ভালো নেই সাভারের ২১ শে আগস্ট গ্রেনেড হামলায় আহত মাহাবুবা পারভীন। বয়সের ভারে বিভিন্ন রোগ বাসা বেঁধেছে তার শরীরে।
১৯ বছর ধরে ১৮শ’ গ্রেনেডের স্প্লিন্টার বয়ে বেড়াচ্ছেন মাহবুবা পারভীন। ২০০৪ সালে ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে নেতাকর্মীদের সঙ্গে তিনিও যোগ দিয়েছিলেন সমাবেশে। সবে এক বছর রাজনীতির অভিজ্ঞতা তখন মাহবুবার। কিন্তু রক্তের তেজ আর আওয়ামী লীগের প্রতি ভালোবাসায় কিছু বোঝার কায়দা ছিল না। বিকট শব্দে বিস্ফোরিত হলো গ্রেনেড। নিমিশেই মাটিতে লুটিয়ে পড়লেন মাহবুবা। ১৯ বছর ধরে ১৮শ’ স্প্লিন্টারের যন্ত্রণা বয়ে বেড়াচ্ছেন মাহবুবা পারভীন।
সাভার পৌর মহল্লার ব্যাংক কলোনির ৩৬ নম্বর বাড়িতে সেইদিনের অভিশাপ্ত স্মৃতিগুলো এই প্রতিবেদককে করছিলেন মাহবুবা পারভীন।
কথায় কথায় জানালেন, ২০০৩ সালে বর্তমান সাভারের পৌর মেয়র হাজী আব্দুল গণির মাধ্যমে রাজনীতিতে হাতেখড়ি মাহবুবার। তারপর থেকেই রাজনৈতিক বিভিন্ন কার্যক্রমে সক্রিয় হয়ে ওঠেন তিনি। ২০০৪ সালে মাহবুবা ঢাকা জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদিকা ছিলেন।
রাজনীতির সঙ্গে জড়িত থাকার সুবাদে ঢাকায় সভানেত্রীর বিভিন্ন কার্যক্রমে অংশ নিতেন তিনি। ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশে মাহবুবা অংশ নিয়েছিলেন বেলা ১২টায়। বিকেল ৩টায় সমাবেশ শুরু হয়। গ্রেনেড হামলার সময় মঞ্চের নিচে ছিলেন মাহবুবা। হঠাৎ বিকট শব্দে বিস্ফোরিত হয় গ্রেনেড। এর কিছু সময় পর রক্তাক্ত অবস্থায় মাঠিতে লুটিয়ে পড়েন তিনি।
মাহবুবা বলেন, সেদিন কেউ ভাবেবি আমি বেঁচে আছি। ভ্যানে করে অন্য সবার সঙ্গেই আমাকে হাসপাতালে নিয়ে আসে। সেই সময় স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা আশীষ কুমার মজুমদারকে আমার পরিবারের সদস্যরা ফোন দেয়। তখন তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে গিয়ে আমার লাশের খোঁজ করছিলেন। কিন্তু দেখলেন দ্বিতীয় তলায় ফ্লোরে আমি শুয়ে আছি।’
‘আমার চিকিৎসার জন্য অন্য হাসপাতালে ভর্তির চেষ্টা করলেন আশীষ কুমার মজুমদার। কিন্তু স্প্লিন্টারের ক্ষত-বিক্ষত দেখে হাসপাতালে ভর্তি নিচ্ছিল না। পরে বঙ্গবন্ধু মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এরপর উন্নত চিকিৎসার জন্য কলকতার পিয়ারলেস হাসপাতালে পাঠানো হলে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা জানায় মাথায় তিনটা স্প্লিন্টার আছে। সেইসঙ্গে শরীরে ১৮শ’ স্প্লিন্টার রয়েছে।’
মাহবুবা আরও বলেন, স্প্লিন্টারের ক্ষতগুলো কষ্ট দিলেও ভুলে থাকতে পারি দেশনেত্রীর শেখ হাসিনার ভালোবাসা পেয়ে। শেখ হাসিনার ভালোবাসা চেয়েছিলাম, তা পেয়েছি। পূরণও হয়েছে।
তবে এই নেত্রী আক্ষেপ করে বলেন, দেশনেত্রীর ভালোবাসা পেলেও স্থানীয় নেতাকর্মীদের কাছে অবমূল্যায়ন হয়েছি বারবার। আমার বেশিরভাগ সময় অসুস্থতার মধ্য দিয়ে দিন কাটাই আমি চলাফেরা করতো খুব সমস্যা হয়। ব্যক্তিগত একটা গাড়ি থাকলে আমার খুব সুবিধা হত। কিন্তু আমি কোথা থেকেও এমন সহযোগিতা পাচ্ছি না। আমার চলাচলের জন্য একটি ব্যক্তিগত গাড়ির প্রয়োজন।