জাতিসংঘের একটি পর্যবেক্ষণ সংস্থা জানিয়েছে, জাপানের সুনামিতে বিধ্বস্ত ফুকুশিমা পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে বর্জ্য পানি সমুদ্রে ছাড়ার পরিকল্পনা আন্তর্জাতিক মানদণ্ড মেনে করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা বলেছে, এই বর্জ্য পানি সমুদ্রে ফেললে পরিবেশের ওপর ‘নগণ্য’ প্রভাব পড়বে।
ফুকুশিমা পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বর্জ্য পানির জন্য সংরক্ষণের জায়গা ফুরিয়ে যাচ্ছে, যা পারমাণবিক চুল্লি ঠান্ডা করতে ব্যবহৃত হত। এদিকে জাপানের এই পরিকল্পনার বিরোধিতা করেছে চীন ও দক্ষিণ কোরিয়া।
টোকিও পানি ছাড়ার জন্য সময়সূচী ঘোষণা করেনি এবং পরিকল্পনাটি এখনও একটি নিয়ন্ত্রক সংস্থার কাছ থেকে অনুমোদনের প্রয়োজন।
২০১১ সালে ৯ মাত্রার ভূমিকম্পের ফলে সুনামি আঘাত হানে জাপানে। এতে ফুকুশিমা দাইচি পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের তিনটি চুল্লি প্লাবিত হয়। চেরনোবিলের পর এটিকে বিশ্বের সবচেয়ে খারাপ পারমাণবিক বিপর্যয় হিসেবে গণ্য করা হয়।
এই ঘটনার পরে কেন্দ্রের আশেপাশের অঞ্চল থেকে ১ লাখ ৫০ হাজারের বেশি মানুষকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল। ওই অঞ্চল এখনো ফাঁকা রাখা হয়েছে।
আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা ‘আইএইএ’ প্রধান রাফায়েল গ্রসি মঙ্গলবার দুই বছরের নিরাপত্তা পর্যালোচনার ফলাফল প্রকাশ করেছেন এবং এটিকে নিরপেক্ষ ও বৈজ্ঞানিক বলে বর্ণনা করেছেন। তিনি পানি ছাড়ার পর জাপানের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
গত মে মাসে সংস্থাটি বলেছিল, ফুকুশিমা অপারেটর টোকিও ইলেকট্রিক পাওয়ার (টেপকো) বর্জ্য পানিতে উপস্থিত বিকিরণের পরিমাণ সঠিক এবং সুনির্দিষ্ট পরিমাপ করার ক্ষমতা দেখিয়েছে। টেপকো থেকে একটি চূড়ান্ত অনুমোদন এই সপ্তাহের প্রথম দিকে আসতে পারে।
ফুকুশিমায় কী হয়েছিল?
কারখানাটি দৈনিক ১০০ কিউবিক মিটার বর্জ্য পানি উৎপাদন করে। কেন্দ্রের ট্যাংকগুলো ১.৩ মিলিয়ন ঘনমিটার পানি ধারণ করতে পারে। হাইড্রোজেন এবং কার্বনের তেজস্ক্রিয় রূপ ব্যতীত বেশিরভাগ তেজস্ক্রিয় উপাদান পানি থেকে ফিল্টার করা হয়।
কিন্তু ট্রিটিয়াম এবং কার্বন ১৪ এই দুটি আইসোটোপ পানি থেকে আলাদা করা কঠিন। টোকিও বলেছে, পানি প্রশান্ত মহাসাগরে ছেড়ে দেওয়া হবে, যা সমুদ্রের পানিতে মিশ্রিত হবে। তবে ওই পানিতে যে ট্রিটিয়াম এবং কার্বন ১৪ এর স্তর রয়েছে, তা আন্তর্জাতিক মানদণ্ড পূরণ করে।
সারা বিশ্বে পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো নিয়মিতভাবে ফুকুশিমা থেকে ট্রিটিয়ামের মাত্রার বেশি বর্জ্য পানি উৎপন্ন করে। কিন্তু আইএইএ- এর এই অনুসন্ধান জাপানি জনসাধারণ এবং প্রতিবেশী দেশগুলোর উদ্বেগ কমাতে পারছে না। চীন ইতিমধ্যেই জাপানের পরিকল্পনার কঠোর সমালোচনা করেছে এবং এটি অনুমোদনের বিরুদ্ধে আইএইএকে সতর্ক করেছে।
অন্যদিকে, দক্ষিণ কোরিয়া খাদ্য নিরাপত্তার আশঙ্কায় পানি ছাড়ার আগে সমুদ্রের লবণ মজুত করেছে। জাপানের স্থানীয় মাছধরা সম্প্রদায়গুলোও তীব্র আপত্তি জানিয়েছে, বলেছে এটি তাদের সুনামের আরো ক্ষতি করবে।