরোধী জোট গঠনের লক্ষ্যে রোড ম্যাপ নির্ধারণ করতেই এই বৈঠক। বৈঠক থেকে কেন্দ্রের ক্ষমতাসীন দল বিজেপি ও মোদি সরকারকে নিশানা করে বিরোধীদল গুলো।
শুক্রবার পাটনা সার্কিট হাউজে অনুষ্ঠিত এই বৈঠকের নেতৃত্ব দেন বিহারের মুখ্যমন্ত্রী ও জনতা দল ইউনাইটেড (জেডিইউ) প্রধান নীতিশ কুমার এবং রাজ্যটির উপমুখ্যমন্ত্রী ও রাষ্ট্রীয় জনতা দল (আরজেডি) নেতা তেজস্বী যাদব।
তাদের ডাকে সাড়া দিয়ে এই বৈঠকে উপস্থিত হন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী, দলের সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে, দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী ও আম আদমি পার্টি (আপ) প্রধান অরবিন্দ কেজরিওয়াল, পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী আপ নেতা ভগবন্ত মান, আপ সংসদ রাঘব চাড্ডা, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী ও তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী মমতা ব্যানার্জি, তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক অভিষেক ব্যানার্জি, মহারাষ্ট্রের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ও শিবসেনা প্রধান উদ্ধব ঠাকরে, বিহারের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী লালু প্রসাদ যাদব, ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী ও ঝাড়খন্ড মুক্তি মোর্চা (জেএমএম) নেতা হেমন্ত সোরেন, ন্যাশনালিস্ট কংগ্রেস পার্টি (এনসিপি) প্রধান শারদ পাওয়ার, জম্মু-কাশ্মীরের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ও পিপলস ডেমোক্রেটিক পার্টি (পিডিপি) প্রধান মেহেবুবা মুফতি, ন্যাশনাল কনফারেন্স (এনসি) নেতা ওমর আব্দুল্লাহ, উত্তরপ্রদেশের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ও সমাজবাদী পার্টি (সপা) নেতা অখিলেশ যাদব, দ্রাবিরা মূনেত্রা কাঝাগাম (ডিএমকে) নেতা টি আর বালু, সিপিআই নেতা ডি রাজা, সিপিআইএম’এর সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি প্রমুখ।
বৈঠক শুরু হয় সকাল সাড়ে ১১ টায়। পাটনায় বিরোধীদের এই বৈঠকে ঘিরে দেশটির রাজনৈতিক মহলে যথেষ্ট আগ্রহ ছিল। গণমাধ্যমের নজর ছিল এই বৈঠকের দিকে। পাটনা শহর জুড়ে লাগানো হয়েছিল বড় বড় পোস্টার, হোর্ডিং, ফ্লেক্স। নিরাপত্তাও ছিল জোরালো।
বৈঠকে স্থির হয় আগামী জুলাই মাসে দুই দিনের বৈঠক বসতে চলেছে হিমাচল প্রদেশের সিমলাতে। যেখানে মোদি সরকারের বিরুদ্ধে রণনীতি ঠিক করতে বিরোধী দলগুলো একত্রিত হবে।
পরে বৈঠক শেষে যৌথ সংবাদ সম্মেলন থেকে কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে জানান, আগামী ১০-১২ জুলাই সিমলাতে বিরোধী দলের পরবর্তী বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।
কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী বলেন, ভারতের ভিত্তি আক্রমণের মুখে পড়েছে। সেক্ষেত্রে বিরোধী দল নমনীয়তার সঙ্গে একসঙ্গে কাজ করবে এবং অভিন্ন আদর্শগত মূল্যবোধ রক্ষা করবে।’ রাহুলের বার্তা ‘লড়াইটা মূলত ‘কংগ্রেসের ভারত জোড়ো যাত্রা এবং বিজেপির ভারত ভাঙ্গো কর্মসূচির মধ্যে।’ তিনি বলেন ‘একদিকে কংগ্রেসের লক্ষ্য ভারত জোড়ো কর্মসূচি অন্যদিকে বিজেপি ও আরএসএসের লক্ষ্য ভারতকে টুকরো করা। আর সেই লক্ষ্যেই আগামী ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনের আগে বিরোধী দলগুলো একত্রিত হতে যাচ্ছে।’
মমতা ব্যানার্জি বলেন, ‘পাটনায় যা শুরু হলো তা খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। আগামী দিনে তা গণ আন্দোলনে পরিণত হবে। তার অভিমত ‘বিজেপি যদি আগামী লোকসভা নির্বাচনে জেতে, তবে দেশে আর কোন নির্বাচন হবে না।’ তিনি বলেন ‘এদিনের বৈঠকে মূলত তিনটি ফোকাস ছিল। প্রথমত আমাদের ঐক্যবদ্ধ হওয়া, দ্বিতীয়, একসঙ্গে লড়াই করা এবং তৃতীয়ত সিমলা বৈঠক। বিজেপির যত এজেন্ডা আছে, আমরা বিরোধীরা একসঙ্গে তার মোকাবেলা কর।’
জম্মু-কাশ্মীরের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ওমর আব্দুল্লাহ বলেন ‘জম্মু ও কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী পর্যন্ত প্রতিটি সমমনা দল এদিনের বৈঠকে অংশ নিয়েছে। এটা ক্ষমতার লড়াই নয়, মূল্যবোধ ও আদর্শের লড়াই। যুক্তরাষ্ট্রের হোয়াইট হাউসে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি গণতন্ত্রের কথা বলছেন শুনে ভালো লাগলো। কিন্তু, এটা খুবই দুঃখজনক যে জম্মু ও কাশ্মীরে গণতন্ত্র দেখতে পাওয়া যাচ্ছে না।’
উদ্ধব ঠাকরে জানান, ‘যারা দেশের গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ এবং একনায়কতন্ত্র চালানোর চেষ্টা করবে, আমরা তার বিরুদ্ধেই সরব হব। আমাদের আজকের বৈঠকটা খুব ভালোভাবেই শুরু হয়েছে এবং আগামী দিনেও খুব ভালোভাবে চলবে বলে আশা প্রকাশ করি।’
তবে বিরোধী দলগুলির এই বৈঠককে কটাক্ষ করতে ছাড়েনি বিজেপি। এদিন সকালেই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বলেন, ‘মোদির নেতৃত্বে গোটা দেশে অনেক উন্নয়নমূলক কাজ হয়েছে কিন্তু বিরোধীদের কাজই হলো বিরোধিতা করা। আজ পাটনায় বিরোধীদের একটা ফটোসেশন হচ্ছে। বিপক্ষ দলের নেতারা একটা মঞ্চে শামিল হচ্ছে, তারা হয়তো ওই বৈঠক থেকে বিজেপি এবং মোদীজিকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিতে চায়। কিন্তু আমি তাদের বলবো, আপনারা যতই হাত মিলান না কেন, কখনোই একজোট হতে পারবে না। আর যদিও বা একত্রিত হয়ে যায় তবুও তারা যেন মানুষের মুখোমুখি আসে। ২০২৪ সালের নির্বাচনে ৩০০-এর বেশি আসন নিয়ে নরেন্দ্র মোদি ফের একবার দেশের প্রধানমন্ত্রী হবেন।’