• মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:২৯ অপরাহ্ন

পদ্মায় ভাঙন; ‘আমগো আর শান্তি নাইরে বাঁজান’

নিউজ ডেস্ক
আপডেটঃ : বৃহস্পতিবার, ৬ জুলাই, ২০২৩

‘আমগো আর শান্তি নাইরে বাঁজান, চোখটা বুজলে যদি শান্তি পাই। পদ্মায় বেবাক গ্যাছে, অহন বউ, ছাওয়াল-নাতি লইয়া কোনহানে যামু, কিছুই কবার পারি না’- নিজ বাড়ির ভেঙে ফেলা ঘরের সামনে বসে এভাবেই মনের কথা বলছিলেন আশি বছরের রশিদ খাঁ।

ফরিদপুর সদর উপজেলার নর্থ চ্যানেল ইউনিয়নের ইউসুফ মাতুব্বরের ডাঙ্গী গ্রামের এ ব্যক্তিটি জানালেন, কমপক্ষে ৫/৬ বার নদী ভাঙনে বসতবাড়ী বদল করেছেন তিনি। সর্বশেষ যে জায়গায় ছিলেন সেখান থেকেও বসত বাড়িটি সরিয়ে নিচ্ছেন তার ছেলে-নাতিরা। এখন বাজারের কাছে একটি জায়গায় বাড়ি-ঘরের মালামাল রেখেছেন। ঝড়-বৃষ্টির দিনে কোথায় যাবেন, কিভাবে থাকবেন তা নিয়েই যত চিন্তা রশিদ খাঁ ও তার পরিবারের সদস্যদের। শুধু রশিদ খাঁ একাই নন, নর্থ চ্যানেল ইউনিয়নের ইউসুফ মাতুব্বরের ডাঙ্গী, সোবহান ফকিরের ডাঙ্গীসহ বেশ কয়েকটি গ্রামের প্রায় তিন শতাধিক পরিবারের সবারই চোখে দুশ্চিন্তার ছাপ। নদী ভাঙনের কবলে পড়া এসব গ্রামের মানুষ এখন সরিয়ে নিচ্ছেন তাদের আশ্রয়ের শেষ সম্বল বাড়ির মালামাল। কেটে নিচ্ছেন গাছপালা। পদ্মার তাণ্ডবে বিগত তিন মাসের ব্যবধানে ১৪৭টি বসতবাড়ি, কয়েক শ একর ফসলী জমি, কয়েক কিলোমিটার কাঁচা-পাকা সড়ক চলে গেছে নদীগর্ভে। এখন হুমকির মুখে রয়েছে ১টি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কমিউনিটি ক্লিনিক, মসজিদসহ কয়েকশ বাড়িঘর ও ফসলী জমি।

স্থানীয়রা জানান, প্রতি বছর পদ্মা নদীর ভাঙনে দিশেহারা থাকেন পদ্মানদী বেষ্টিত নর্থ চ্যানেল ইউনিয়নের বাসিন্দারা। শুকনো মৌসুমে নদী থেকে অবাধে বালু কাটার কারণে শুস্ক মৌসুম থেকে ভাঙন শুরু হয়। সেই সময় কয়েকদিনে নদীগর্ভে বিলিন হয় অসংখ্য বসতবাড়ী, ফসলী জমি। বর্ষা মৌসুমের শুরুতে ভাঙনের তীব্রতা বেড়েছে। গত কয়েকদিনে নদীগর্ভে চলে গেছে বেশ কয়েকটি বসতবাড়ি। ফসলী জমি ও পাকা রাস্তাও বিলিন হয়েছে নদীতে। বর্তমানে নদী তীরের মানুষের মাঝে আতংক বিরাজ করছে। নদীতে বিলিন হওয়ার আশংকায় অনেকেই তাদের বসতবাড়ী ভেঙে সরিয়ে নিতে দেখা গেছে। মূল্যবান গাছ পালাও কেটে ফেলা হচ্ছে।
নদী ভাঙন কবলিত এলাকার মানুষের সাথে কথা হলে তারা জানান, প্রায় দুই কলোমিটার দূরে ছিল পদ্মা নদীর অবস্থান। গত কয়েক মাস আগে নদী থেকে ড্রেজার দিয়ে রাতের আঁধারে প্রভাবশালী একটি মহল দেদারছে বালু উত্তোলন করে। বালু উত্তোলনের কারণেই এ বছর নদী ভাঙনের সৃষ্টি হয়েছে। নদী থেকে বালু তোলা বন্ধ না হলে কয়েক বছরের মধ্যেই নর্থ চ্যানেল ইউনিয়নটি মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাবে।

নর্থ চ্যানেল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হাজী মোফাজ্জেল হোসেন জানান, গত কয়েকদিন ধরে নদী ভাঙন তীব্র আকার ধারন করেছে। বিষয়টি পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে জানানো হলেও এখন পর্যন্ত কার্যকর কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। নদী ভাঙনরোধে দ্রুতই ব্যবস্থা গ্রহণের কথা জানান তিনি।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী পার্থ প্রতিম সাহা জানান, নদী ভাঙন শুরু হবার পর গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে প্রাথমিক পর্যায়ে বালুর বস্তা ফেলে প্রতিরোধের চেষ্টা চলছে। নদী ভাঙনরোধে জরুরী ভিত্তিতে চাহিদাপত্র পাঠানো হয়েছে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ