• মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২:৩০ পূর্বাহ্ন

কেন মুখের ঘা হয়? এর কারণ উপসর্গ ও করণীয় কী?

নিউজ ডেস্ক
আপডেটঃ : সোমবার, ১৪ আগস্ট, ২০২৩

আমাদের মুখের ভেতর নরম যে আবরণ থাকে, তাকে মিউকাস মেমব্রেন বলে। এই মেমব্রেন ক্ষয় হয়ে যাওয়ার কারণে মুখগহ্বরে ঘা বা ক্ষত বা আলসারের সৃষ্টি হয়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এটি কোনো ছোঁয়াচে রোগ নয়। তবে কিছু ক্ষেত্রে বেশ যন্ত্রণাদায়ক হতে পারে। এমনকি ক্যানসার পর্যন্ত হতে পারে।

মুখের ভেতরে, গালের নরম মাংসপেশিতে, জিহ্বার এক পাশে একধরনের ঘা দেখা যায়। যার নাম অ্যাপথাস আলসার। ছোট্ট একটি গোলাকার অংশ সাদাটে হয়ে ওঠে। আর সাদা অংশটার মধ্যে অনেক সময় পুঁজ জমে থাকে। পুঁজের চারপাশে হালকা একটা সীমানা থাকে। গোলাকার বা ছোট্ট ডিম্বাকৃতির অংশে যা হয়।

মুখের ঘা কেন হয়?

মুখে আলসার বা ঘা এক ধরনের ক্ষত, যা সাধারণত ব্যথাযুক্ত হয়ে থাকে। এই ঘা মুখের মাড়ি, ঠোঁট, জিহ্বা, গালের ভেতরের অংশ ও তালুতে হয়ে থাকে। সাধারণত আঘাতের কারণে (যেমন ভাঙা দাঁত বা গোড়া), হরমোনাল পরিবর্তন বা মানসিক চাপ থেকে হয়ে থাকে। এই ঘাগুলো সাধারণত এমনিতে চলে যায় বা কোনো কোনো সময় চিকিৎসা লাগে।

বেশির ভাগ সময়ে ঘাগুলোতে ব্যথা হওয়ার কারণে কথা বলতে, খাওয়া দাওয়া করতে বা পানি পান করার সময় সমস্যা হয়। কোনো কোনো সময় মুখে আলসার ভাইরাসজনিত কারণ বা অটো ইমিউন ডিজিজ, যা পরিপাকতন্ত্রের সমস্যাজনিত কারণে হয়ে থাকে। সবচেয়ে বেশি হয়ে থাকে অ্যাপথাস আলসার। এ ছাড়া দেখা যায়, ওরাল লাইকেন প্ল্যানাস, লিউকোপ্লাকিয়া, ইরাইথ্রোপ্লাকিয়া, ওরাল থ্রাস ও মুখের ক্যান্সার।

মুখের ঘায়ের কারণ

দাঁতের যেকোনো ধরনের ট্রিটমেন্ট করার সময় ওরাল টিস্যুতে আঘাতজনিত কারণে হতে পারে; অসাবধানতায় মুখের গালে বা জিহ্বায় কামড় লাগার কারণে হতে পারে; এলার্জির কারণে হতে পারে; অর্থোডোনটিক্স ব্রেসেস বা রিটেইনারের কারণে আঘাত লাগতে পারে; টুথপেস্টে এবরেসিভ উপাদান বেশি থাকলে সেখান থেকে মুখে ঘা হতে পারে; এসিডিক খাবার যেমন—কমলা, আপেল ও স্ট্রবেরি জাতীয় ফল বেশি খেলে হতে পারে; মানসিক চাপের কারণেও হতে পারে; অনেক সময় ঘুম কম হলেও হতে পারে।

মুখের ঘায়ের উপসর্গ

ঘার চারপাশে লাল দাগ দেখা যায়; ক্ষতস্থান হলুদ, সাদা বা ধূসর বর্ণের হয়ে থাকে; ক্ষতের চারপাশে ফুলে যেতে পারে; দাঁত ব্রাশ করার সময় ব্যথা হতে পারে; ঝাল, লবণাক্ত খাবার, টকজাতীয় খাবার খাওয়ার সময় ব্যথা বেশি অনুভব হতে পারে।

মুখের ঘা হলে করণীয়

প্রচুর পরিমাণ পানি খেতে হবে (৮ গ্লাস সর্বনিম্ন); মুখ ও দাঁতের সঠিকভাবে যত্ন নিতে হবে; প্রতিদিন লবণ গরম পানি দিয়ে কিছু সময় ঘরে কুলকুচি করতে হবে; সমপরিমাণ পানির সঙ্গে হাইড্রোজেন পার-অক্সাইডের সঙ্গে পানি মিশিয়ে কুলকুচি করা যেতে পারে; গরম, ঝাল ও ভাজাপোড়া খাবার বর্জন করতে হবে; এনেসথেটিক্স জেল ব্যবহার করা যেতে পারে।

মুখের ঘায়ের চিকিৎসা

বেশির ভাগ মুখের ঘা এমনিতেই ভালো হয়ে যায়। ফিজিশিয়ান সাধারণত উপসর্গ নিরাময়ের জন্য ওষুধ দিয়ে থাকেন। এন্টিসেপটিক জেল বা মাউথ ওয়াশ ব্যবহার করা। স্টেরয়েড ওয়েনমেন্ট (ট্রায়াম সিনোলন)। ইমিউনো সাপ্রেসিভ ওষুধ সেবন করা (বেশি গুরুতর হলে)।

অবহেলা নয়

মুখের ঘা নিয়ে অবহেলা করা যাবে না। মুখের ঘায়ের জন্য অবশ্যই রেজিস্টার্ড দন্তচিকিৎসকের (বিডিএস) পরামর্শ নিতে হবে। প্রয়োজনে বিশেষজ্ঞ মতামতের জন্য ওরাল অ্যান্ড ম্যাক্সিলোফেসিয়াল সার্জনদের শরণাপন্ন হতে হবে। সবচেয়ে জরুরি বিষয় হলো, দুই সপ্তাহ বা ১৫ দিনের বেশি যদি স্থায়ী হয়, অবশ্যই বায়োপসি বা মাংসের টিস্যু পরীক্ষা করে দেখতে হবে। আলসারের প্রকৃত কারণ চিহ্নিত করা গেলে নির্দিষ্ট রোগের জন্য সঠিক চিকিৎসা নিশ্চিত করা সম্ভব এবং কার্যকরী।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ