এক বছরেরও বেশি সময় আগে পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোর সদস্যপদ চেয়েছিল সুইডেন। কিন্তু বরাবরই আপত্তি তুলে বাধা দিত তুরস্ক। কিন্তু এবার আপত্তি তুলে নিয়ে সুইডেনকে ন্যাটোয় নিতে রাজি হয়েছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ান।
এর ফলে শেষ হতে যাচ্ছে সুইডেনের দীর্ঘ প্রতীক্ষা। অবশেষে বিশ্বের সর্ববৃহৎ ও শক্তিশালী সামরিক জোটের সদস্য হতে যাচ্ছে স্ক্যান্ডিনেভিয়ান এই দেশটি।
ন্যাটোর নিয়মানুযায়ী, নতুন সদস্য হওয়ার জন্য জোটের প্রত্যেকটি দেশের সমর্থন প্রয়োজন। প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানের আপত্তির কারণে সুইডেনের আবেদন তাই ঝুলেই ছিল। কিন্তু পরিস্থিতি ভিন্ন দিকে মোড় নিল সোমবার (১০ জুলাই)।
সেদিন জোটের মহাসচিব জেনস স্টলটেনবার্গ ও সুইডেনের প্রধানমন্ত্রী উলফ ক্রিস্টারসনের সঙ্গে লিথুয়ানিয়ায় একটি বৈঠক হয়। এরপরই সুইডেনকে ন্যাটোয় নিতে রাজি হয়ে যান এরদোয়ান।
মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম মিডল ইস্ট আই মঙ্গলবার (১১ জুলাই) এ বিষয়ে একটি বিশেষ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। তাতে বলা হয়েছে, প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান যে সুইডেনকে ন্যাটোয় নিতে রাজি হলেন তার কারণ দুটি।
প্রথম কারণটি হলো—মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তুরস্কের কাছে নতুন ৪০টি এফ-১৬ যুদ্ধবিমান বিক্রি করবে, পুরাতন যুদ্ধবিমান সংস্কারের জন্য যন্ত্রাংশ দেবে। পাশাপাশি আঙ্কারাকে ৯০০টি এয়ার টু এয়ার ক্ষেপণাস্ত্র এবং ৮০০টি বোমা সরবরাহ করবে ওয়াশিংটন। আর দ্বিতীয় কারণটি হলো— তুরস্কের ওপর থেকে অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা তুলে নেবে কানাডা।
২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে বিশেষ সামরিক অভিযান শুরু করে রাশিয়া। সে সময় নিজেদের নিরাপত্তার কথা ভেবে ন্যাটোর সদস্য হতে চায় সুইডেন এবং ফিনল্যান্ড। ২০২২ সালের মে মাসে দেশ দুটি এ বিষয়ে আবেদন করে।
এর এক বছর পর চলতি বছরের ৩০ মে ফিনল্যান্ডের সদস্যপদের অনুমোদন দেয় তুরস্কের পার্লামেন্ট। কিন্তু সুইডেনের বিষয়টি আটকে রাখে তারা।
তবে গতকাল মঙ্গলবার লিথুয়ানিয়ার রাজধানীতে ন্যাটোর বার্ষিক সম্মেলন শুরুর আগে সুইডেনের সদস্যপদ নিয়ে তৎপরতা শুরু করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। এরদোয়ানকে রাজি করাতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন কয়েকবার ফোনও করেন।
পরে গণমাধ্যমকে জো বাইডেন জানান, যদি তুরস্ক সুইডেনের সদস্যপদের অনুমোদন দিতে সম্মত হয় তাহলে তাদের যুদ্ধবিমান দেওয়া হবে।
অপরদিকে ২০১৯ সালে উত্তর সিরিয়ায় সামরিক অভিযানের প্রতিবাদে ২০২০ সালে তুরস্কের ওপর অস্ত্র বিক্রির নিষেধাজ্ঞা দেয় কানাডা। তবে দুই দেশের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের মধ্যে বৈঠকের পর নিষেধাজ্ঞাটি আংশিক তুলে নেয় দেশটি।
পরে আঙ্কারার কাছে ২০২০ সালের জুনে ড্রোন অপটিকস বিক্রির সিদ্ধান্ত নেয় অটোয়া। কিন্তু ওই বছরের জুলাইয়ে নাগোরনো-কারাবাখ যুদ্ধে ব্যবহৃত ড্রোনে কানাডার তৈরি ওয়েসক্যাম অপটিকস ব্যবহার করায় আবারও নিষেধাজ্ঞা দেয় কানাডা। পূর্বে কানাডার ড্রোন অপটিকসের ওপর অনেক বেশি নির্ভর ছিল তুরস্ক।
মিডেল ইস্ট আইয়ের বিশেষ প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ন্যাটো সম্মেলনের আগেই তুরস্ক সুইডেনের সদস্যপদের অনুমোদন দিতে সম্মত হয়েছিল। কিন্তু গত ২৯ জুন স্টকহোমের একটি মসজিদের বাইরে পুলিশের অনুমতি নিয়ে মুসলমানদের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ কোরআন পোড়ালে ক্ষিপ্ত হন প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান। তবে এ ঘটনার চারদিন পর বিষয়টি নিয়ে ক্ষমা চায় সুইডেন।
জানা গেছে, ন্যাটো সম্মেলনে যোগ দেওয়ার আগে জো বাইডেনের কাছে এরদোয়ান যে দাবি করেছেন, তা হলে তুরস্ককে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য করে বিবৃতি দিতে হবে। আর এরদোয়ানের এমন দাবি শুনে অবাক হন জো বাইডেন।
তিনি এরদোয়ানকে জানান, যসাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের শাসনামলে সিনেটর ছিলেন জো বাইডেন। তখন তুরস্কের ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্যপদের জন্য লবিং করেছেন। ফলে বর্তমান দাবিতেও সমর্থন জানাবেন।