এক বিজ্ঞপ্তিতে রওশন এরশাদকে জাতীয় পার্টির নতুন চেয়ারম্যান হিসেবে উল্লেখ করায় দলের দুর্গ হিসেবে পরিচিত রংপুরে সব স্তরের নেতাকর্মীদের মাঝে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। দলের গঠনতন্ত্র ভঙ্গ করে এ ধরনের সিদ্ধান্ত বা ঘোষণা দেওয়ার এখতিয়ার রওশন এরশাদের নেই বলে জানিয়েছেন তারা।
বিভিন্ন গণমাধ্যমে এ ধরনের খবর প্রচারিত হওয়ায় রংপুরের প্রত্যন্ত অঞ্চলে রওশন এরশাদের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ মিছিল করেছে তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা।
এদিকে রংপুরসহ পুরো বিভাগে সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের স্ত্রী রওশন এরশাদের পক্ষে একজন নেতাকর্মীও রওশন নেই বলে দাবি করেছেন নেতৃবৃন্দ এবং তৃণমূল পর্যায়ের নেতা কর্মীরা।
জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য রংপুর মহানগর জাতীয় পার্টির সভাপতি ও সিটি মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা বলেন, ‘রওশন এরশাদ জাতীয় পার্টির প্রধান পৃষ্ঠপোষক- তার দলের চেয়ারম্যান হওয়ার কোনও সুযোগ নেই। আর দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী নিজে নিজেকে চেয়ারম্যান ঘোষণা করার আইনি কোনও ভিত্তি নেই। আর এটা তামাশা ছাড়া আর কিছুই নয়। আমাদের দলের বৈধ চেয়ারম্যান জি এম কাদের, মহাসচিব চুন্নু সাহেব- তারা দলের নেতাকর্মীর মাধ্যমে নির্বাচিত।’
তিনি বলেন, ‘রওশন এরশাদ অসুস্থ মানুষ হুইল চেয়ারে চলাফেরা করেন। তার আশেপাশে কিছু অসৎ ব্যক্তি আছেন যারা তাকে ব্যবহার করে দলের ক্ষতি করতে চান- এতে কোনও লাভ হবে না। যে নারী চলাফেরা করতেই পারে না তাকে দলের চেয়ারম্যান ঘোষণা করে লাভ হবে না। রংপুরসহ পুরো বিভাগের দলের নেতাকর্মীরা জি এম কাদের আর চুন্নু সাহেবের নেতৃত্বের প্রতি পুরোপুরি আস্থাশীল আছি এবং থাকবো। এরপরও জাতীয় পার্টির বিরুদ্ধে যেকোনও ষড়যন্ত্র প্রতিহত করতে আমরা প্রস্তুত।
এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘কাউন্সিলের মধ্য দিয়ে গঠন করা কমিটি কেউ বাতিল করার এখতিয়ার রাখে না। মুখে বলে দিলেই দলের চেয়ারম্যান হওয়া যায় না। রংপুর জাতীয় পার্টির দুর্গ আছে থাকবে। এখানে রওশন এরশাদের পক্ষে কোনও নেতাকর্মী সমর্থক নেই। তাকে যারা ব্যবহার করছেন তারা দলের উচ্ছিষ্ট। দলের নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের কাছে তাদের ন্যূনতম গ্রহণযোগ্যতা নেই।’
জাতীয় পার্টির রংপুর মহানগরীর সাধারণ সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম ইয়াসির তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে এ প্রতিনিধিকে জানিয়েছেন রওশন পার্টি ধ্বংসের চক্রান্ত করছেন। এর আগেও এরশাদ জীবিত থাকা অবস্থায় আওয়ামী লীগের সঙ্গে আঁতাত করে এরশাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিলেন। জাতীয় নির্বাচন এলেই তিনি নতুন নতুন খেলা আর ষড়যন্ত্র করেন। এবারেও নির্বাচনের আগে আবারও নতুন করে ষড়যন্ত্র শুরু করেছেন। তবে এবার কোনও ষড়যন্ত্র করে কোনও লাভ হবে না।’
তিনি বলেন, ‘জাতীয় পার্টির কোনও নেতাকর্মী সমর্থক এবার তার সঙ্গে নেই। জাতীয় পার্টির সব নেতাকর্মী দলের চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের পক্ষে ঐক্যবদ্ধ আছে এবং থাকবে। রংপুর জাতীয় পার্টির দুর্গ আছে এবং আগামী নির্বাচনেও থাকবে। রওশন এরশাদের এ ধরনের তামাশা আর দলের নেতাকর্মীরা বরদাশত করবে না।’
রংপুর জেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেন, ‘রওশন এরশাদের এ নাটক আর দেখতে চায় না রংপুর অঞ্চলের এরশাদ প্রিয় মানুষ। আমরা মরহুম এরশাদের হাতে গড়া জাতীয় পার্টির সৈনিক। তিনি মারা যাওয়ার অনেক আগেই তার উত্তরসূরি হিসেবে জি এম কাদেরকে দলের চেয়ারম্যান হিসেবে ঘোষণা দিয়ে গেছেন। সম্মেলন ও কাউন্সিলের মাধ্যমে তাকে দলের চেয়ারম্যান ঘোষণা করা হয়েছে। তিনি সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে দলের দায়িত্ব পালন করছেন।’
তিনি বলেন, ‘বর্তমানে চলমান নানান সমস্যা চলছে দেশে জি এম কাদের দলকে আরও শক্তিশালী করেছেন এবং তার নেতৃত্বেই জাতীয় পার্টি চলবে। রওশন এরশাদের কথায় নয়।’
এদিকে জাতীয় পার্টির তৃণমূল পর্যায়ের কয়েকজন নেতা নাম না প্রকাশের শর্তে এ প্রতিনিধিকে জানিয়েছেন, রওশন এরশাদ সবসময় আলোচনায় থাকতে চান। তার পক্ষে একজন কর্মীও রংপুরসহ পুরো বিভাগে নেই। তিনি নিজে নিজে চেয়ারম্যান ঘোষণা করায় কোনও লাভ হবে না। ফলাফল ডাবল জিরো।