• সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০১:২৯ অপরাহ্ন

মেহেরপুরে আলুর সংকট, কিনতে হচ্ছে বাড়তি দামে

নিউজ ডেস্ক
আপডেটঃ : বুধবার, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২৩

মেহেরপুরে-আলুর-সংকট-কিনতে-হচ্ছে-বাড়তি-দামেমেহেরপুরের গাংনী উপজেলার হাট-বাজারগুলোতে দেখা দিয়েছে আলুর সংকট। ছবি: নিউজবাংলা

গাংনী বাজারের সবজি আড়তদার সাইদুল ইসলাম জানান, সরকার আলুসহ বেশ কয়েকটি জিনিসের মূল্য নির্ধারণ করে দেয়ায় হিমাগার থেকে আলু সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। সরকারের নির্ধারিত দর মানতে নারাজ তারা। পাইকাররাও বেশি দরে আলু কিনতে নারাজ। ফলে বাজারে আলুর সংকট দেখা দিয়েছে।

সরকার দাম নির্ধারণ করে দেয়ার পর মেহেরপুরের বাজারে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি হয়েছে আলুর।

হিমাগার থেকে আলু না আসায় জেলার গাংনী উপজেলার হাট-বাজারগুলোতে দেখা দিয়েছে পণ্যটির সংকট। ভিন্নপথে আসা আলু খুচরা কিনতে ক্রেতাদের গুনতে হচ্ছে বাড়তি টাকা।

সরকার নির্ধারিত মূল্যে হিমাগার থেকে আলু বিক্রি না করায় মেহেরপুরের পাইকারি ব্যবসায়ীরা আলু বিক্রি করছেন না বাজারে। এর বিরূপ প্রভাব দেখা যাচ্ছে খুচরা বাজারে।

গাংনী উপজেলার দুটি কাঁচাবাজারের মাধ্যমে এ অঞ্চলের বিভিন্ন হাট-বাজারে আলু সরবরাহ করা হয়ে থাকে। এখানকার আড়তদারা উত্তরবঙ্গের কয়েকটি জেলার হিমাগার থেকে আলু সংগ্রহ করে এনে জেলার আলুর চাহিদা পূরণ করে থাকেন।

আলু, পেঁয়াজ ও ডিমের পাইকারি এবং খুচরা দাম ১৪ সেপ্টেম্বর নির্ধারণ করে দেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। স্থানীয় বাজারে নির্ধারিত দরে এসব কৃষি পণ্য বিক্রি করতে নির্দেশনা দেন কৃষি বিপণন অধিদপ্তর ও ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা।

তবে হিমাগারগুলো সরকার নির্ধারিত আলুর দাম মানছেন না। তাই জেলার পাইকারি ব্যবসায়ীরা হিমাগার থেকে আলু আনা বন্ধ করে দিয়েছেন।

গাংনী বাজারের সবজি আড়তদার সাইদুল ইসলাম জানান, সরকার আলুসহ বেশ কয়েকটি জিনিসের মূল্য নির্ধারণ করে দেয়ায় হিমাগার থেকে আলু সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। সরকারের নির্ধারিত দর মানতে নারাজ তারা। পাইকাররাও বেশি দরে আলু কিনতে নারাজ। ফলে বাজারে আলুর সংকট দেখা দিয়েছে। কিছু কিছু আড়তদার বিকল্প পথে আলু আমদানি করে আনায় তাদের কাছেও দাম বেশি পড়ছে আলুর।

তিনি বলেন, ‘সরকার বাজার নির্ধারণ করার আগেও একই দরে আমাদের আলু কিনতে হতো। বর্তমানে কোল্ড স্টোরেজ (হিমাগার) থেকে আলু কিনে পরিবহন ও শ্রমিক খরচ দিয়ে কেজিতে মাত্র ৩০ পয়সা মুনাফা থাকছে। তাই আড়তদাররা কেউ আলু কিনতে চাচ্ছেন না।’

সোমবার বামন্দী ও মঙ্গলবার গাংনী হাটে গিয়ে দেখা যায়, দোকানদার ও ব্যবসায়ীদের চটে আলু সংকট। দুই-একজনের কাছে আলু পাওয়া গেলেও তার দাম চড়া। বাজারে আলুর কেজি ৫৫ থেকে ৬০ টাকা।

আলু সংকটের কারণেই এ দাম বেড়েছে। ক্রেতারাও প্রয়োজনের তাগিদে বাড়তি দরে কিনছেন আলু।

মেহেরপুরে আলুর সংকট, কিনতে হচ্ছে বাড়তি দামে
অল্প করে বিকল্প পথে বাজারে আলু এনে বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা। ছবি: নিউজবাংলা
এ বিষয়ে বাজারের কয়েকজন আলু ব্যবসায়ী জানান, বাজারে ভ্রাম্যমাণ আদালত হতে পারে দেখে আলু নিয়ে বসছেন না তারা। চড়া দামে বিকল্প পথে আলু কিনে কম দামে বেচারও সুযোগ নেই। এতে লোকসান গুনতে হবে তাদের। তাই আলু বেচাকেনা বন্ধ আছে।

হেমায়েতপুরের আলু ব্যবসায়ী মনিরুল জানান, আলু সরবরাহ না থাকায় বাজারে পড়েছে বিরূপ প্রভাব। বিশেষ ব্যবস্থায় গোপনে আসা আলুও বিক্রি হচ্ছে বাড়তি দামে। অন্যদিকে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের অনেকে যারা সরকারি দরে আলু বিক্রির আশায় রয়েছেন, তারা আলু না পেয়ে পড়েছেন চরম বিপাকে।

একই কথা জানিয়েছেন বামন্দী বাজারের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ইন্তাজুল ও রহিম উদ্দীন।

পাইকারি বাজারের জন্যে আলু কিনতে আসা কয়েকজন ব্যবসায়ী জানান, গ্রামের হাট-বাজারগুলোতে চট পেতে যারা আলু ও সবজি বিক্রি করেন, তাদের দুর্দশার সীমা নেই। সবজির মধ্যে আলু সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয়ে থাকে। বর্তমানে আলু না পাওয়ায় অন্যান্য সবজি বিক্রিতেও ভাটা পড়েছে।

বাজারে করেকজন ক্রেতার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আড়তগুলো আলু উত্তোলন না করলেও বিকল্প পথে কিছু আলু আসছে খুচরা বাজারে। বাজারে আলুর সংকট থাকায় এ আলু বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা কেজিতে। ফলে সাধারণ মানুষের মাঝে ব্যাপক ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে।

জেলার ঐতিহ্যবাহী বামন্দী বাজারের আলু ব‍্যবসায়ী হারুন বলেন, ‘আমরা ৬৫ কেজি ওজনের এক বস্তা আলু আড়ত থেকে কিনে আনছি ৪১ টাকা করে। প্রতি বস্তায় তিন থেকে চার কেজি কাটা ও নষ্ট আলু বের হয়। আবার তার মধ‍্যে একেবারে আকারে ছোট বের হয় ১০ কেজি।

‘সব মিলিয়ে বাদ দিলে গড়ে প্রতি কেজি আলুর দাম ৪৬ টাকা করে পড়ে। তাহলে তো নিজেদের ব্যবসার লাভ দেখতে হলে ৫০ টাকার ঊর্ধ্বে আলু কেজি দরে বিক্রি করতে হবে। তার ওপর আড়তদার বলছেন আলুর সংকট। আমরা যারা ব্যবসা করি, আমরা তাহলে কই যাব?’

মেহেরপুর জেলা কৃষি বিপণন কর্মকর্তা আবদুর রাজ্জাক বলেন, ‘সরকার নির্ধারিত ৩৫ থেক ৩৬ টাকা দরেই আলু বিক্রি করতে হবে। ব্যবসায়ীরা যে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করছে, তা অচিরেই দূর হবে।’

ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর মেহেরপুরের কর্মকর্তা সজল আহমেদ বলেন, ‘ভোক্তা অধিকারের পক্ষ থেকে এ অঞ্চলে সর্বদা বাজার তদারকি চলমান। স্থানীয় আড়ত ও বাজারগুলোতে ক্রয়-বিক্রয়ের তারতম‍্য পরিলক্ষিত হলে আমরা সেই সকল ব‍্যবসায়ীর বিরুদ্ধে প্রচলিত আইনি ব‍্যবস্থা গ্রহণ করছি এবং তা অব‍্যাহত থাকবে।’


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ