• বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:২৫ পূর্বাহ্ন

মাধ্যমিক শিক্ষা জাতীয়করণের দাবি: ‘বৈষম্যের’ অবসান চান লাখো শিক্ষক

নিউজ ডেস্ক
আপডেটঃ : বুধবার, ১৯ জুলাই, ২০২৩
ফাইল ছবি

দেশের মাধ্যমিক শিক্ষা জাতীয়করণের (সরকারিকরণ) দাবিতে আন্দোলন করছেন এমপিওভুক্ত মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা। গত ১১ জুলাই থেকে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে তারা অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছেন।

আন্দোলনরত শিক্ষকদের অভিযোগ, সরকারি স্কুলে তাদের সমকক্ষ শিক্ষকরা একই কাজ করে যে উৎসবভাতা, বাড়ি ভাড়াসহ আনুসাঙ্গিক বেতন-ভাতা পান, তার অর্ধেকও বেসরকারি স্কুলের শিক্ষকদের দেওয়া হয় না।

গত সোমবার বিকালে টানা আড়াই ঘন্টা বৈঠক করেও শিক্ষকদের ক্লাসে ফেরাতে পারেনি মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি)। বৈঠকে মাউশির পক্ষ থেকে যে আশ্বাস দেওয়া হচ্ছে—তাতে বিশ্বাস রাখতে পারছেন না শিক্ষকরা। আলোচনা আর আন্দোলন একইসঙ্গে চালিয়ে দাবি আদায়ের লক্ষ্যে পৌঁছাতে চাচ্ছেন তারা।

বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির ব্যানারে এই লাগাতার কর্মসূচিতে ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলা থেকে আসা বিপুলসংখ্যক শিক্ষক অংশ নিচ্ছেন। আন্দোলনকারী শিক্ষকেরা বলছেন, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তাঁরা ঘরে ফিরবেন না।

বাংলাদেশ শিক্ষাতথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরোর (ব্যানবেইস) তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে দেশে ২০ হাজার ৯৬০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে (স্কুল ও কলেজ মিলিয়ে) মাধ্যমিক স্তর পড়ানো হয়। এর মধ্যে সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ৬৮৪টি, বাকি ২০ হাজার ২৭৬টি বেসরকারি।

সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে মাধ্যমিক স্তরের এসব প্রতিষ্ঠানে মোট শিক্ষার্থী ১ কোটি ১ লাখ ৯০ হাজার ২২ জন। আর মোট শিক্ষক আছেন পৌনে তিন লাখের মতো।

বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে অধিকাংশই এমপিওভুক্ত। অর্থাৎ এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা সরকার থেকে বেতনের মূল অংশসহ কিছু ভাতা পান।

বেসরকিারি প্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষক-কর্মচারীরা দীর্ঘদিন ধরে এসব প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণের দাবি জানিয়ে আসছেন। সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীদের মধ্যে আর্থিক সুবিধার ক্ষেত্রে ‘বৈষম্য’ নিরসন চান তাঁরা।

মাধ্যমিক শিক্ষা জাতীয়করণের দাবিতে শিক্ষকেরা নানা সময় উপজেলা থেকে শুরু করে জেলা ও বিভাগীয় শহরে সমাবেশ, মানববন্ধন, বিক্ষোভ মিছিল, প্রতীকী অনশন, অবস্থান ধর্মঘট, কর্মবিরতি করেছেন।

এছাড়াও শিক্ষকেরা তাদের দাবি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী, অর্থমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রীর নিকট বারবার স্মারকলিপিও দিয়েছেন। তবে কোনো ধরনের অগ্রগতি না হওয়ায় এবার তাঁরা জাতীয়করণের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যক্ষ মো. বজলুর রহমান মিয়া জানান, এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা মাত্র ২৫ শতাংশ উৎসব ভাতা, এক হাজার টাকা বাড়ি ভাড়া এবং ৫০০ টাকা চিকিৎসা ভাতা পান।

জাতীয়করণের পক্ষে যুক্তি দেখিয়ে তিনি বলেন, ‘একই কারিকুলামের অধীন একই সিলেবাস, একই একাডেমিক সময়সূচি, একইভাবে প্রশ্নপত্র প্রণয়ন ও উত্তরপত্র মূল্যায়নের কাজে নিয়োজিত থেকেও আর্থিক সুবিধার ক্ষেত্রে সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের মধ্যে বৈষম্য রয়েছে। এবার দাবি আদায় না করে আমরা ফিরব না।’

মাউশির বৈঠক

লাগাতার অবস্থানের একপর্যায়ে গত সোমবার বিকালে আন্দোলনরত শিক্ষক নেতাদের সঙ্গে আলোচনায় বসেন মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) মহাপরিচালক অধ্যাপক নেহাল আহমেদ।

টানা আড়াই ঘণ্টার বৈঠকে শিক্ষক প্রতিনিধিদের দাবির বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করা এবং আলোচনা করে সমাধানের আশ্বাস দেন মাউশি মহাপরিচালক। এ সময় তিনি চলমান আন্দোলন স্থগিতের জন্য শিক্ষক নেতাদের অনুরোধ করেন।

মাউশির মহাপরিচালক অধ্যাপক নেহাল আহমেদের নেতৃত্বে বৈঠকে অংশ নেন মাউশির পরিচালক (কলেজ ও প্রশাসন) অধ্যাপক শাহেদুল খবির চৌধুরীসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। শিক্ষক নেতাদের মধ্যে বিটিএর সভাপতি বজলুর রহমান, সম্পাদক শেখ কাওছার আহমদ, সাংগঠনিক সম্পাদক ইকবাল হোসেন প্রমুখ। আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরাও এ বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠক শেষে মাউশির মহাপরিচালক অধ্যাপক নেহাল আহমেদ বলেন, ‘আন্দোলনকারী শিক্ষকদের দাবি উচ্চ পর্যায়ে অবহিত করব। শিক্ষার্থীদের স্বার্থে আন্দোলন প্রত্যাহার করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিরে যেতে শিক্ষকদের অনুরোধ করেছি।’

বৈঠক শেষে বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক শেখ কাওছার আহমেদ বলেন, ‘চলমান আন্দোলন স্থগিতের বিষয়ে সব জেলা, অঞ্চল ও মহানগর কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে আলোচনা করা হবে। এরপর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তবে এখন পর্যন্ত আমাদের অবস্থান হলো আলোচনা ও আন্দোলন দুটোই একসঙ্গে চলবে। আমরা চাই বেসরকারি মাধ্যমিক শিক্ষা জাতীয়করণের সুস্পষ্ট ঘোষণা।’

বৈঠক শেষে আন্দোলনকারী শিক্ষক সংগঠন বিটিএ সভাপতি বজলুর রহমান মিয়া বলেন, ‘মাউশি ডিজিসহ অন্যরা আমাদের জানিয়েছেন, বর্তমানে শিক্ষামন্ত্রী ও শিক্ষাসচিব অসুস্থ। তবে মাউশির পক্ষ থেকে আমাদের দাবির বিষয়টি মন্ত্রীকে জানানো হবে। এরপর মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত জানা যাবে।’

প্রসঙ্গত, ১১ জুলাই থেকে প্রেসক্লাবের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে আসছেন শিক্ষকেরা। আন্দোলনের অংশ হিসেবে গত রবিবার সারা দেশে ক্লাস বন্ধ রেখে অবস্থান কর্মসূচি পালন করা হয়।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ