চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) প্রধান প্রকৌশলী ও প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তাকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রাজু মুন্সির বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় সোমবার বিচার চেয়ে উপাচার্য ও রেজিস্ট্রারের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ভারপ্রাপ্ত প্রধান প্রকৌশলী মো. জাহাঙ্গীর ফজল ও নিরাপত্তা কর্মকর্তা শেখ মো. আবদুর রাজ্জাক।
এদিকে চাঁদা না দেওয়ায় মারধর করা হয়েছে বলে দাবি করেছেন নিরাপত্তা কর্মকর্তা। এর প্রতিবাদে প্রায় চার ঘণ্টা বিশ্ববিদ্যালয়ে পানি ও বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ ছিল।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, সোমবার কাটা পাহাড় রাস্তা দিয়ে আসার সময় মারধরের শিকার ও লাঞ্ছিত হন বলে অভিযোগ করেন প্রধান প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর ফজল (ভারপ্রাপ্ত)। অন্যদিকে প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা আবদুর রাজ্জাকের কাছে সোমবার সকালে রাজু মুন্সি ১০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করেন। পরে প্রশাসনিক ভবনের সামনে তাকে ধাক্কা দেন ছাত্রলীগের এ নেতা। এ ঘটনার বিচার চেয়ে উপাচার্য ও রেজিস্ট্রারের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।
প্রধান প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর ফজল বলেন, ‘রাজু মুন্সি ও তার সঙ্গীরা চাঁদাবাজির সঙ্গে জড়িত। তারা প্রায়ই ক্যাম্পাসে লুটপাট ও ঠিকাদারকে কাজে বাধা দেন। এসব বিষয় আগেও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। আজ আমি কাটা পাহাড় এলাকায় সাইট পরিদর্শনে গেলে রাজু মুন্সি আমার দিকে ধেয়ে আসেন। আমাকে কিল-ঘুষি মারেন। পরে রেজিস্ট্রার অফিসের সামনেও আমাকে মারতে এগিয়ে আসেন ও ধাক্কা দেন। এছাড়াও নিয়মিত অফিসে এসে তিনি ঝামেলা করেন। আমি রেজিষ্ট্রারের কাছে অভিযোগ দিয়েছি ও মামলার কথা বলেছি।’
চবির প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবদুর রাজ্জাক বলেন,‘আজ সকাল সাড়ে নয়টার দিকে রাজু মুন্সি আমাদের এক প্রহরীকে বলেন, তার জন্য ১০ হাজার টাকা রেডি করে রাখতে। আধঘণ্টা পরে আমি অফিসের নিচে নামলে সেখানে রাজু মুন্সি আমার সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেন ও ধাক্কা দেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘কিছুক্ষণ পরে রেজিস্ট্রার অফিসে গিয়ে দেখতে পাই, তিনি প্রধান প্রকৌশলীকেও মারছেন। এ ঘটনার পর রেজিস্ট্রার অফিসের নিচে নামতেই তিনি আমাকে আরেক দফা লাঞ্ছিত করেন।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে রাজু মুন্সি বলেন, ‘ওই দুই কর্মকর্তা বিভিন্ন অনিয়মের সঙ্গে জড়িত। আমি এর প্রতিবাদ জানিয়েছি। আমার প্রতিবাদের ভাষা হলো মারধর করা। অভিযোগ দিলে সমস্যা নেই। পুলিশে ধরে নিয়ে গেলে শেখ হাসিনা আমাকে ছাড়িয়ে আনবেন। আমি শেখ হাসিনার রিজার্ভ ফোর্স। আগামী নির্বাচনে শেখ হাসিনার আমাকে প্রয়োজন।’
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের একটি সূত্র জানায়, রাজু মুন্সি কর্মচারী পদে তার পছন্দের ৪-৫ জনকে নিয়োগ দিতে প্রশাসনকে চাপ দিয়ে আসছেন। এ নিয়োগ না দেওয়ায় প্রকৌশলীকে মারধর করেছেন। আজ দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরকেও নিয়োগের বিষয়টি রাজু মুন্সি জানিয়েছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. নুরুল আজিম সিকদার বলেন,‘এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন দুই কর্মকর্তা। আমরা মামলা করব।’
ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার কে এম নূর আহমদ জানান, এ বিষয়ে মামলার প্রস্তুতি চলছে।
এদিকে ঘটনার প্রতিবাদে আজ প্রায় চার ঘণ্টা বিশ্ববিদ্যালয়ে পানি ও বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ ছিল। পরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের আশ্বাসে দুপুর আড়াইটা থেকে গ্যাস, পানি ও বিদ্যুৎ সরবরাহ চালু করা হয়।