• বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ১০:৩৫ অপরাহ্ন

মণিপুরে সেনাবাহিনীর কাছ থেকে ‘সশস্ত্র বিদ্রোহীদের’ ছিনিয়ে নেয় মেইতেই নারীরা

নিউজ ডেস্ক
আপডেটঃ : রবিবার, ২৫ জুন, ২০২৩
কাংপোকপি জেলায় অভিযান চালাচ্ছে সেনা ও আসাম রাইফেলস - ছবি : বিবিসি

ভারতের দাঙ্গা উপদ্রুত মণিপুর রাজ্যে আটক হওয়া ডজনখানেক সশস্ত্র ব্যক্তিকে ‘মুক্তি দেয়া হয়েছে’ বলে ভারতীয় সেনাবাহিনী গত মধ্যরাতে ঘোষণা দিয়েছে। যাদের ছেড়ে দেয়া হয়েছে তাদের ‘জঙ্গি’ হিসেবে বর্ণনা করেছে দেশটির সেনাবাহিনী।

এই সশস্ত্র ব্যক্তিরা একটি বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীর সদস্য, যাদের কেন্দ্র মিয়ানমারে। মেইতেই অধ্যুষিত ইথাম গ্রাম থেকে তাদের আটক করা হয়েছিল।

কিন্তু গতকাল শনিবার তাদের মুক্তির দাবিতে প্রায় হাজার দেড়েক মানুষ সেনা সদস্যদের ঘিরে ধরলে সামরিক কর্তৃপক্ষ তাদের মুক্তি দিতে বাধ্য হয়।

সেনাবাহিনী আরো জানিয়েছে, ‘জঙ্গিদের’ মুক্তির দাবিতে যে জনতা বিক্ষোভ দেখাচ্ছিল তাদের মধ্যে বেশিরভাগই ছিলেন নারী।

ভারতীয় সেনাবাহিনীর যে ‘স্পিয়ার কোর’ মণিপুরে সহিংসতার মোকাবেলা নিয়ে টুইটারে নিয়মিত আপডেট জানাচ্ছে, তারা এই বিক্ষোভকারীদের ‘অ্যাগ্রেসিভ মব’, অর্থাৎ ‘আক্রমণাত্মক ক্ষুব্ধ জনতা’ বলে বর্ণনা করেছে।

সেনাবাহিনীর এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বিক্ষোভকারীদের সাথে প্রায় দিনভর মুখোমুখি সংঘাত চলার পর তারা সিদ্ধান্ত নেয় বেসামরিক মানুষের জীবন ঝুঁকিতে ফেলা উচিত হবে না এবং ধৃত ‘জঙ্গিদের’ মুক্তি দেয়া হবে।

যে সেনা কমান্ডার এই অপারেশনের দায়িত্বে ছিলেন তাকে এই ‘পরিণত সিদ্ধান্তে’র জন্য সেনাবাহিনীর তরফ থেকে ভূয়সী প্রশংসাও করা হয়েছে। তারা বলেছে, ‘ভারতীয় সেনাবাহিনীর যে একটি মানবিক মুখ আছে, এই সিদ্ধান্ত তারই পরিচায়ক।’

যেভাবে ছিনিয়ে নেয়া হলো
এর আগে শনিবার (২৪ জুন) ভোরে গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে সেনাবাহিনী মণিপুরের ইম্ফল ইস্ট জেলার ইথাম গ্রামে অভিযান চালায়। পুরো গ্রামটি ঘিরে ফেলে কোনায় কোনায় তল্লাশি চালানো হয়।

এরপর সেনাবাহিনী টুইট করে, ‘ওই অভিযানে ১২ জন কেওয়াইকেএল ক্যাডারকে প্রচুর অস্ত্রশস্ত্র, গোলাবারুদ এবং যুদ্ধের সরঞ্জামসহ আটক করা হয়েছে।’

‘কেওয়াইকেএল’ একটি মেইতেই বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী, যাদের সংগঠনের পুরো নাম ‘কাংলেই ইয়াউল কান্না লুপ’।

ওই ১২ জন ধৃত জঙ্গির মধ্যে (স্বঘোষিত) লে. কর্নেল মোইরাংথেম তাম্বা ওরফে উত্তমকেও শনাক্ত করা হয়েছিল বলে সেনাবাহিনী জানিয়েছে।

২০১৫ সালে ৬ ডোগরা রেজিমেন্টের ওপর হামলা চালানোর ঘটনায় এই উত্তমকেই মূল পরিকল্পনাকারী বলে চিহ্নিত করা হয়েছিল।

কিন্তু এর পরই বিশাল সংখ্যায় স্থানীয় জনতা সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায়। সেনা কর্তৃপক্ষ পরবর্তী ঘটনাপ্রবাহের যে বর্ণনা দিয়েছে তা এরকম :

‘প্রায় ১২০০ থেকে ১৫০০ মানুষের ক্ষুব্ধ জনতা সঙ্গে সঙ্গে টার্গেট এরিয়াটি ঘিরে ফেলে এবং সেনাবাহিনীকে অভিযান চালাতে বাধা দিতে থাকে। ওই জনতার নেতৃত্বে ছিলেন নারীরা ও স্থানীয় একজন গ্রাম প্রধান।’

‘ওই আক্রমণাত্মক জনতাকে বারবার অনুরোধ জানানো হতে থাকে সেনাবাহিনীকে আইন অনুযায়ী তাদের দায়িত্ব পালন করতে দিন, কিন্তু তাতে কোনো ইতিবাচক সাড়া মেলেনি।’

‘এই ধরনের বিশাল সংখ্যক ক্ষুব্ধ মানুষের বিরুদ্ধে সামরিক বাহিনীর বলপ্রয়োগ কী ধরনের সংবেদনশীল বিষয় হবে এবং সেটা করলে প্রাণহানিরও সম্ভাবনা থাকবে – এটা বিবেচনায় নিয়ে সুচিন্তিত সিদ্ধান্ত নেয়া হয় যে ধৃত ১২ জন ক্যাডারকেই স্থানীয় নেতার হাতে হস্তান্তর করা হবে।’

‘এরপর আমাদের সেনা কলামগুলো তাদের কর্ডন তুলে নেয় এবং অভিযানে জঙ্গিদের কাছ থেকে যে সব অস্ত্রশস্ত্র ও যুদ্ধউপকরণ উদ্ধার করা হয়েছিল সেগুলো নিয়ে এলাকা ত্যাগ করে।’

দিল্লির বৈঠক নিয়েও বিরোধ
এদিকে গতকাল (শনিবার) দিল্লিতে অনুষ্ঠিত এক সর্বদলীয় বৈঠকে দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ জানিয়েছেন, “প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ‘একেবারে প্রথম দিন থেকে মণিপুর পরিস্থিতির ওপর প্রতিনিয়ত নজর রাখছেন’ এবং ‘পরিপূর্ণ সংবেদনশীলতা নিয়ে পরিস্থিতি মোকাবেলায় আমাদের নির্দেশনা দিচ্ছেন’।”

ভারতের প্রধান বার্তা সংস্থা পিটিআই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে উদ্ধৃত করে এ খবর জানিয়েছে।

এর আগে মণিপুর পরিস্থিতি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী কেন নীরব, এই প্রশ্নে ভারতে সরকারকে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে। এমনকি আমেরিকায় প্রধানমন্ত্রী মোদির সদ্যসমাপ্ত রাষ্ট্রীয় সফরেও তাকে এই প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছে।

পিটিআইয়ের ভাষ্য অনুযায়ী, সর্বদলীয় বৈঠকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, গত ১৩ জুন থেকে মণিপুরে একটিও প্রাণহানি হয়নি এবং রাজ্যের পরিস্থিতি যে ‘ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হচ্ছে’ এটি তারই একটি উদাহরণ।

প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেস অবশ্য অমিত শাহর ডাকা এই বৈঠককে পুরোপুরি ‘লোকদেখানো’ বলে বর্ণনা করেছে।

কংগ্রেসের প্রধান মুখপাত্র জয়রাম রমেশ টুইট করে অভিযোগ করেছেন, বৈঠকে তাদের প্রতিনিধি ছিলেন মণিপুরের সবচেয়ে সিনিয়র রাজনীতিবিদ তথা তিনবারের নির্বাচিত মুখ্যমন্ত্রী ওকরাম ইবোবি সিং – কিন্তু তাকে তার বক্তব্যই পেশ করার সুযোগ দেয়া হয়নি।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ