ভারত সীমান্তঘেষা জামালপুরের বকশীগঞ্জ উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রাম পাখিমারায় গড়ে উঠেছে ঐতিহ্যবাহী জামদানি পল্লী। এই উপজেলায় তাঁত শিল্পের সঙ্গে প্রায় আট হাজার মানুষ জড়িত রয়েছেন। বছরজুড়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন এখানকার জামদানি পল্লীর কারিগররা। এই গ্রামের উৎপাদিত জামদানি দেশের বিভিন্ন বিপনী-বিতানে শোভা পাচ্ছে। বর্তমানে জামদানি তৈরির সুখ্যাতি ছড়িয়ে পরেছে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে।
কারিগররা বলছেন, বাজারে কাঁচামালের মূল্যবৃদ্ধির কারণে শাড়ির ন্যায্য দাম হারাতে হচ্ছে। অন্যদিকে মূলধন না থাকায় প্রতিযোগিতার বাজারে টিকে থাকার শঙ্কায় পরতে হচ্ছে তাদের। তবে এখানকার উৎপাদিত পণ্য সহজেই বিদেশে রপ্তানির সুযোগ পেলে এই শিল্পকে আরও সম্প্রসার করা যেতে পারে। এতে করে দেশের রাজস্ব আয়ও বৃদ্ধি পাবে।
সরেজমিনে দেখা যায়, বকশিগঞ্জের প্রত্যন্ত গ্রাম পাখিমারার প্রতিটি ঘরে তাঁতের খটখট শব্দে মুখরিত জামদানী পল্লী। শুরুটা ২০০৫ সালে। সবুজ হাসান নামের এক উদ্যোক্তা একটি তাতঁ দিয়ে জামদানি বুননের কাজ শুরু করে। বর্তমানে এখানে ছোটবড় মিলিয়ে পঞ্চাশের অধিক কারখানা গড়ে উঠেছে। এখন স্বল্প মজুরি আর দক্ষ শ্রমিক নিয়ে বছরজুড়ে চলছে জামদানি তৈরির কাজ। এখানকার উৎপাদিত জামদানি শাড়ি শোভা পাচ্ছে রাজধানী ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, চট্টগ্রাম, সিলেট, বরিশালসহ দেশের বড়-বড় বিপনী-বিতানগুলোতে। সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে এখানকার জামদানির চাহিদাও বেড়েছে অনেক গুণ। সেই সঙ্গে বেকারত্ব কমে কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়েছে।
ক্রেতারা বলছেন, এখনকার জামদানির মান তুলনামূলক ভালো ও আকর্ষণীয় হওয়ায় প্রতিনিয়তই দূর-দুরান্ত থেকে মানুষ দেখতে আসছেন। মূলত জামদানি কাপড় সব বয়সের নারীদের পছন্দের তালিকায় প্রথমে রয়েছে। সে কারণে এর কদর অনেক বেশি।
উদ্যোক্তা সবুজ হাসান বলেন, জামদানি তৈরির সুতা থেকে শুরু করে সবরকম কাঁচামালের দাম বেড়ে যাওয়ায় উৎপাদন খরচ বেড়ে গেছে, কিন্তু জামদানির দাম না বাড়ায় ন্যায্য মূল্য পাওয়া যাচ্ছে না। অন্যদিকে তৈরি কাপড় সকল বিপনী-বিতানগুলোতে বিক্রি হচ্ছে চড়ামূল্যে।
মো. মোর্শেদ আলী নামে আরেক উদ্যোক্তা বলেন, দেশের বাজারে জামদানির ব্যাপক চাহিদা থাকলেও অর্থের অভাবে তাঁত বাড়াতে পারছি না। ফলে উৎপাদন কম হচ্ছে। আমাদের সহজ শর্তে সরকারি ঋণ সহায়তা দিলে তাঁত বৃদ্ধি করা সম্ভব। সেই সঙ্গে উৎপাদন হ্রাস কাটিয়ে উঠতে পারবো, তা না হলে এই শিল্পকে সামনের এগিয়ে নেওয়া কঠিন হবে।
আরেক উদ্যোক্তা সুলতান মিয়া বলেন, জামদানির সুতাসহ অন্যান্য মালামাল কিনে আনতে হয় নারায়ণগঞ্জ থেকে। আবার তৈরি করা জামদানিও বিক্রি করতে হয় নারায়ণগঞ্জ গিয়ে। এতে করে আমাদের সময় যেমন ব্যয় হয়, তেমনি আর্থিকভাবেও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। যদি জামদানি তৈরির কাঁচামালগুলো আশপাশের শহরে পাওয়া যেত, তাহলে আমরা লাভবান হতাম।
জামালপুর জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মুহাম্মদ বাকী বিল্লাহ বলেন, জামদানি শিল্পে যারা জড়িত তাদের দক্ষ করতে উন্নত প্রশিক্ষণের মাধ্যমে মানোন্নয়ন ও উৎপাদিত পণ্যের বাজারজাত করার লক্ষ্যে সরকারি প্রণোদনা দিয়ে আধুনিকায়ন করার ব্যবস্থা গ্রহণ করছি। সেই সঙ্গে উৎপাদিত জামদানি স্থানীয়ভাবে বাজার তৈরি করে সেখানে পণ্য বিক্রির করার পরিকল্পনা আমাদের রয়েছে।