সুনামগঞ্জের শান্তিগঞ্জ উপজেলার পল্লীতে মসজিদে দানকৃত একটি কাঁঠালের নিলাম নিয়ে দু’পক্ষের সংঘর্ষের ঘটনায় মুখলেছুর রহমান (৬০) নামে আরো একজনের মৃত্যু হয়েছে। তিনি হাসনাবাদ গ্রামের মৃত আজির মোহাম্মদের ছেলে। এ নিয়ে নিহতের সংখ্যা দাঁড়ালো চারজনে।
সোমবার (১১ জুলাই) সকালের ওই সংঘর্ষে আহত হয়ে তিনি প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে গ্রেফতারের ভয়ে রাতে আত্মীয়ের বাড়িতে অবস্থান করায় সেখানে তার মৃত্যু হয় বলে জানা গেছে।
এর আগে এ সংঘর্ষে তিনজন নিহত হন। এসময় উভয়পক্ষের অন্তত ৪০ জন আহত হন।
উপজেলার জয়কলস ইউনিয়নের হাসনাবাদ গ্রামে এই ঘটনা ঘটে।
এ ঘটনার খবর পেয়ে শান্তিগঞ্জ থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
সোমবার নিহতরা হলেন, হাসনাবাদ গ্রামের আব্দুল লতিফের ছেলে নুরুল হক (৫০), আব্দুস সুফির ছেলে বাবুল মিয়া (৫৫) ও আব্দুল বাসিরের ছেলে শাহজাহান মিয়া (৪৫)। আহতদের নাম ও পরিচয় জানা যায়নি।
সংঘর্ষে আহত আরো দুইজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানা গেছে।
মঙ্গলবার (১১ জুলাই) দুপুরে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত এ ঘটনায় ছয়জনকে আটক করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। এদিকে, গ্রেফতার এড়াতে হাসনাবাদ গ্রাম এখন পুরুষশূন্য।
স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, হাসনাবাদ গ্রামে দীন ইসলাম ও মালদার মেম্বারের পক্ষের মাঝে দীর্ঘদিন থেকে বিরোধ চলে আসছে। এ নিয়ে একাধিকবার সংঘর্ষ হয়েছে। চলছে মামলা-মোকদ্দমা। সম্প্রতি উপজেলা চেয়ারম্যান, ইউএনওসহ উপজেলার ও ইউনিয়নের স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে সালিশ বৈঠকে দীর্ঘদিনের পুরনো বিরোধ মীমাংসা হয়।
গত শুক্রবার হাসনাবাদ গ্রামের এক ব্যক্তি মসজিদে একটি কাঁঠাল দান করেন। জুমার নামাজের পর গ্রামবাসীর উপস্থিতিতে কাঁঠালটি নিলামে তোলা হয়। এতে গ্রামের দীন ইসলামের পক্ষের একজন ও মালদার মেম্বারের পক্ষের একজনের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। এ নিয়ে গত ৩/৪ দিন থেকে দুই পক্ষের মাঝে উত্তেজনা বিরাজ করছিল।
রোববার রাতে এ নিয়ে হঠাৎ দু’পক্ষের উত্তেজনা বিরাজ করলে চেয়ারম্যানসহ স্থানীয়রা গিয়ে দুই পক্ষকে মারামারি না করার অনুরোধ করেন। রাত পেরোলেই সোমবার সকালে দুই পক্ষের আবার উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। তখন চেয়ারম্যানসহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ বিষয়টি সমাধান করতে হাসনাবাদ গ্রামে ছুটে যান। দুই পক্ষের মুরুব্বীদের বুঝিয়ে সালিশে মীমাংসার আশ্বাস দিয়ে সংঘর্ষে না জড়ানোর অনুরোধ করলে দুই পক্ষই তা মেনে নেয়। কিন্তু চেয়ারম্যানসহ শালিসকারীরা চলে যাওয়ার পরপরই উভয় পক্ষের লোকজন দেশীয় অস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়।
শান্তিগঞ্জ থানার ওসি মো: খালেদ চৌধুরী ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, হাসনাবাদ গ্রামের সংঘর্ঘের ঘটনায় এখন পর্যন্ত চার জনের মৃত্যু হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে এলাকায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
এ ঘটনায় জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপারসহ প্রশাসনের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। সংঘর্ষে জড়িতদের গ্রেফতারে পুলিশী অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
তবে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত কোনো পক্ষেই মামলা দায়ের করেননি বলে জানা গেছে।