স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম বলেছেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার পরপরই শিক্ষকদের বেতন জাতীয়করণ করেছিলেন। কারণ, তিনি জানতেন শিক্ষা ব্যতীত জাতীয় উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা সম্ভব নয়। স্বাধীনতার পর মাত্র ৭০০ কোটি টাকার বাজেটের সময়ও শিক্ষায় বিনিয়োগ করতে বঙ্গবন্ধু কার্পণ্য করেননি। বর্তমানে প্রতিযোগিতাপূর্ণ বিশ্বে প্রযুক্তির উৎকর্ষের যুগে টিকে থাকতে হলে প্রাথমিক শিক্ষার মানোন্নয়ন অপরিহার্য। প্রাথমিক শিক্ষায় আমাদের ছাত্রছাত্রী ভর্তির ক্ষেত্রে অর্জনের সাথে গুনগতমান সম্পন্ন শিক্ষা প্রদানেও সাফল্য অর্জন করতে হবে। তা না হলে উন্নত বাংলাদেশ গড়ার কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছানো যাবে না।
রোববার (২৫ জুন) রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউটে ‘প্রাথমিক শিক্ষায় সরকারি বিনিয়োগ: স্থানীয় অভিজ্ঞতা ও করণীয়’ শীর্ষক এক জাতীয় সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। এটি আয়োজন করে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) ও এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম।
শিক্ষকদের পদমর্যাদা ও সামাজিক অবস্থান সম্পর্কে মন্ত্রী বলেন, শিক্ষকদের কাজের মাধ্যমে নিজেদের সম্মান অর্জন করতে হবে এবং নেতিবাচক পথ পরিহার করতে হবে।
প্রাথমিক শিক্ষার মান উন্নয়নে স্থানীয় সরকার সম্পৃক্তকরণ বিষয়ে তিনি বলেন, উপজেলা পরিষদ প্রাথমিক শিক্ষার সাথে নানাভাবে জড়িত তবে ইউনিয়ন পরিষদকে কিভাবে স্থানীয় বিদ্যালয়ের শিক্ষার মান উন্নয়নে যুক্ত করা যায় তা নিয়ে আমাদের চিন্তা করতে হবে।
মো. তাজুল ইসলাম সরকারের ব্যর্থতার জন্য সরকারের সমালোচনাকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, তবে সাফল্যের জন্য কর্মস্পৃহা বজায় রাখতে স্বীকৃতিও দরকার। আমাদের এখানে সাফল্যের স্বীকৃতি দেওয়ার রেওয়াজ কম। প্রাথমিক শিক্ষায় সরকারের অনেক সাফল্যের উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি ছাত্রের সংখ্যা বর্তমানে ৯৮ শতাংশ হলেও তা শতভাগে উত্তীর্ণ করতে হবে এবং সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে বিদ্যালয়গামী শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধ করতে হবে।
সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, জাতীয় বাজেটে শিক্ষাখাতে বরাদ্দ বাড়ানোর তাগিদ দিয়ে সেইসাথে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সক্ষমতা বৃদ্ধির উপর গুরুত্বারোপ করেন।
ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের প্রতিনিধি এডুকেশন এন্ড হিউম্যান ডেভেলপমেন্ট টীম প্রোগ্রাম ম্যানেজার নাদিয়া রশীদ বলেন, করোনাকালীন প্রাথমিক শিক্ষায় ক্ষতি নিতে পুষিয়ে নিতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে হবে। এছাড়াও প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়নে কমিউনিটি সম্পৃক্ততা বাড়ানোর উপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি।
ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের প্রতিনিধি কাউন্সেলর ইউরাতে স্মলস্কাইট মার্ভিল বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন শিক্ষাকে প্রাধান্য দেয় যেখানে মানসম্মত ও গুণগত শিক্ষাই পারে পৃথিবীকে সুন্দর ও বসবাসযোগ্য করে গড়ে তুলতে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ১৬ শতাংশ শিক্ষার্থী এবং মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৩৫ শতাংশ শিক্ষার্থীর ঝরে পড়ে উল্লেখ করে তিনি এ হার কমানোর জন্য উদ্যোগ নেওয়ার কথা বলেন।
প্রাথমিক শিক্ষা বিষয়ক এই সম্মেলনে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিপিডির সিনিয়র রিসার্চ ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান। এতে আরও বক্তব্য রাখেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সদস্য শিরীন আখতার এমপি, সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন, ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের প্রতিনিধি কাউন্সেলর ইউরাতে স্মলস্কাইট মার্ভিল, ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের প্রতিনিধি এডুকেশন এন্ড হিউম্যান ডেভেলপমেন্ট টীম প্রোগ্রাম ম্যানেজার নাদিয়া রশীদ, ব্র্যাকের শিক্ষা উন্নয়ন ইনস্টিটিউটের প্রোগ্রাম হেড সমীর রঞ্জন নাথ, বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশের এডুকেশন গ্লোবাল প্র্যাকটিসের জ্যৈষ্ঠ অর্থনীতিবিদ সাঈদ রাশেদ আল জায়েদ যশ।